ট্রাম্প গ্রাসে ইউক্রেন!!

 ট্রাম্প গ্রাসে ইউক্রেন!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব লইবার আগে এবং নির্বাচনে জয়ী হইবার পর বিশ্বজোড়া গুঞ্জন চলিতেছিল যুদ্ধের কি হইবে!কেহই ভাবে নাই ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পথে যুদ্ধ সংঘর্ষগুলির মোকাবিলা করিতে চাহিবে। এই কথা সকলেই জানে আমেরিকা এই বিশ্বে যে কোনও যুদ্ধের অনুঘটক। তাহাদের ব্যতিরেকে যুদ্ধ শুরু হইলেও শেষ হয় না। বিশ্বের কোনও প্রান্তে যুদ্ধ থাকিবে আর উহাতে আমেরিকা নাই এই ঘটনা কেহ কস্মিনকালে দেখে নাই। তাই ধরিয়া লওয়া হইয়াছিল ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণ করিবামাত্র উপসাগরের ইজরায়েলি দখলদারির যুদ্ধ, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ লইয়া অবশ্যই কথা বলিবেন।
বলিলেনও।কিন্তু এত সহজ হইবে তাহার পরামর্শ, কোনও রাখঢাকহীন হইবে তাহার কথা ইহা কেহই ভাবিতে পারে না। আমেরিকার আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ট্রাম্পের বিরোধী অর্থাৎ ডেমোক্রাটেরা বরাবর ট্রাম্পকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের দোসর বলিয়া প্রচার করিত। এই সমালোচনার মুখে ট্রাম্পের যুতসই ব্যাখ্যা ছিল না। তাই অনেকেই ধরিয়া লইয়াছিল, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ লইয়া ট্রাম্প এমন কোনও দাওয়াইয়ের কথা বলিবেন না, যাহা পুতিনের স্বার্থের পরিপন্থী হইতে পারে।আবার আমেরিকার যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় বরাবরের বলু আইড কাঠ পুতুল নেতানিয়াহুকেও মনোকষ্ট দেওয়া যাইবে না।
যেহেতু প্যালেস্তানিগণের আর দেশ সেই অর্থে অবশিষ্ট নাই তাই উহাদের পরিত্যক্ত বসতি গাজা যাইবার বাসনা প্রকাশ করিলেন ট্রাম্প। ওই ভূমিতে ট্রাম্প প্রশাসন এখন আবাসনের ব্যবসা করিবে না কি রিসর্ট বানাইবে সেই কথা অবশ্য প্রকাশ করেন নাই। তবে ইউক্রেন লইয়া ট্রাম্পের যে দাওয়াই উহাতে সারা বিশ্বকে বাদ দিলেও ইউরোপিয়া ইউনিয়নের বিস্ময় সীমাছাড়া। তাহাদের ঘোর এখনো কাটে নাই। সকল বিতর্কের অবসান ঘটাইয়া দিয়া ওয়াশিংটনের সীমানা শত্রু রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের লাভ ভাগাভাগি করিবার প্রস্তাব দিলেন ট্রাম্প। কিন্তু এই ইচ্ছা প্রকাশের আগে ইউরোপিয় ইউনিয়নের সহিত কোনও আলাপ আলোচনার প্রয়োজন বোধ করিলেন না।
ট্রাম্পের ইচ্ছা ইউক্রেনের সম্পদের ভাগাভাগির শর্তে রাশিয়া ইউক্রেনের সহিত যুদ্ধে ইতি টানিয়া আনুক। প্রকাশ্যে এই ভাষা ব্যবহার না করিলেও ট্রাম্প চেয়ারে বসিয়াই বলিয়াছিলেন, ইউক্রেনকে তাহার খনিজ সম্পদের ৫০ শতাংশ দিতে হইবে আমেরিকাকে। কিন্তু জেলেনেস্কি ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করিয়া বলিয়াছিলেন, আমি আমার দেশ বেচিয়া দিতে পারিব না। ট্রাম্পের স্পষ্টীকরণ ছিল, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে যে পরিমাণ সহায়তা দিয়াছে তাহার সমমূল্যের খনিজ প্রতিদান প্রত্যাশা করিতেছে। ট্রাম্প হিসাব দিয়াছেন, সেই সামরিক সহায়তার পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি ডলার।ইহার সমমূল্যে ইউক্রেনের খনিজ ভাণ্ডারে প্রবেশাধিকার চান।
অবশেষে জেলেনেস্কি জানাইয়াছেন, আমেরিকা সামরিক সহায়তা যাহা দিয়াছে উহার পরিমাণ ১০ হাজার কোটি ডলার। ইহা সহায়তা, ঋণ নহে। অনুদান ফেরত দেওয়ার কোনও বাধ্যবাধকতা থাকে না। তবে আমেরিকার সহিত কোনও বিষয়ে চুক্তি করিতে তাহার আপত্তি নাই। বিনিময়ে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকিতে হইবে। অর্থাৎ শেষ অবধি জেলেনেস্কি আমেরিকার সহিত খনিজ লইয়া চুক্তি করিতে চলিয়াছে। কারণ চুক্তি লইয়া আমেরিকার চাপের মুখে রহিয়াছে ইউক্রেন। প্রসঙ্গত, মূল্যবান খনিজ লইয়া চাপের মুখে রহিয়াছে আমেরিকা। এই সকল খনিজের জন্য চিনের মুখাপেক্ষী ছিল এতোদিন। গত বৎসর হইতে চিন তার খনিজ কাঁচামাল আমেরিকায় রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আনে। ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় আসিবার পর সেই সকল সামগ্রী আমেরিকায় রপ্তানি বন্ধ করিয়া দিয়াছে।
এই ঘাটতি আমেরিকা ইউক্রেনের ভাণ্ডার হইতে মেটাইতে চায়। চিন বিশ্বের বিরল খনিজ ভাণ্ডারের ৭৫ শতাংশের মালিক। ওপর দিকে কিয়েভের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের এই সকল খনিজ কাঁচামালের পাঁচ শতাংশ রহিয়াছে ইউক্রেনে। এই তালিকায় আছে প্রায় ১ কোটি ৯০ লক্ষ টন গ্রাফাইট। ব্যাটারি চালিত গাড়ি তৈরিতে গ্রাফাইট এক দামি উপাদান। ইহার সরবরাহে এই দেশ বিশ্বে প্রথম পাঁচ দেশের মধ্যে একটি। ইউরোপের মোট লিথিয়ামের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ ইউক্রেনে। ব্যাটারি তৈরির অন্যতম উপাদন ইহা। আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে অবধি টাইটানিয়াম উৎপাদনে এই দেশে বিশ্বে সাত শতাংশের মালিকানা লইয়া ছিল। বিমান ও বিদ্যুৎকেন্দ্র ইত্যাদিতে এই হালকা ধাতুর ব্যবহার হইয়া থাকে। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের পরিণতিতে আমেরিকা এখন ইউক্রেনের এই খনিজভাণ্ডার গ্রাস করিতেছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.