টুরিজমকে শিল্পের মর্যাদা দিয়ে – মিশন নিয়ে কাজ করছিঃ সুশান্ত!!

 টুরিজমকে শিল্পের মর্যাদা দিয়ে – মিশন নিয়ে কাজ করছিঃ সুশান্ত!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- তিনদিকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বেষ্টিত ভারতের উত্তর পূর্বের ছোট পাহাড়ি রাজ্য ত্রিপুরার পর্যটনের মানচিত্র দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। শুধু মানচিত্র পাল্টে যাচ্ছে বললে হয়ত ভুল বলা হবে, মানচিত্রের সাথে সাথে পর্যটন নিয়ে মানসিকতারও পরিবর্তন হচ্ছে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য প্রাপ্তির পর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে যারা রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় ছিল, পর্যটন নিয়ে তাদের মানসিকতা, চিন্তা ভাবনাতেও আমূল বদল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যার বহি:প্রকাশ দেখা গেল বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে। এ দিন বিধানসভায় শাসকদলের বিধায়িকা স্বপ্না মজুমদারের উত্থাপিত পর্যটন সংক্রান্ত একটি বেসরকারী প্রস্তাবের উপর আলোচনায় এমন ছবিই উঠে এলো। প্রস্তাবটি ছিল, ‘ত্রিপুরা রাজ্যের পর্যটন শিল্পকে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে পর্যটন ক্ষেত্রগুলোর উপযুক্তপরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য এই সভা রাজ্য সরকারকে অনুরোধ কে জানাচ্ছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই তর প্রস্তাবকে সব বিরোধী দলই একবাক্যে সমর্থন করেছে। এই প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশেষ করে সিপিআই(এম) পরিষদীয় নেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী এবং বাম বিধায়ক য় দীপঙ্কর সেন রাজ্যের পর্যটন বিকাশে একাধিক পরামর্শ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ ও বিনোদনের বিষয়টি ভাবনায় রেখে ‘বার’, ‘ক্যাসিনো’ ইত্যাদিও আলোচনায় উঠে এসেছে। যা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, সদ্য সমাপ্ত বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে রাজ্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এই বেসরকারী প্রস্তাবে সবথেকে বেশি দশজন সদস্য, সদস্যা আলোচনায় অংশ নিয়েছেন এর থেকে স্পষ্ট, পর্যটনের বিষয়টি শাসক-বিরোধী সকলেই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে।বলতে কোনও দ্বিধা নেই যে, ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য প্রাপ্তির পর থেকে এই রাজ্যের সবথেকে বেশি সময় (৩৫ বছর) শাসন ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্টসরকার। পর্যটন নিয়ে বামেদের ছুঁৎমার্গের কারণে এই সম্ভাবনাময় শিল্পটি চূড়ান্তভাবে অবহেলিত হয়েছে। বামফ্রন্ট সরকার এ বিষয়ে কোনও নজরই দেয়নি। অথচ পর্যটনই হতে পারতো রাজ্যের আর্থিক বিকাশ ও কর্মসংস্থানের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র। ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ত্রিপুরার পর্যটন ক্ষেত্রগুলিকে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের সামনে তুলে ধরার জন্য কোনও উদ্যোগই লক্ষ্য করা যায়নি পূর্বতন সরকারের আমলে। ২০১৮ সালে বাম সরকার পরিবর্তনের পর, রাজ্যে পর্যটনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বিজেপি- আইপিএফটি সরকারের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের উদ্যোগ এবং ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য- এটা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। অমরপুরের ছবিমুড়া, ডম্বুর জলাশয়, নারকেল কুঞ্জ আজ দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। গত পাঁচ- ছয় বছরে ত্রিপুরার পর্যটনের ছবি অনেকটাই বদলে গেছে।পরিকাঠামোর অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। তবে আরও উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমানে যে পরিকাঠামো আছে, তাতে পর্যটকদের চাহিদামতো পরিষেবা প্রদান করা যাচ্ছে না। প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রেই এখন উপচে পড়ছে ভিড়। এ দিন বিধানসভায় আলোচনায় নতুন নতুন পর্যটন ক্ষেত্রের কথা যেমন উঠে এসেছে, তেমনি পর্যটনের বিকাশে এবং পর্যটকদের মনোরঞ্জনে নতুন নতুন বিষয়ও উঠে এসেছে। যেমন ক্যাসিনো, বার, টুরিজম পুলিশ, টুরিস্ট গাইড, টুরিস্ট প্যাকেজ, ওয়াটার স্পোর্টস, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি নানা বিষয় উঠে এসেছে। আলোচনায় জবাব দিতে উঠে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী প্রত্যাশিতভাবেই রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং পূর্বতন পর্যটন মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়ের উদ্যোগ ও ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। একই সাথে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার আন্তরিক প্রয়াসের কথাও উল্লেখ করে বলেন, আমরা রাজ্যের পর্যটন বিকাশে একটা মিশন নিয়ে কাজ করছি। পর্যটন এমন একটি ক্ষেত্র, যা পুরোটাই পরিবেশবান্ধব। বর্তমান সরকার টুরিজমকে একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসাবে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। পূর্বতন সরকারের আমলে পর্যটন বিকাশে কিছুই করা হয়নি। পর্যটন ক্ষেত্রগুলিকে আকর্ষণীয় করে তোলার ক্ষেত্রে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আজ খুব ভালো লাগছে যে, এ বিষয়ে সবাই পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কথা বলছেন। মন্ত্রী বলেন, পর্যটনের বিকাশে দেশের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলিকে ত্রিপুরা পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বসেডর করা হয়েছে। যা আগে কোনও দিন ভাবাই হয়নি। সৌরভ গাঙ্গুলিকে পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করার পর রাজ্যে পর্যটকদের আগমন অনেকটাই বেড়েছে। গত আড়াই মাসে প্রায় ছাপ্পান্ন হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক আমাদের রাজ্যে এসেছেন। আমাদের বিশ্বাস দিন দিন এই সংখ্যা বাড়বে। মন্ত্রী জানান, পর্যটন বিকাশ ও পরিকাঠামো উন্নয়নে আরও বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এডিবির অর্থে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ‘স্বদেশ দর্শন-২’ প্রকল্পে আরও বেশকিছু কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী জানান, ডম্বুর জলাশয়ে খুব শীঘ্রই ‘হাউস বোট’ চালু করা হবে। ছবিমুড়াতে আরও বোট এবং রাতে থাকার ব্যবস্থা করা হবে। ডম্বুর জলাশয়ে যে আইল্যান্ডগুলি আছে সেগুলিকে সাজিয়ে তোলা এবং পর্যটন পরিকাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সব মিলিয়ে একটা সার্বিক পরিকল্পনা নিয়ে সরকার এবং দপ্তর কাজ করছে। আমাদের বিশ্বাস, এতে রাজ্যের আর্থিক বিকাশ এবং কর্মসংস্থানের আরও সুযোগ তৈরি হবে। শুধু তাই নয়, রাজ্যের পর্যটন শিল্পকে একটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবো। এক্ষেত্রে পর্যটন মন্ত্রী শ্রীচৌধুরী সকলের ইতিবাচক সহযোগিতা কামনা করেছেন। এ দিন এই প্রস্তাবে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন, কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ, সিপিএম বিধায়ক জিতেন্দ্র চৌধুরী, বিধায়ক দীপঙ্কর সেন, তিপ্রা মথা বিধায়ক নন্দিতা দেববর্মা, স্বপ্না দেববর্মা, রঞ্জিত দেববর্মা, পাঠানলাল জমাতিয়া, শাসক দলের বিধায়ক রঞ্জিত দাস, বিধায়ক ভগবান দাস প্রমুখ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.