এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়োতে দেখা গেছিল, চট্টগ্রামে বা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উপরে কেউ একটি ছোট গেরুয়া পতাকা লাগিয়ে দিয়েছে। সত্য-মিথ্যা দেবা ন জানন্তি, তবে ওই ভিডিয়োর সূত্র ধরেই বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র হিসাবে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহের মামলা করে ফিরোজ খান নামে স্থানীয় এক বিএনপি নেতা। তিনি মামলা করার পরের দিনই বিএনপি ফিরোজ খানকে বহিষ্কার করে ঘটনা থেকে দূরত্ব রচনা করে। কিন্তু ফিরোজের অভিযোগের মামলাতেই চট্টগ্রাম ম্যাজিস্ট্রেট আদালত হিন্দু সন্ন্যাসীকে জেল হেফাজতে পাঠান। আইন সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান থাকা ব্যক্তিই জানেন, সরকার ছাড়া কেউ কারও বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করতে পারে না। আদালতে পত্রপাঠ এই মামলা খারিজ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। হয়নি, উল্টে হিন্দু সন্ন্যাসীকে আরও এক মাসের জন্য পাঠানো হয়েছে চট্টগ্রামের জেলে। বাকিটা অলমিতি বিস্তারেণ।
গত আগষ্টে বাংলাদেশ তথাকথিত দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর, এক ধরনের ডিজিটাল মিথ্যার অন্ধত্ব বাংলাদেশের স্মার্টফোন-পুষ্ট যুব প্রজন্মকেও নিঃশব্দে গ্রাস করে চলেছে। ভারতকে খাটো দেখানোর তাগিদ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে সমাজ মাধ্যম জুড়ে ভাইরাল শুধু বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)- এর সামনে, ভারতের জাতীয় পতাকার আদলে আঁকা একটি নকশা, যাকে পা দিয়ে মাড়িয়ে যাওয়া আসা করছে সে দেশের ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক, কর্মীরা। এই ভিডিও বানানো, যে নামেই তারে ডাকো- স্বঘোষিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর বা আধেয় নির্মাতারা যে ‘ফ্যাক্ট চেক’ তথা ঘটনার সত্যাসত্যের তোয়াক্কা না করে শুধু সমাজের মগজ থেকে ‘ডোপামাইন’ ক্ষরণ করিয়ে বৃহত্তর জনসমাজকে উদ্দীপিত করতে চান, অতিসম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর একটি গবেষণা প্রতিবেদন তা আমাদের জানিয়েছে। এই গবেষণা জানিয়েছে, দুই-তৃতীয়াংশ আধেয় নির্মাতা নিজেদের তথ্যের সত্য যাচাই (ফ্যাক্ট চেক) না করেই ভিডিও পোস্ট করেন। এই প্রতিবেদন তৈরি করতে ইউনেস্কো ৪৫টি দেশ ও অঞ্চলের ৫০০ আধেয় নির্মাতার উপর সমীক্ষা চালিয়েছিল। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া আধেয় নির্মাতাদের প্রতি দশজনের মধ্যে ছয়জন বলেছেন, সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করার আগে তারা তাদের কনটেন্টের সত্যাসত্য যাচাই করেননি। গবেষণায় ইউনেস্কো দেখেছে, আধেয় নির্মাতারা সরকারী নথিপত্র ও ওয়েবসাইটের মতো কর্তৃপক্ষীয় সূত্রগুলি ব্যবহার করেন না, তার বদলে নিজেদের মতামত চাপিয়ে দেন। ‘ইনফ্লুয়েন্সার’দের কাছে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সাধারণ সূত্র হলো, ‘ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা’।আর ভ্রান্ত সেই অভিজ্ঞতালব্ধ কৃষ্ণাতরে বেবাক হারিয়ে যাচ্ছে সভ্যতার ন্যূনতম বিধান।
এই ধরনের রিল-নির্মাতা, বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে ভিডিয়োর মাধ্যমে যে পণ্যটিকে সবচেয়ে বেশি বিক্রি করে চলেছেন, তার নাম ঘৃণা। রাজনৈতিক ঘৃণা। ইটকাঠের দুনিয়ার ঘৃণার বেসাতিকেই ইন্টারনেটে পণ্য করে তুলেছেন এরা। বর্তমানে বাংলাদেশে যে সংখ্যালঘু হিন্দু নিপীড়ন শুরু হয়েছে, তার পিছনে অন্যতম ‘অবদান’ মিথ্যার বেসাতি এই ধরনের অজস্র ভিডিয়োর। ইসলামি মৌলবাদের অন্ধতা, তার সঙ্গে ভারত বিরোধিতার মিশেলে হিংসাকে প্রশ্রয় দিয়ে, যেন সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ভাষণের তুবড়ি ছুটছে। নেট-মাধ্যমে এদের বিপুল সাবস্ক্রাইবার। ফলে ধরে নিতেই হবে, বিরাট জনগোষ্ঠীর কাছে নিজের মনোভাব ও বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে তাদের।পক্ষান্তরে, ঘৃণার চাহিদা না থাকলে এই ধরনের ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ ভিডিও এত লোকের ‘খাদ্য’ হতো না। যেহেতু প্রায় সব জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যমের সদর দপ্তর বিদেশের মাটিতে, তাই ‘বাজার চলে যাবে’ ভয়ে সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল কর্তৃপক্ষ সহজে পদক্ষেপ করেন না। গোটা বিশ্ব আজ ‘ডিজিটাইজড’।হাতের মুঠো! থাকা মোবাইলে চোখ রেখেই বড় অংশের মানুষ যাবতীয় তথ্য জানতে চান। আগে মানুষের কাছে তথ্য জানার একটাই মাধ্যম ছিল, সাদা পাতায় মুদ্রিত কালো অক্ষর। জামানা পাল্টেছে, পাল্লা দিয়ে স্ফীত হয়েছে ঘৃণার বাজার।
অধুনা বাংলাদেশে ভাইরাল হওয়া ভিডিও মানেই সেখানে ভারতের প্রতি,হিন্দুদের প্রতি, রবীন্দ্রনাথের প্রতি ক্রমাগত বিদ্বেষ ধ্বনিত হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের উপর উৎপীড়ন চলছে,মন্দির ভাঙা হচ্ছে।ক্রুদ্ধ জনতার আচরণের আতিশয্যের কথা মনে রেখেই বলতেই হয়, এই বিদ্বেষ আদতে গণতন্ত্রবিরোধী মৌলবাদী ধর্মমোহের একটি চেনা ধারা। ধর্মনিরপেক্ষতার খাতিরে ইসলামি মৌলবাদের ব্যাপকতাকে ছোট করে দেখাটা কেবল ভুল নয়, আত্মঘাত। কারণ, শেষপর্যন্ত তা হিন্দু মৌলবাদের হাতও শক্ত করে। তবে আমরা একই সঙ্গে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সবাই এক রকম নয়। সবাই ধর্মান্ধ, মৌলবাদী অথবা ভারতবিরোধী নয়।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে মৃত্যু ঢাকুরিয়ার যাত্রীর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-হাওড়া থেকে পুরী যাচ্ছিলেন ঢাকুরিয়ার হিমাদ্রি ভৌমিক (বয়স ৫৭)। পথেই বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে…

12 hours ago

পাকিস্তানে ৪৮ ঘণ্টায় ২০ বার ভূকম্প!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রবিবার রাত থেকে কুড়িবার কেঁপে উঠে পাকিস্তানের বৃহত্তম শহর করাচি। রিখটার স্কেলে কম্পনের…

12 hours ago

ভয়াবহ বন্যায় ১৪ জনের মৃত্যু অসমে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বন্যায় ভয়াবহ অবস্থা উত্তর-পূর্ব ভারতে। টানা বৃষ্টির কারণে বিপর্যস্ত অসম। সূত্রে খবর, ভয়াবহ…

14 hours ago

কুম্ভে মৃ*ত্যু হয়েছিল ৫০–৬০ জনের’ পদপিষ্টে ১১ জনের মৃ*ত্যুর পর সিদ্দারামাইয়ার বক্তব্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পদপিষ্টে ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনাতে কর্নাটকে কংগ্রেস সরকারের দিকে তোপ দেগে দিয়েছেন বিজেপি।…

15 hours ago

পদপিষ্টে মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ্যের আর্থিক সাহায্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বুধবার বেঙ্গালুরুতে আরসিবি টিমের বিজয়োৎসব চলছিল স্টেডিয়ামের ভেতরে। সেই অনুষ্ঠান উপভোগ করতে আরসিবি…

16 hours ago

আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়নে লন্ডনে মৌ স্বাক্ষর: প্রদ্যোত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের উপজাতি জনসমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে ভারত সরকার। দেশের সরকারের নির্দেশিত…

16 hours ago