টানা হার, তলানিতে ভোট ব্যাঙ্ক রিপোর্ট চাইল ক্ষুব্ধ পলিটব্যুরো।
অনলাইন প্রতিনিধি :- বিধানসভা ভোটের পর উপনির্বাচনেও ভরাডুবির জেরে সিপিএম পলিটব্যুরোর তোপের মুখে পড়ল সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব। কারণ একটাই— ত্রিপুরায় সিপিএমের নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্কের অস্তিত্ব সংকটের মুখে। উপজাতি ভোট ব্যাঙ্ক পর্যন্ত নিম্নমুখী। ২০১৮ সালের ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হবার পর রাজ্য নেতৃত্বের তরফে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও চেষ্টাই হচ্ছে না। যুব নেতৃত্ব পর্যন্ত ঘরে বসে গিয়েছে। উপজাতি আসনগুলি পুনরুদ্ধার পর্যন্ত অধরা। ফলে ২৫ বছর একটানা ক্ষমতায় থাকায় সিপিএমের আজ করুণ অবস্থা ত্রিপুরায়। নির্বাচনে পোলিং এবং কাউন্টিং এজেন্ট পর্যন্ত ত্রিপুরায় দিতে সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব ব্যর্থ। কেন ত্রিপুরায় দলের এই করুণ পরিণতি এ নিয়ে পলিটব্যুরোর প্রশ্নের উত্তর রাজ্য নেতাদের কাছে নেই। তাই ক্ষুব্ধ সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবিলম্বে ভোট পর্যালোচনার রিপোর্ট তলব করেছে পলিটব্যুরো।সিপিএম কেন্দ্রীয় ও রাজ্য কমিটি সূত্রে খবর, সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে কেন রাজ্য নেতৃত্ব সর্বক্ষেত্রে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছে। এমনকী সিপিএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন চৌধুরীকে কেন একাংশ নেতৃত্ব গুরুত্ব দিচ্ছে না।এ বিষয়েও সঠিক স্পষ্টীকরণও চাইল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। শুধু তাই নয়, কেন উপজাতি ভোট ব্যাঙ্ক পুনরুদ্ধারে কোনও সঠিক পদক্ষেপ নেই। উল্টো কেন উপভোট-বিধানসভা ভোট সহ সর্বক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে তিপ্রা মথা নিয়ে রাজ্য নেতৃত্ব ব্যস্ত। আর পরিণতিতে নির্বাচনে পরাজিত হচ্ছে সিপিএম। এই বিষয়টিও জানতে চাইল পলিটব্যুরো। কারণ তিপ্রা মথা ও কংগ্রেস দলের সাথে মাখামাখি নিয়ে প্রত্যেকবার রাজ্য থেকে ভুল বার্তা সিপিএম পলিটব্যুরোতে যাচ্ছে। আর ফলাফলে দেখা যাচ্ছে আসনসংখ্যা তলানিতে নামছে।২০১৮ সালে রাজ্যে সিপিএমের বিধায়ক ছিল ১৬ জন এবং ২০২৩ সালে বিধায়ক সংখ্যা কমে দাড়াল ১১তে। তবে বিধানসভা ভোটের পর উপভোটেও বিধায়কদের কোনও একত্রে কর্মসূচি নেই।এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সিপিএম পলিটব্যুরো।সিপিএম রাজ্য কমিটি সূত্রে খবর, আগামী সপ্তাহে ভোটের ফলাফল নিয়েও পর্যালোচনায় বসছে সিপিএম।রাজ্য কমিটিও বুথভিত্তিক ফলাফল নিয়ে আলোচনা বসতে যাচ্ছে। কারণ ২০১৮ সালের ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হলেও রাজ্যে সিপিএম ভোট পেয়েছিল ৪২.২২ শতাংশ। আর আসন ছিলো ১৬টি। কিন্তু মাত্র ৫ বছরের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া ২০২৩ ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম সাকুল্যে ভোট পেয়েছে মাত্র ২৪.৬২শতাংশ। ২৫ শতাংশও ভোট পায়নি বামেরা। উল্টো এই পাঁচ বছরে গড়ে বামেদের ভোট কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ। অন্যদিকে, বামেদের আসন ১৬ থেকে নেমে ১০ আসনে চলে এসেছে। রাজ্যে ক্ষমতা পুনঃদখল তো দিবাস্বপ্ন। উল্টো ৬০ আসনের বিধানসভায় আসন সংখ্যার নিরিখে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পর্যন্ত চলে গিয়েছে। ২০১৮ সালের পর রাজ্যে যতগুলি নির্বাচন হয়েছে, সবকটিতে বামেদের ভরাডুবি হলো। লোকসভা ভোটে ফলাফলের নিরিখে বামেদের স্থান ছিল তৃতীয়। এমনকী এডিসি নির্বাচনেও বামফ্রন্টের উপর পাহাড়ের মানুষের আস্থা ছিলো না। ফলে ত্রিপুরা স্বশাসিত জেলা পরিষদের নির্বাচনে বামেদের ২৮ আসন কমে দাঁড়ায় শূন্য। পুর ও নগর ভোটেও একই হাল হয় বামেদের। তবে এই প্রত্যেকটি নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে।বাম নেতাদের দাবি ছিলো মানুষ ভোট দিতে পারেনি। মানুষ নিজের ভোট নিজে দিলে ফলাফল বামেদের পক্ষে যাবে। তবে ২০২৩-এর ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটে রাজ্যের মানুষ নিজের ভোট নিজেরা দিলেন। বাম নেতাদেরও কোনও অভিযোগ ছিলো না। কিন্তু ভোটের ফলাফলে দেখা গেলো বামেদের পক্ষে মানুষের সমর্থন উল্টো কমে গিয়েছে। তবে কেন বামেদের এই করুণ পরিণতি হয়েছে। এ দিনের বৈঠকে তা আলোচনা হবে। এমনকী তৃণমূল স্তর থেকে সংগঠনকে নতুন করে তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। প্রয়োজনে একাংশ নেতার ডানা ছাঁটাই করা হবে। জনসংযোগ বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেবে দল। বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে গঠনমূলক ভূমিকা নেবে সিপিএম। কারণ একটাই— সিপিএমের নির্বাচিত বিধায়কদের কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। ধনপুর ও বক্সনগরেও তাই হয়েছে। উল্টো এবারও ভোটলুট ও সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে ভোটের ফলাফল বয়কট করে দিল সিপিএম। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। শুধুমাত্র ঘরে বসে রাজনীতি। এতেও ক্ষুব্ধ সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
উল্লেখ্য, সিপিএম চরম নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে। বিশেষ করে গৌতম দাস ও বিজন ধরের মৃত্যুতে নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ করতে পারেনি দল। এর উপর বাদল চৌধুরীর অসুস্থতা, বাজুবন রিয়াং, বৈদ্যনাথ মজুমদারের মতন নেতাদের শূন্যতা আরও গ্রাস করেছে সিপিএমকে। এরপরে নতুন নেতৃত্ব গত বেশ কয়েক বছরে তুলে আনেনি সিপিএম। বিগত ২৫ বছরে পুরনোদের দিয়েই পার্টি চালিয়েছে সিপিএম। তাপস দত্ত, অমল চক্রবর্তী, নবারুণ দে’র মতন যুব নেতারা কার্যত দলে ব্রাত্যই রয়ে গেছে। মানিক দে, পবিত্র কর, নরেশ জমাতিয়া, সহিদ চৌধুরী, সুধন দাস, তপন চক্রবর্তী, রতন ভৌমিক, নারায়ণ কর, তপন দেববর্মা, অমলেন্দু দেববর্মা, পলাশ ভৌমিকের মতো বহু যুব নেতারা এখনও সক্রিয় রয়েছেন। কিন্তু তাদেরও সঠিকভাবে কাজে লাগাচ্ছে না সিপিএম।