প্রশ্নের মুখে বৈধ সীমান্ত বাণিজ্য, আমদানির তুলনায় রপ্তানি নামমাত্র, পরিস্থিতি চিন্তাজনক!!
ট্রাম্পনীতি এবং এশিয়া!!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফায় এশিয়ায় অর্থনৈতিক ও ভূ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দিনে দিনে অস্থিরতার শঙ্কা তৈরি হইতেছে।এই পরিস্থিতিতে ভারতেও কূটনৈতিক অবস্থান কিন্তু স্পষ্ট নহে।ভারত প্রথম হইতেই সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার কৌশলগত বন্ধু ছিল।তাহা সত্ত্বেও আমেরিকার সহিত সম্পর্ক বজায় রাখিয়া একটি দর কষাকষির পথ খুলিয়া চলিত।কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সেই পথ বন্ধ হইয়া যায়। তথাপিও রাশিয়ার সহিত ভারতের বন্ধুত্ব অটুট রহিয়াছে অদ্যাবধি। ইদানীং মস্কো নয়াদিল্লীর সম্পর্ককে ভালোভাবে লইতেছে না ইউরোপীয় সমাজ। আবার রাশিয়া চিনের সম্পর্ক পশ্চিমী দুনিয়ায় পরিস্থিতিকে জটিল করিতেছে। অন্যদিকে এই উপমহাদেশের অন্যতম বড় রাষ্ট্র এখনও অবধি কোনও সুস্পষ্ট বিদেশনীতি জানাইতে পারে নাই।
একদিকে, আব কি বার ট্রাম্প সরকার অন্যদিকে বাইডেনের স্ত্রীর জন্য বহুমূল্য উপহার আমেরিকার সহিত নয়াদিল্লীর বন্ধুত্বের বাসনাকে স্পষ্ট করে। আবার রাশিয়ার সহিতও রহিয়াছে আধা বন্ধুত্ব। একবার চিনের সঙ্গে নৈকট্য আবার একই সঙ্গে চিনকে বাদ দিয়া উপ মহাদেশের অন্যান্য সব দেশকে লইয়া জোট গঠন নয়াদিল্লীর অগ্রাধিকার ক্ষেত্র হিসাবে চিহ্নিত হইতেছে। আগে সার্ক সম্মেলন লইয়া বড় রাষ্ট্র হিসাবে নয়াদিল্লী নানান দায়িত্ব লইতো। কিন্তু পাকিস্তানকে জোটে রাখা চলিবে না তাই সার্ক বন্ধ হইয়া গিয়াছে। এইবার গুরুত্ব পাইতেছে বিমস্টেক। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকিবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি।
২০১৮ সালে বিমস্টেকের চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন বসিয়াছিল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে। পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলন হয় ভার্চুয়াল, শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় ২০২২ সালে। শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে ষষ্ঠ সম্মেলনের আসর বসিতেছে ব্যাংককে। সম্মেলনের মূল সুর ‘বিমস্টেক…..সমৃদ্ধ, স্থিতিশীল ও মুক্ত’। এই সম্মেলনে সংগঠনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করিবে বাংলাদেশ। বিমস্টেক কাঠামোর মধ্যে সদস্যদেশগুলি কীভাবে পারস্পরিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়াইতে পারে, বাণিজ্য বৃদ্ধি, লগ্নি সহ বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ বাড়াইবার পাশাপাশি নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, শীর্ষ নেতারা সেই সকল বিষয়ে আলোকপাত করিবেন।একই সঙ্গে আলোকপাত থাকিবে জলবায়ুর ক্ষেত্রে। বিমস্টেকের সদস্যদেশগুলি হইতেছে ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভূটান-মায়ানমার এবং থাইল্যান্ড।বিমস্টেক লইয়া এই সময়ে ঢাকার আগ্রহ সভাপতি পদের চাইতেও অধিক মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে। যদিও শেষ সময়ে নয়াদিল্লী জানাইয়া দিয়াছে সময়াভাবে সম্ভব নহে। তবে মোদি ইউনূসের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হইবে এই বিষয়ে নিশ্চিত দুই পক্ষ। গত ছয় মাস বা এক বৎসরে এশিয়ায় যে সকল বৃহৎ ঘটনা ঘটিয়াছে সেইগুলির মধ্যে অন্যতম হইল বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান ও শেখ হাসিনার দেশত্যাগ। স্বভাবতই এই ঘটনা দুই চির প্রতিবেশী নয়াদিল্লী ও ঢাকার মধ্যেকার সম্পর্ক পিচ্ছিল করিয়াছে। মহম্মদ ইউনুস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে বারংবার নয়াদিল্লীর সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ চাহিতেছেন। কিন্তু হইয়া উঠিতেছে না। তাই বলিয়া ঢাকার বিদেশ নীতি থামিয়া নাই। আমেরিকার সঙ্গে তেমন সুবিধা হইতেছে না বুঝিয়া ইউরোপের প্রায় সকল দেশের সহিত সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালাইয়া যাইতেছে ঢাকা। আবার নয়াদিল্লীর নীরবতাকে সম্মান জানাইয়াই চিনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রত্যাশা করিতেছে। শেখ হাসিনার নয়াদিল্লীতে উপস্থিতির কথা চিন্তায় রাখিয়া এবং শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের প্রত্যাশা জিয়াইয়া রাখিয়া ঢাকা ভারতকে বার্তা দিয়াছে পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক লইয়াই ঢাকা নয়াদিল্লীর সহিত অগ্রসর হইতে চায়।
এই দিক হইতে বাংলাদেশের বিদেশনীতি ভারতের চাইতে স্বচ্ছ, এই কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই সময়ে ভারতের সামনেও ভাবনার বিষয় ট্রাম্পের সুবিধাবাদী কূটনীতি, সুরক্ষাবাদী বাণিজ্যনীতি এবং অনিশ্চিত সিদ্ধান্ত। এই সকল ক্ষেত্রে কোনও দেশ এককভাবে তেমন কিছু করিতে পারিবে না। তবে এশিয়া যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে প্রতিরোধ গড়িয়া তোলার সুযোগ থাকিবে। দীর্ঘদিনের মিত্রদের প্রতি ট্রাম্পের ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং ভয় দেখাইবার কৌশল আমেরিকার নিরাপত্তা অঙ্গীকারের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করিতেছে। এশিয়ার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হলো, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশগুলো যেমন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন এবং কৌশলগত সহযোগী তাইওয়ান এই কারণে শঙ্কিত যে ট্রাম্প চিনের সহিত বা উত্তর কোরিয়ার সহিত কোনও সমঝোতা করিয়া তাহাদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলিয়া দিতে পারে।অন্যদিকে ট্রাম্পের আগ্রাসী অর্থনীতির কারণে চিন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং আসিয়ানভুক্ত যেসকল এশিয় অর্থনীতির দেশ আমেরিকার সহিত বড় বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রাখিতেছে, তাহাদের প্রবৃদ্ধি ও আর্থিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়িয়া যাইতেছে। মুদ্রার মূল্যহ্রাস হয়তো শুল্কের কিছুটা প্রভাব কমাইতে পারে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন সত্যিই ডলার দুর্বল করিবার পদক্ষেপ নিলে উদ্বৃত্ত রক্ষাকারী দেশগুলির বিন্দুমাত্র স্বস্তি থাকিবে না, বাণিজ্য ভারসাম্য আরও খারাপ হইবে। অর্থনীতিকেরা বলিতে শুরু করিয়াছেন, আসিয়ান, আসিয়ান এবং চিন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া রয়েছে সহ পূর্ব এশিয়া সম্মেলনের (ইস্ট এশিয়া সামিট) মতন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করিয়া কৌশলগত ও নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করিতে পারিলে তবেই আমেরিকার নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং ভূ রাজনৈতিক উত্তেজনার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক প্রতিরোধ গড়িয়া তোলা সম্ভব।