টানা ১৬ ঘন্টা নৌকোর নিচে মহাসমুদ্রে ভেসে প্রাণে বাঁচলেন ক্যাম্পরুরি
একটি ৬২ বছরের ফরাসি নাবিককে স্পেনের অদুরে আটলান্টিক মহাসাগরে তার ডুবে যাওয়া পালতোলা নৌকার নিচ থেকে ১৬ ঘণ্টা পরে উদ্ধার করা হয়েছে । এমনটাই জানিয়েছে স্প্যানিশ কোস্টগার্ড । কোস্টগার্ডের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে , সোমবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ স্পেনের উত্তর – পশ্চিমাঞ্চলীয় গালিসিয়া অঞ্চলের সিসারগাস দ্বীপপুঞ্জ থেকে ১৪ মাইল বা ২২ কিলোমিটার দুরে একটি উল্টানো নৌকাকে প্রথম শনাক্ত করা হয় প্রথমদিকে ভাবা হয়েছিল সামুদ্রিক ঝড়ের প্রভাবে নৌকাটি উল্টে গিয়েছেন এবং নৌকার ভেতরে থাকা যাত্রীর ও হয়তো আর কোন হদিশ মিলবে না।
কিন্তু উপকূল রক্ষা বাহিনীর নিয়ম অনুসারে কোন জাহাজ বা কোন নৌকো বিপদজনক অবস্থায় দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে জানাতে হয় টহলদারি নৌকোকে । সেই সময় আটলান্টিক মহাসাগরের ঢেউয়ের তীব্রতা ছিল ভয়ংকর । ডুবে যাওয়া নৌকোর চারপাশ ঘিরে ফেলে বেশ কয়েকটি উদ্ধারকারী নৌকো । কিন্তু নৌকোর ভিতর প্রাণ থাকতে পারে এমনটি আশায় করেননি তারা । কারণ যেভাবে নৌকো উল্টে ছিল তার ভিতরে একজন মানুষের বেঁচে থাকার অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল নৌ কাবাহিনীর কর্মীদের । তাই দুর থেকে উল্টো নৌকোর গায়ে কয়েকবার আঘাত করতেই উল্টানো নৌকার মধ্যে থাকা ক্যাম্পরুবি চিৎকার করতে থাকেন এবং প্রাণপণে উল্টো নৌকা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে থাকেন । কিন্তু সেই অবস্থায় সাগরের যা পরিস্থিতি ছিল তা থেকে ক্যাম্পরুবিকে বাঁচিয়ে আনা যথেষ্ট দুঃসাধ্য ছিল । আর সেই জন্যই উদ্ধারকারী নৌকোগুলি আবেগবশত হয়ে কোনো হঠকারিতার পদক্ষেপ নেয়নি । বরং উদ্ধারের জন্য এক ধরনের হুল ফেলতে থাকেন । নৌকার হুল এক ধরনের লাঠি বিশেষ। যে লাঠির ডগায় থাকে বায়ুপূর্ণ বয়া । যার অর্থ , বেলনাকৃতি কয়েকটি প্লাস্টিকের ড্রাম । সেই ড্রামকে আশ্রয় করেই ডুবন্ত মানুষ ভেসে থাকতে পারেন । উদ্ধারকারী নৌকো এত কাছে এসেও ক্যাম্পরুবিকে উদ্ধার করতে পারেনি । হুল আর হুলের ডগায় থাকা বয়াকে আশ্রয় করেই প্রায় ১৬ ঘন্টা ভেসেছিলেন তিনি । একটি উদ্ধারকারী জাহাজ এবং তিনটি হেলিকপ্টার দ্রুত পাঠানো হয় এবং অনুসন্ধান দল অন্ধকারে নৌকাটি নিচে টর্চ নিয়ে নেমে অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে থাকেন । দুজন ডুবুরি নৌকার নিচে সাঁতার কাটতে গিয়েই ক্যাম্পরুবিকে দেখেন । মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে ক্যাম্পরুবি একটি নিওপ্রিন সারভাইভাল স্যুট পরেছিলেন । ডুবুরিরা ক্যাম্পরুবিকে উদ্ধার করতে একটি খুঁটি এগিয়ে দেন । আর সেটা ধরেই উল্টানো নৌকো থেকে বেরিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন ক্যাম্পরুবি ।