ট্রমা ক্যাজুয়েলিটি বিভাগে পরিষেবা কার্যত শিকেয়

 ট্রমা ক্যাজুয়েলিটি বিভাগে পরিষেবা কার্যত শিকেয়
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ডাক্তার , নার্স , প্যারামেডিকেল স্টাফ , পরিকাঠামো সবই রয়েছে রাজ্যের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র জিবি হাসপাতালে । কিন্তু চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে অধিকাংশ রোগী এবং স্বজনেরা তাদের যারপরনাই অসন্তুষ্ট । রাজ্যের অন্তত নব্বই শতাংশ মানুষের চিকিৎসার শেষ ভরসার জায়গা জিবি হাসপাতাল । মেডিকেল কলেজ হবার পর জিবি হাসপাতালের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন প্রত্যাশানুযায়ী না হলেও , বিস্তর হয়েছে । কিন্তু পরিচালনগত দুর্বলতা , একাংশ পরিষেবা প্রদানকারীর দায়িত্ব পালনে আন্তরিকতার অভাবে ও তথাকথিত নেতাদের অনভিপ্রেত অনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে স্বাভাবিক পরিষেবা কার্যত শিকেয় উঠেছে । চিকিৎসা পরিষেবা কতটুকু অধঃপতন হয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে হাসপাতাল ও কলেজ প্রশাসনে একটি মিটিং মাইন্যুটস থেকে । অতি সম্প্রতি এই রিভিও মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে । মাইন্যুটসে উল্লেখ করা হয়েছে , ক’দিন আগে আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি টিম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টার ও ক্যাজুয়েলিটি ব্লক পরিদর্শন করেন ।

পরিদর্শনকালে তারা ডিউটি রোস্টার অনুযায়ী কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে পাননি । শুধু তাই নয় , কোনও কল রেজিস্ট্রারও তারা পাননি । দীর্ঘ দিন ধরে রোগীদের জি বি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ পাওয়া যায় না । কার্যত ইন্টার্ন এবং জুনিয়রদের উপর নির্ভর করে চলেছে স্টেট রেফারেল হাসপাতাল । কলেজ কর্তৃপক্ষের মিটিং মাইন্যুটসে রোগীদের অভিযোগের সত্যতাই উঠে এসেছে । পরিদর্শনকালে কর্তব্যরত অনুপস্থিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণের কথা নেই মাইন্যুটসে । এটা জিবি হাসপাতালের বাস্তব চিত্র । ট্রমা বিশেষজ্ঞ এবং ক্যাজুয়েলিটি বিভাগ দু’টি হাসপাতালের অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ । রোগীরা প্রথমে এই দু’টি বিভাগে আসে । এই দুই বিভাগের তৎকাল জরুরি পরিষেবার উপর নির্ভর করে সংকটাপন্ন রোগীদের ‘ মরণ – বাঁচন ’ । দেশের সব হাসপাতালে এই দুই বিভাগে অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে স্ট্রং ইমারজেন্সি ম্যানেজমেন্ট টিম ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত থাকেন । আর জিবি হাসপাতালে রোগীর ‘ গোল্ডেন পিরিয়ড’এ জরুরি পরিষেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন আণ্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্স এবং পিজি ইন্টার্নরা । রাতে পিজি ইন্টার্নরাও নিয়মিত থাকেন না । তখন ইমারজেন্সি ম্যানেজমেন্ট কী হয় , সহজেই অনুমেয় । আরও লজ্জাকর উদ্বেগজনক ঘটনা হলো মহকুমা ও জেলা হাসপাতাল থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা যে রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্টেট রেফারেল হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে পাঠাচ্ছেন , জিবি হাসপাতালে সেই সংকটাপন্ন রোগীদের ইমারজেন্সি ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন সদ্য স্নাতক ডিগ্রি প্রাপ্ত ইন্টার্নরা । রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক মনে হলেও তাদের পক্ষ্য অনকল থাকা স্যারদের ( বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ) কল দেওয়া সম্ভব হয় না । শুধু তাই নয় , মাঝ রাতে কর্তব্যরত পিজি স্টুডেন্ট দাদাদের ফোন করতেও তারা ইতস্তত করে । কলেজ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব জানেন না , তা কিন্তু নয় । কিন্তু দীর্ঘ বছরের এই অব্যবস্থা দূর করার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করে সময় নষ্ট করবার সময় কোথায় তাদের । জিবি হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগে পরিষেবা অচলাবস্থা চলছে । জোড়াতালি দিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় সকলেই । যারা নিষ্ঠা ও সততার সাথে পরিষেবা প্রদান করতেন , তারাও বিভিন্ন অনভিপ্রেত পরিস্থিতির শিকার হয়ে এখন মুখ বন্ধ করে অব্যবস্থার মূল স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন । এই পরিস্থিতিতে রোগীরা বড় অসহায় বোধ করছেন হাসপাতালে এসে । পরিষেবা নিয়ে অসন্তোষের গ্রাফ অতি দ্রুত উর্ধ্বগামী হচ্ছে ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.