Categories: দেশ

ডিজিটালের ধাক্কায় উধাও ক্যালেন্ডার, হালখাতার আমন্ত্রণ পত্ৰ

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আর কদিন পরেই নববর্ষ। তার আগে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় পশরা সাজিয়ে কার্ড, ক্যালেন্ডার ব্যবসায়ীরা উধাও। ১৪৩০ বঙ্গাব্দ এগিয়ে এলেও এখনও বাজারে বাংলা ক্যালেন্ডারের চাহিদা নেই বললেই চলে। মাঝে আর মাত্র একটা সপ্তাহ বাকি রয়েছে। এখনও দোকানে বসে কার্যত মাছি তাড়াচ্ছেন ক্যালেন্ডার ব্যবসায়ীরা।



কলকাতার বাজারের সব জায়গাতেই চিত্রটা একইরকম। জিজ্ঞেস করলে কেউ বলছেন অর্ডার নেই এবারে। আবার কারোর আশা, আর কয়েকদিন পরে বিক্রি বাড়বে।কলকাতার ধর্মতলায় টিপু সুলতান মসজিদের পাশে শতাব্দী প্রাচীন দোকান রয়েছে ফারুখের। দুপুরে ফাঁকা দোকানে বসে গল্প করছিলেন তিনি। জানালেন, অর্ডার হবে কী করে? কাগজের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছে এখন। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। যেখানে আগে আমাদের কেনা পড়ত প্রতি পিস ১২ টাকা, এখন সেটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২০ টাকায়।’ খদ্দের এসে দাম শুনে চলে যাচ্ছেন বলে আফশোষ করলেন ফারুখ। তার কথায়, ‘আগে যেখানে ন্যূনতম ১০০০ টাকা খরচ হত, এখন খদ্দের এসে শুনছেন ২২০০ টাকার কমে হবে না। ১২০০ টাকা বেশি দিয়ে তারা কেন কিনবেন বলুন।কোভিড পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষ ক্যালেন্ডারের মতো অনেক সামগ্রীতেই বিশেষ খরচ করতে রাজি নন। আগে পয়লা বৈশাখ, হালখাতায় সাধারণ বা ছোট দোকানেও মিষ্ঠটির প্যাকেটের সঙ্গে দেওয়া হত ক্যালেন্ডার। লকডাউনের পর, অনেক দোকানেই হালখাতা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ঘরোয়া পুজো করেই পালন হয় বাংলা বছরের প্রথম দিনটি। হাওড়ার আব্দুল এলাকায় প্রেসগুলোতেই অতীত কাল থেকে ছেপে বেরতো বাংলা নববর্ষের ক্যালেন্ডার।সত্তর বছরের পৈত্রিক ব্যবসা শ্রীকুমার কুণ্ডু চৌধুরীদের । তিনি নিজেও চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে ক্যালেন্ডার তৈরির কারবারে যুক্ত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলা হরফের চেয়ে ইংরেজি হরফের প্রচলন অনেক বেশি।বাংলা নবীর নববর্ষের আগে চাহিদা থাকলেও সারা বছর সেভাবে থাকে না। আগে শুধু পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে নয়টি, আশেপাশের রাজ্য থেকেও ব্যবসায়ীরা চৌধুরীদের প্রেসে বাংলা ক্যালেন্ডার তৈরির বরাত দিতেন। তবে এ বছর বরাত চ্ছ। অনেকটাই কমেছে বলেই জানান তিনি।আগে বাড়িতে হালখাতা সেরে কেউ ফিরলে বাড়ির ছোটদের মধ্যে ক্যালেন্ডার শীঘ্রই দেখা নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে যেত। আজকাল আর অল্প বয়সিদের মধ্যে ক্যালেন্ডার নিয়ে সেই উন্মাদনা দেখা যায় না। রত্না প্রিন্টার্সের একজন অংশীদার উৎপল দাস বললেন, “আমার নাতনি তো ক্যালেন্ডার দেখতেই পারে না। কোনও বিশেষ দিনের তারিখ জিজ্ঞাসা করলে মোবাইল দেখে বলে দেয়। আজকালকার ছেলে মেয়েদের কাছে মোবাইল একটা আলাদা জগৎ। সব কিছুর সমাধান সেখানেই খুঁজে নেয়। আর তা ছাড়া ইদানীং তো হালখাতার জাঁকজমকও কমে এসেছে।’ কলকাতার শিয়ালদা, বৈঠকখানা আর হাওড়ার কদমতলা এলাকাজুড়ে রাস্তার দু’ধারে লাইন দিয়ে দোকান রয়েছে কার্ড, ক্যালেন্ডারের। তবে অধিকাংশের মতে, ব্যবসা এবারে মন্দা। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী সুকুমার দাস জানালেন, ‘এখন আর কেউ হালখাতা করেন না। ব্যবসার মন্দা থেকে অনেকে হালখাতা করাই বন্ধ করে দিয়েছেন। হালখাতা না হলে আর আমাদের ব্যবসা কী করে হবে বলুন।’ যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডিজিট্যালাইজ্‌ড হয়ে গিয়েছে নববর্ষ। কার্ডের বদলে এখন সমাজ মাধ্যমে নিমন্ত্রণ পাঠাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

সাসপেন্ড ১২ জন আপ বিধায়ক!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-নতুন সরকার গড়ার পরেই ‘আপের শেষ দেখে নেওয়ার’ হুঁশিয়ারি দিয়েছিল পদ্ম শিবির এবার…

3 hours ago

শিখ দাঙ্গায় প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ সজ্জন কুমারের যাবজ্জীবন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইন্দিরা গান্ধী হত্যা পরবর্তী তে ১৯৮৪-এর শিখ ধর্মাবলম্বী বাবা যশবন্ত সিং ও ছেলে…

3 hours ago

প্রতিবেশী সম্পর্ক!!

'প্রতিবেশী' এই শব্দটির মানে অর্থ কি? খুব সহজ করে বললে,এর উত্তর হচ্ছে 'নিজের কাছাকাছি বা…

4 hours ago

নয়া করোনার খোঁজ, ছড়াবে বাদুড় থেকে।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-আমেরিকা প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে যে,চিন থেকেই ছড়াতে শুরু করেছিল করোনাভাইরাস।আমেরিকা এমনও…

4 hours ago

রাত তিনটায় সাংবাদিক সম্মেলন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-বাংলাদেশেআইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তলানিতে ঠেকেছে।একথা স্বীকার করেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা থেকে শুরু করে দেশের…

5 hours ago

নিয়োগ দুর্নীতিতে সীমা ছাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঘুমে সরকার।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-অবশেষে বেকার বিক্ষোভের চাপে ফের চাকরির পরীক্ষার দিনক্ষণ ঘোষণা করতে বাধ্য হলো ত্রিপুরা…

5 hours ago