ঝাড়ু পে ঝটকা

 ঝাড়ু পে ঝটকা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে কিছুটা ধাক্কা লেগেছিল বিজেপির পালে।এরপর থেকে এখন পর্যন্ত যতগুলি রাজ্যে বিধানসভা ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে, একের পর এক রাজ্যে জয়ের নিশান উড়িয়ে চলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অশ্বমেধের ঘোড়া। এই ঘোড়া কোথায় গিয়ে থামবে, তা এখনই বলা মুশকিল। সেই ঘোড়া এবার বহু চর্চিত দেশের রাজধানী দিল্লীতে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটিয়ে দিল। শনিবার সকালে নির্ধারিত সময়ে ভোট গণনা শুরু হতেই সবকিছু স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এরপর বেলা যত বেড়েছে এবং গণনা যত এগিয়েছে বিজেপির জয় ততটাই সুনিশ্চিত হয়েছে। বুথ ফেরত যাবতীয় সমীক্ষাকে সত্য প্রমাণ করে দীর্ঘ ২৭ বছর পর দিল্লীতে সরকার গড়ছে ভারতীয় জনতা পার্টি। দিল্লীর আম জনতা এবার ঝাড়ু মেরে ঝাড়ুকে বিদায় করে দিয়েছে। পরাজয়ের তালিকায় খোদ আম আদমি সুপ্রিমো তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তার এই পরাজয়, শুধু নিজের রাজনৈতিক জীবনের ক্ষেত্রেই নয়, দেশে মোদি ও বিজেপিবিরোধী রাজনীতির ক্ষেত্রেও বড় ধাক্কা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।বিশেষ করে ‘ইন্ডি’ জোটের ক্ষেত্রে।এ নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।
২০১২ সালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্না হাজারের আন্দোলন থেকে উঠে আসা প্রাক্তন ইনকাম ট্যাক্স আধিকারিক অরবিন্দ কেজরিওয়াল নিজেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। একদা তার যে ক্লিন ইমেজ ছিল, তা এই নির্বাচনে ধাক্কা খেয়েছে? আবগারি নীতি কেলেঙ্কারি, আবাসন কেলেঙ্কারি, শীষমহল পর্ব এবং জেলে যাওয়ার পরও পদত্যাগ না করার বিষয়ে অটল থাকায়, তার সৎ ভাবমূর্তি যথেষ্ট প্রভাবিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অপরদিকে, রাজনীতিতে ‘শূন্য’ পাওয়া দলেরও যে গুরুত্ব আছে, তা আবারও দিল্লীর বিধানসভা নির্বাচনে প্রমাণ করে দিল কংগ্রেস দল। ৭০ আসনের দিল্লী বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস শূন্য পেয়ে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেলেও, বিজেপির জয়ের পথকে মসৃণ করে দিয়েছে কংগ্রেস। বিশেষ করে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাতে এবার মুসলিম ভোট চার ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ায় লাভবান হয়েছে বিজেপি। কংগ্রেস জিততে না পারলেও পরাজিত করতে পেরেছে আম আদমি পার্টিকে। তাছাড়া এবার দিল্লী ভোটে এআইএমআইএম-এর ওয়াইসির প্রবেশও মুসলিম এলাকায় আপের ফলাফলকে প্রভাবিত করেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, দিল্লীর যে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় ও পূর্বাঞ্চলীয় ভোটাররা এতদিন কেজরিওয়ালকে দু’হাতে ঢেলে ভোট দিয়ে এসেছে। এরাই এবার চলে গিয়েছে পদ্মশিবিরে। শুধু তাই নয়, দিল্লীর কলোনির বাসিন্দাদের ভোটেও বড় ভাগ বসিয়েছে বিজেপি। এই ভোট এতদিন আপের ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, দিল্লী ভোটের চারদিন আগে কেন্দ্রীয় বাজেটে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়করে ছাড় দিয়ে মধ্যবিত্তের মন জয় করে নিয়েছে মোদি সরকার। তারই প্রভাব পড়েছে দিল্লী ভোটে। এইসব বিষয়গুলি বিজেপির দিল্লী জয়ের অন্যতম কারণ হতে পারে, এটা যেমন ঠিক। তেমনি বিজেপির সংকল্পও অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই সংকল্প হচ্ছে বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি। দিল্লীকে পাখির চোখ করে বিজেপি বহু আগে থেকেই দিল্লী দখলের রণকৌশল তৈরি করে মাঠে নেমে পড়েছিল। খবরে প্রকাশ, প্রতিটি কেন্দ্র ধরে ধরে, সেখানকার স্থানীয় সমস্যাগুলি কি কি? বড় সমস্যাগুলি কি? মানুষ কি চাইছে? এইসব অনেক আগে থেকেই সার্ভে করে কাজ শুরু করেছিল পদ্মশিবির। ৭০টি আসনের মধ্যে পদ্মশিবির ৫১টি আসনের তালিকা তৈরি করে, প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য একজন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দায়িত্ব দেয় পদ্মশিবির। তার মধ্যে অন্তত ৪০টি আসন জয়ের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে বিজেপি। ফলাফল সামনে। দীর্ঘ ২৭ বছর পর দিল্লী বিধানসভায় ক্ষমতায় এলো বিজেপি। অন্যদিকে, দিল্লীর নির্বাচন কংগ্রেসকে আবারও গভীর হতাশার দিকে ঠেলে দিয়েছে। খাতা খোলা তো দূরের কথা, টক্করও দিতে পারেনি কোনও কেন্দ্রে। কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের হার মাত্র ৬ শতাংশ। দিল্লীর ফলাফল, দেশে বিজেপিকে আরও শক্তিশালী করলো। আর উল্টোদিকে আরও দুর্বল হলো বিরোধী শক্তি। এটাই বাস্তব। এরপর বিহার বিধানসভার নির্বাচন হবে। ফলাফল কি হবে? তা এখনই বলে দেওয়া যায়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.