ডিগ্রি কলেজে শিক্ষক সংকট সাত বছরে নিয়োেগ মাত্র ৯১!
অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের
উচ্চশিক্ষার বেহাল দশা।তবে উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়নে পদক্ষেপ অধরা।যদিও রাজ্যের উচ্চ শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে প্রত্যেক মাসেই চারটি বৈঠক হচ্ছে রাজ্য মহাকরণে। এমনকী উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়নের নামে রাজ্য সরকারের কোষাগার ফাঁকা করে প্রচারেও খামতি নেই রাজ্যে।তবে বাস্তব হলো রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা অন্তর্জলি যাত্রার পথে।যার খেসারত দিচ্ছেন রাজ্যের প্রায় পঞ্চাশ হাজার কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী।বর্তমান শিক্ষাবর্ষে স্নাতকস্তরের প্রকাশনা ফলাফলেও তা প্রমাণিত হয়েছে।তবে এরপরও এক অদৃশ্য কারণে রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের হেলদোল নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর প্রায় সাত বছর ধরে প্রবল শিক্ষক সংকটে ধুঁকছে রাজ্য সরকারের সাধারণ ডিগ্রি কলেজ।যার ফলে ডিগ্রি কলেজে নিয়মিত পড়াশোনা হচ্ছে না।আর গণহারে স্নাতকস্তরে ফেল করছে ছাত্রছাত্রীরা।তবে ছাত্র শিক্ষক অনুপাতে অধ্যাপক অধ্যাপিকা নিয়োগ বন্ধ রাজ্যে।উল্টো গত সাত বছরে রাজ্য সরকারের পঁচিশটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে মাত্র ৯১ জন অধ্যাপক অধ্যাপিকা নিয়োগ করা হয়।যদিও ইউজিসির ছাত্র শিক্ষক ২৫:১ অনুপাতে এই মুহূর্তে বর্তমানে পঁচিশটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে প্রায় ১৭৮১ জন শিক্ষক শিক্ষিকার প্রয়োজন।তবে সহজেই অনুমেয় রাজ্যের উচ্চ শিক্ষার কি বেহাল দশা চলছে।আর খেসারত দিচ্ছেন প্রায় পঞ্চাশ হাজার ছাত্রছাত্রী।শিক্ষক সংকট থাকলেও রাজ্যে আবার নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর এবং চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি কোর্স চালু হয়ে গিয়েছে।ফলে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, রাজ্য
সরকারের সাধারণ ডিগ্রি কলেজগুলিতে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়ম মোতাবেক শিক্ষক শিক্ষিকা নেই।ফলে ইউজিসির ২৫:১ছাত্র-শিক্ষক
অনুপাতের নিয়মও লঙ্ঘন হচ্ছে।উল্টো ২০২৩ সালে রাজ্যে আরও তিনটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজের সূচনা করা হয়।রাজ্যে একপ্রকার ন্যূনতম পরিকাঠামো ছাড়া পরিত্যক্ত বাড়িতে রাতারাতি শ্রী অরবিন্দ সরকারী ডিগ্রি কলেজ, সরকারী ডিগ্রি কলেজ পুরাতন আগরতলা, পানিসাগর সরকারী ডিগ্রি কলেজের সূচনা হয়েছে।এই নতুন কলেজগুলিতেও শিক্ষক সংকটে নাজেহাল অবস্থা।শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর রাজধানী শহর আগরতলার প্রধান চারটি কলেজ এমবিবি কলেজ, বিবিএম কলেজ, উইমেন্স কলেজ, রামঠাকুর কলেজ শিক্ষক সংকটের দৌলতে অনার্স ক্লাসই সঠিক ভাবেই হচ্ছে না।আর পাস কোর্সে পঠন পাঠনরত হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর আরও শোচনীয় অবস্থা।অধ্যাপক, অধ্যাপিকা সংকটের জন্য জেলা ও মহকুমাস্থিত সাধারণ ডিগ্রি কলেজের পঠনপাঠন এক প্রকার পুরোপুরি বন্ধ। অতিথি শিক্ষক শিক্ষিকা পর্যন্ত কলেজগুলিতে নেই।অথচ রাজ্যে হাজারো নেট, স্লেট, পিএইচডি উত্তীর্ণ যুবক যুবতী চাকরির জন্যে রাজপথে ঘুরছেন।এমনকী তারা প্রত্যেক মাসেই বয়স উত্তীর্ণ বেকারে পরিণত হচ্ছে।কিন্তু সরকার তাদের নিয়োগ করছে না।বেকার যুবক-যুবতীদের আরও অভিযোগ রাজ্য সরকার শুধুমাত্র কলেজগুলিতে সর্বোচ্চ পাঁচজন করে অতিথি শিক্ষক নিয়োগে ব্যস্ত।
শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে পঁচিশটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ছাত্র অনুপাতে প্রায় ১৭৮১ জন অধ্যাপক অধ্যাপিকার প্রয়োজন রয়েছে।বর্তমানে কলেজগুলিতে ইউজিসি স্বীকৃত কর্মরত অধ্যাপক-অধ্যাপিকার সংখ্যা মাত্র প্রায় ৪৭১ জন।এর মধ্যে আবার প্রত্যেক মাসেই অধ্যাপক, অধ্যাপিকারা অবসরে যাচ্ছেন। এর মধ্যে অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা আবার রাজ্য সরকারের চাকরি ছেড়ে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও যোগদান করছেন। ফলে শিক্ষক সংকট প্রত্যেক মাসেই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। আর এর প্রভাবে ইউজিসির সেমেস্টার পদ্ধতির নিয়ম অনুযায়ী কলেজগুলিতে শ্রেণীকক্ষে ১৮০ দিন ক্লাস হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রেও পিছিয়ে রয়েছে রাজ্য। ফলে ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড এক্রিডিটেশন কাউন্সিলের পরিসংখ্যানেও রাজ্যের কলেজগুলির মান তলানিতে ঠেকেছে।
অভিযোগ,২০১৭ সালে ত্রিপুরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ১৮২টি পদে অধ্যাপক অধ্যাপিকা নিয়োগের প্রক্রিয়া পর্যন্ত বর্তমান সরকার বাতিল করে দিয়েছে।এরপর প্রায় তিন বছর নিয়োগ বন্ধ।২০২১ সালে ওই সময়ে তৎকালীন বাইশটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজের জন্য মাত্র পঁয়ত্রিশ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়।এরপর ২০২২ সালে আরও পঁয়ত্রিশ জন শিক্ষক শিক্ষিকা এবং একুশ জন ককবরক শিক্ষকও নিয়োগ করা হয়।এরপর ২০২২ সালে আরও পঁয়ত্রিশ জন শিক্ষক শিক্ষিকা এবং একুশজন ককবরকও নিয়োগ হয়েছে। ২০২৩ সালে আবার নতুন ভাবে তিনটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজের সূচনা হয় রাজ্যে। অভিযোগ শিক্ষক সংকটের দৌলতে বিজ্ঞান বিভাগে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের সবচেয়ে করুণ অবস্থা। একটি সেমেস্টারেও পড়ুয়াদের প্র্যাকটিকেল ক্লাস সঠিক অনুপাতে হচ্ছে না। রাজ্যের জেলা, মহকুমার কলেজগুলিতে প্র্যাকটিকেল ক্লাসই বন্ধ। পঁচিশটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে অনার্স ও পাস কোর্সের ক্লাসেরও একই হাল।এটাই হলো রাজ্যের উচ্চশিক্ষার বাস্তব চিত্র।