ঝুঁকিতে দক্ষিণ এশিয়া
বিশ্বের জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশের বসবাস যে অঞ্চলে , সেই দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় শিশুদের অপুষ্টি , খাদ্যাভাব এবং দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা আগামী একটি প্রজন্মের সমস্ত আশা ও ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে দিতে চলেছে । জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়ার সম্প্রতি এক রিপোর্ট পেশ করেছেন । ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কার শিশুরা ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাতে ঘুমোতে যায়। রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সব দেশগুলোতেও একই ধরনের সঙ্কট বড় মাত্রায় দেখা দিতে পারে ।
ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক জর্জ লারিয়া আদজেই শুক্রবার এই রিপোর্টটি প্রকাশ করেছেন । রিপোর্ট প্রকাশ করে তিনি জানান , শ্রীলঙ্কায় ক্ষুধার্ত শিশুদের অবস্থা সত্যিই মর্মপীড়াদায়ক । পরিস্থিতি এতটাই অসহনীয় , রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহ করতে অসাধ্য হয়ে পড়ায় পরিবারগুলো নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করতে পারছে না । আরও ভয়ানক ঘটনা হল , শিশুরা ক্ষুধার্ত অবস্থায় বিছানায় যায় । কিন্তু পরদিন ঘুম থেকে উঠে তারা কী খাদ্য গ্রহণ করবে সেটাও অনিশ্চিত পরিবারের কাছে । আসলে দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে এই তীব্র আর্থিক সঙ্কট হঠাৎ একবারে আসেনি । বলা হচ্ছে অতিমারির আগে থেকেও দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শিশুদের অবস্থা মোটেই ভালো ছিল না ।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই সামাজিক সুরক্ষা প্রদানের বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকে , যা দরিদ্র শিশু ও নারীদের আগলে রাখে । কিন্তু কোভিডজনিত কারণে পরিস্থিতি সত্যিই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় । অতিমারির সময়ে স্কুল বন্ধ থাকে । কিন্তু শিশুদের জন্য রাষ্ট্রের তরফে পুষ্টিকর খাদ্য প্রদানের কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি । অতিমারির কারণে গ্রামীণ , প্রত্যন্ত ও আদিবাসী এলাকায় সঠিক খাদ্য মুখে তুলতে পারেনি শিশুরা । এই সঙ্কটের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মন্দার ব্যাপক প্রভাব পড়ে । গুরুতর আর্থিক মন্দার সঙ্গে খাদ্য , জ্বালানি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহও অনেকটা দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায় । এর মধ্যেই ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন পরিস্থিতিকে আরও বেকাবু করে তোলে ।
এই তীব্র অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং মুদ্রাস্ফীতির জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা সহ বেশ কিছু দেশের অর্থনীতি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে । এপ্রিল মাসে দেখা যায় শ্রীলঙ্কা নিজেকে একান্ন বিলিয়ন বিদেশি ঋণ খেলাপি হিসাবে ঘোষণা দেয় । এই আর্থিক অনিশ্চয়তা , মুদ্রাস্ফীতি শিশুদের হিসাবে ঘোষণা দেয় । এই আর্থিক অনিশ্চয়তা , মুদ্রাস্ফীতি শিশুদের জীবনকে আরও হুমকির মুখে ফেলে দেয় । একটা বিষয় এখানে খুব প্রাসঙ্গিক যে , ২০২৩ সালের মধ্যে ক্ষুধাহীন পৃথিবী নির্মাণের জন্য জাতিসংঘ যখন সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে তখনই দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় শিশুদের অপুষ্টির এই ভয়ানক চিত্র জিরো হাঙ্গার পৃথিবীর স্বপ্ন দেখা মরীচিকার সমান তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।
শুধু একা শ্রীলঙ্কা নয় , জাতিসংঘ তার রিপোর্টে শিশুদের অপুষ্টি এবং ক্ষুধা নিয়ে রাতে বিছানায় যেতে বাধ্য হওয়া দক্ষিণ এশিয়ার যে ভয়াবহ চিত্র এঁকে দিয়েছে তা গোটা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির জন্যই সতর্কবার্তা । কারণ শ্রীলঙ্কার পরই চিন ভারত সীমান্তের ছোট দেশ ভুটানের পকেটেও টান পড়েছে । আট লাখের জনসংখ্যার দেশের অর্থনীতি যেখানে দাঁড়িয়ে থাকে পর্যটনের উপর , সেই ভূটান আজ পর্যটক শূন্য । আরও একাধিক দেশেরই টলমল অর্থনীতি । তাই শ্রীলঙ্কার কথা মাথায় রেখে সতর্ক হতে হবে সবাইকেই ।