ঠিকাদারি নিগোসিয়েশন বাণিজ্য ঘিরে হত্যা ও গুলীকাণ্ডে আতঙ্ক!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-ঠিকাদারি নিগোসিয়েশন বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন ও রাজ্য সরকার।শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্বও ঠিকাদারি নিগোসিয়েশন বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে করতে পারছে না। অভিযোগ, শাসকদলের মণ্ডল স্তর থেকে রাজ্য নেতা ও মন্ত্রীদের একাংশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিগোসিয়েশন বাণিজ্যে যুক্ত হয়ে পড়ায় ঠিকাদারি নিগোসিয়েশন বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না প্রশাসন, সরকার ও শাসক দল। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে ঠিকাদারি নিগোসিয়েশন মাফিয়াদের কারণে প্রকৃত ঠিকাদাররা কোনও কাজের টেন্ডার জমা দিতে পারছেন না।কোন কারণে টেন্ডার জমা দিলেও মাফিয়াদের চাপ, হুমকি ও রক্তচক্ষুর কারণে টেন্ডার তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছেন ঠিকাদাররা।কমিশনের কাঁচা টাকার বিনিময়ে ঠিকাদারি মাফিয়াদের পছন্দের ঠিকাদারদের দিয়ে টেন্ডার জমা দিয়ে চড়া মূল্যে কাজের বরাদ্দ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে রাজ্য সরকারের কোষাগার ফাঁকা হচ্ছে। কমিশনের কোটি কোটি টাকায় ঠিকাদারি নিগোসিয়েশন বাণিজ্যে যুক্তদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। এদিকে ঠিকাদারি নিগোসিয়েশন বাণিজ্য নিয়ে হত্যাকাণ্ড থেকে প্রায় প্রতিদিনই রাজ্যের কোথাও না কোথাও গোলাগুলী, মারপিট, বিজেপি অফিস ভাঙচুর, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় গোটা রাজ্যের সাধারণ মানুষও এক অজানা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।এদিকে ঠিকাদারি নিগোবাণিজ্যকে ঘিরে মান্দাই ও খুমুলুঙে তিনটি গুলী কাণ্ডের ঘটনার এখনও কোনও কিনারা করতে পারেনি প্রশাসন ও সরকার। ঘটনার এক সপ্তাহ বাদেও পুলিশ গুলী কাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তল উদ্ধার করতে পারেনি। এই চাঞ্চল্যকর তিনটি গুলী কাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ড শেষে আদালাতে পাঠালে বিচারক অভিযুক্তদের জেল হাজতে পাঠান। অভিযুক্তরা হল ফেন্সিস দেববর্মা (একুশ) ও বিশ্বনাথ দেববর্মা (কুড়ি)। পুলিশ অভিযুক্তদের চারদিন রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের পরও পিস্তল উদ্ধার করতে পারেনি। তিন-তিনটি গুলীকাণ্ডের ঘটনায় মান্দাই ও রাধাপুর থানায় পৃথক পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। তিনটি মামলায় প্রায় দশ থেকে পনেরোজনের নাম রয়েছে। কিন্তু ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পলাতক। পুলিশ অভিযুক্তদের পাকড়াও করার জন্য অভিযান চালালেও তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। তবে তিন-তিনটি গুলী কাণ্ডের ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও পিস্তল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।পলাতক অভিযুক্তদের জালে তুলতে পারলে পিস্তল উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে দাবি পুলিশের।
উল্লেখ্য, গত চব্বিশ জুলাই প্রকাশ্য দিবালোকে মান্দাই থানা এলাকায় বসবাসকারী বিজেপি নেতা রামানন্দ দেববর্মার বাড়িতে দুষ্কৃতীরা চার রাউন্ড গুলী তাকে লক্ষ্য করে চালায়। পরবর্তী সময়ে খুমুলুঙ এলাকার পার্কের পেছনের দিকে অবস্থিত বিজেপির দলীয় অফিস ভাঙচুর এবং গুলী চালানো হয়। এই চাঞ্চল্যকর গুলী কাণ্ডের ঘটনার একদিন বাদে রাধাপুর থানাধীন মহিম ঠাকুর পাড়ায় বসবাসকারী আরেক বিজেপি নেতাকে গুলী করে আহত করে দুষ্কৃতীরা। আহতের নাম হৈতরাই দেববর্মা।অভিযোগ, পাঁচ-ছয়জনের দুষ্কৃতী দল হৈতরাই দেববর্মার বাড়িতে রাতে গিয়ে তাণ্ডব চালায়। ভয়ে বিজেপি নেতা হৈতরাই দেববর্মা পালিয়ে যাবার চেষ্টা করলে তাকে গুলী করে আহত করে দুষ্কৃতীরা।এ ব্যাপারে পাঁচ-ছয়জনের নামধাম জানিয়ে আহত ব্যক্তি থানায় মামলা করেছেন। এদিকে মান্দাই ও খুমুলুঙ এলাকায় ঘটে যাওয়া গুলীকাণ্ডের ঘটনায়ও দুটি মামলা হয়েছে। তিনটি গুলীকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় বারো থেকে পনেরোজনের নামধাম দিয়ে মামলা করেছেন তিনজন। কিন্তু ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও পুলিশ পিস্তল উদ্ধার করতে পারেনি। এমনকী কথায় কথায় গুলী চালানোর ঘটনায় পিস্তল আসছে কোথা থেকে সেই রহস্যও পুলিশ বের করতে পারেনি। রাজ্যের নানা স্থানে বর্তমান সময়ে পিস্তলবাজি চলছে। এদিকে ঠিকাদারি নিগোসিয়েশন বাণিজ্য ঘিরে খোদ শহরের শালবাগান বাজার এলাকায় উষাবাজারের ভারত রত্ন ক্লাবের সম্পাদককে গুলী করে খুন করা হয়।অভিযুক্ত কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও ঘটনার প্রকৃত কিনারা করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। জিরানীয়া থানাধীন চম্পকনগরে কিছুদিন আগে নিগোবাণিজ্য ঘিরে এক যুবককে লক্ষ্য করে গুলী চালানো হয়। পরবর্তী সময়ে পুলিশ অভিযুক্তকে আটক করে তার কাছ থেকে পিস্তলও উদ্ধার করেছিল।অভিযুক্তের বাড়ি ছিল খুমুলুঙ।বর্তমানে সে জেলে রয়েছে।প্রশ্ন উঠেছে, মান্দাই ও খুমুলুঙ এলাকা সহ নানা স্থানে দুষ্কৃতীদের হাতে পিস্তল আসছে কোথা থেকে?কে বা কারা এই অস্ত্র কারবারে যুক্ত? মানুষ অস্ত্র কারবারীদের হদিশ বের করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি তুলছে। বর্তমান সময়ে একের পর এক বন্দুকবাজির ঘটনায় গোটা রাজ্যে নতুন করে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। শান্তি বিনষ্টকারী নিগোমাফিয়া ও পিস্তলবাজদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানেরও দাবি তুলেছেন শান্তিপ্রিয় জনগণ।