টিআরপিসিতে দুর্নীতি বদলি এক অফিসার!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-গত দেড় বছর আগে কুমারঘাটস্থিত ত্রিপুরা রিহ্যাবিলিটেশন প্ল্যানটেশন কর্পোরেশনের (টিআরপিসি) উত্তর জোন অফিসের ৭০ লক্ষ ৭৪ হাজার ০৬০ টাকা হাপিস করে দেওয়ার ঘটনার কোনও কিনারা এখনও হয়নি।সে সময় কুমারঘাটস্থিত টিআরপিসির উত্তর জোনের ডেপুটি ম্যানেজার কাম ডিডিও ছিলেন রাজকুমার ত্রিপুরা (আর কে ত্রিপুরা)। উত্তর জোনের ক্যাশিয়ার কাম ফিল্ড ওয়ার্কার বিশ্বজিৎ রিয়াং গ্রামীণ ব্যাঙ্কের চেকে ডেপুটি ম্যানেজার কাম ডিডিওর স্বাক্ষর নকল করে রহস্যজনকভাবে এই বিপুল টাকা গ্রামীণ ব্যাঙ্কের চারটি শাখা থেকে তুলে নিয়ে হাপিস করে দেয় বলে অভিযোগ। যদিও টিআরপিসির সরকারী টাকা হাপিসের ঘটনায় ডেপুটি ম্যানেজার কাম ডিডিও আর কে ত্রিপুরার ভূমিকা নিয়ে কর্পোরেশনের মধ্যে গভীর সন্দেহ দেখা দিয়েছিল।২০২১ সালের ৩০ জুলাই থেকে টিআরপিসির গ্রামীণ ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে শেষবার ২০২২ সালের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ২৩টি চেকে ২৩বার টাকা তুলে নিলেও ডেপুটি ম্যানেজার কাম ডিডিও আর কে ত্রিপুরা রহস্যজনকভাবে দায়িত্ব পালন করায় টাকা হাপিস করা নিয়ে তার দিকেও আঙুল উঠেছিল।টাকা হাপিসের ঘটনায় কুমারঘাট থানায় মামলাও হয়। ক্যাশিয়ারকেও চাকরিতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। প্রায় এক বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের চেকে তার স্বাক্ষর নকল করে ক্যাশিয়ার ২৩টি চেকে ২৩বার মোট ৭০ লক্ষ ৭৪ হাজার ০৬০ টাকা হাপিস কি করে করা সম্ভব তা নিয়ে আর কে ত্রিপুরার ভূমিকা সন্দেহজনক হওয়ায় টিআরপিসির তৎকালীন এমডি তাকে উত্তর জোন অফিস থেকে শাস্তিমূলকভাবে বদলি করে উদয়পুরস্থিত পিজিপি অফিসে বদলি করেছিলেন।তারপর আর কে ত্রিপুরা প্রভাবশালী কাউকে ধরে এক বছর পর আগরতলার পিজিপি অফিসে বদলি হয়ে আসেন। সেখান থেকে আবার সেই জনৈক প্রভাবশালীকে ধরে টিআরপিসির গোর্খাবস্তিস্থিত প্রধান কার্যালয়ে গত নভেম্বর মাসে বদলি হয়ে আসেন। তখনই অভিযোগ উঠেছিল, টিআরপিসির ৭০ লক্ষ ৭৪ হাজার ০৬০ টাকা হাপিসের কেলেঙ্কারিকে ধামাচাপা দিতে ও সেসঙ্গে এই আর্থিক কেলেঙ্কারিতে যাতে তিনি কোনওভাবেই জড়িয়ে পড়ার কোনও তথ্য প্রমাণ সামনে না আসে সে বিষয়টি দেখভালের লক্ষ্যে এখানে বদলি হয়ে আসেন। গত নভেম্বরে বদলি হয়ে গোর্খাবস্তিস্থিত প্রধান কার্যালয়ে আসার পর অফিসের কর্মসংস্কৃতি লাটে তুলে ছিলেন বলেও অভিযোগ। কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান পাতালকন্যা জমাতিয়ার আশীর্বাদধন্য আর কে ত্রিপুরা প্রধান কার্যালয়ে এসে একের পর এক নিয়ম বহির্ভূত কাজকর্ম, অনিয়ম-বেনিয়ম কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠে।অবশেষে বৃহস্পতিবার ডেপুটি ম্যানেজার আর কে ত্রিপুরাকে তড়িঘড়ি খুমুলুঙস্থিত এডিসির কার্যালয়ে বদলি করা হয়। রাজ্য সরকারের অবর সচিব তাপস ভৌমিক আর কে ত্রিপুরাকে দ্রুত তথা ইমিডিয়েট নতুন কর্মস্থলে গিয়ে যোগ দেওয়ার বদলির আদেশে নির্দেশ দেন। রাজ্য সরকার আর কে ত্রিপুরাকে বদলি করার পরই বদলি স্থগিত করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।রাজ্য সরকার ও দপ্তরের মন্ত্রীও চাইছেন দ্রুত ও আজই আর কে ত্রিপুরা যাতে বদলি হওয়া কর্মস্থলে যোগ দেন।
এদিকে, টিআরপিসির বাবার পলিব্যাগ চারা ক্রয় নিয়েও নতুন করে বড় ধরনের দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তাতে কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে খোদ কর্পোরেশনেই।কোনও দরপত্র ছাড়া তথা ই-টেন্ডার ছাড়াই ১ কোটি ৬৮ লক্ষ ১২ হাজার ২৫০ টাকার রাবার চারা ক্রয় করা হয়েছে। তাতে মোট রাবার চারা ক্রয় করা হয়েছে ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৭৫০টি। সরকারী নিয়মে রয়েছে দুই লক্ষ টাকার উপর কোনও কিছু ক্রয় করতে হলে ই-টেন্ডার করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু টিআরপিসি সেই পথে না হেঁটে টেন্ডারের নিয়মকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে এতো বিপুল টাকায় রাবার চারা ক্রয় নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারী এই দৈনিক সংবাদে এ বিষয়ে বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু তারপরও কয়েক দিন আগে চারা ক্রয় বাবদ মোটা অঙ্কের টাকাও ব্যবসায়ীদের মিটিয়ে দেওয়া হয়। ডেপুটি ম্যানেজার আর কে ত্রিপুরা সেই টাকা মিটিয়ে দেওয়ার বিলে স্বাক্ষরও করেন।তবে অভিযোগ, কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ রাবার নার্সারি ব্যবসায়ী আনন্দ গোসাই জমাতিয়া থেকে সিংহভাগ রাবার চারা ক্রয় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। রাবার চারা ক্রয় করা হয়েছে সুজিত দাস ও অপর আরও দু’জন থেকেও। এদিকে, কর্পোরেশনের দক্ষিণ জোনে কোনও দরপত্র ছাড়াই নতুন করে আবার বিপুল টাকার রাবার চারা ক্রয় করার অভিযোগ উঠেছে।১ কোটি ৫৫ লক্ষ ৭৩ হাজার ২৮৫ টাকার রাবার চারা ক্রয় করা হয়েছে।মনমোহন রাবার নার্সারি থেকে কোনও দরপত্র ছাড়াই রাবার চারা ক্রয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ। মোট ১ লক্ষ ৭১ হাজার ১৩৫টি রাবার চারা ক্রয় করা হয়েছে। বিনা টেন্ডারে এভাবে রাবার চারা ক্রয় করার বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করা হলে বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে আসবে বলে সংবাদ।