ডেঙ্গুর লালচোখ

 ডেঙ্গুর লালচোখ
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

গোটা রাজ্যে এখনো তেমনভাবে না ছড়ালেও ত্রিপুরায় কিছু কিছু স্থানে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বাড়ছে। পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক না হলেও,ডেঙ্গু যাতে কোন ভাবেই বাঁধনহারা হয়ে আতঙ্কের কারণ না হয়ে দাঁড়ায় সেই দিকেই প্রশাসন ও নাগরিকদের সর্বাগ্রে নজর দিতে হবে। যদিও এখনও পর্যন্ত একমাত্র সিপাহিজলা জেলা থেকেই ডেঙ্গ আক্রান্ত রোগীর খবর পাওয়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। বেসরকারী খবর হলো শুধু একা সিপাহিজলা নয়, পশ্চিম জেলারও ইতস্তত বিক্ষিপ্ত কিছু নতুন এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়ানোর আশঙ্কার খবর আসছে। রাজ্যের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর পৌরোহিত্যে উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক মহাকরণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্য সচিব, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে রাজ্যের ডেঙ্গুজনিত সর্বশেষ সার্বিক পরিস্থিতি এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রশাসনের তরফে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সেই পদক্ষেপ সমূহ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। বৈঠকে শেষে সাংবাদিক সম্মেলন থেকে স্বাস্থ্য দপ্তরের গৃহীত সমস্ত পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করা হয়। এখনো পর্যন্ত সরকারী হিসেব মতো রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১৫৭ বলা হলেও বেসরকারীভাবে সংখ্যাটা অনেকটাই বেশি। স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্যই বলছে জিবি হাসপাতালে এখন ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩৫ জন রোগী চিকিৎসিত হচ্ছেন। সোনামুড়া মহকুমার ধনপুর, কাঁঠালিয়া, বিশালগড়, কাঞ্চনমালা, মোহনপুর মূলত এই সমস্ত এলাকা থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর হদিস পাওয়া যাচ্ছে। সিপাহিজলা ও পশ্চিম জেলার বিভিন্ন সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলগুলোতে, বিশেষ করে রাবার বাগান এলাকাগুলো থেকেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের খবর বেশি আসছে।ডেঙ্গু নিয়ে অযথা আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন না হয়ে ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণের দিকেই বেশি মনোযোগ দেওয়া জরুরি। কারণ ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে এখনও যেহেতু ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি, তাই সচেতনতা ও নিজেদের সুরক্ষার বিষয়টিই সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে। সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে পরিবেশ পরিচ্ছন্নতার দিকে। যেহেতু বর্ষার এই সময়টুকুতেই ডেঙ্গুর দাপাদাপি শুরু হয় বেশি। তাই বৃষ্টির জল যেন বাড়ির মধ্যে ও বাড়ির আশপাশে, ছাদ-বাগানে কিংবা ফুলের টবের নীচে পাত্রে জমতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ জমা জলেই জন্ম নেয় ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহনকারী এডিস মশা। সাধারণত বলা হয়, এই মশা দিনের বেলা এবং দিনের আলোতেই কামড়ায়। তা সত্ত্বেও সর্বক্ষণই এই মরশুমে প্রয়োজন সতর্কতা ও সচেতনতা। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মূলত এই সময়টুকুতেই বাতাসে আর্দ্রতা, শুষ্ক ও আর্দ্র তাপমাত্রার কারণে এডিস মশার লার্ভার বংশ বিস্তারের জন্য আদর্শ। তাই ঘুমোনোর সময় মশারি ব্যবহার সহ যথাসম্ভব ঘরে মশা নিরোধ ওষুধ ও ধুপকাঠি ব্যবহার করা আদর্শ । একই সঙ্গে জ্বর, বমিভাব, মাথাব্যথার মতো লক্ষণগুলোতে সতর্ক থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ জরুরি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আগরতলা পুর নিগমকে আরও অনেক বেশি কার্যকরী ও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া জরুরি। প্রায়শই দেখা যায়, রাজধানী আগরতলা শহর এবং শহর সংলগ্ন জনবহুল বাসস্থানগুলোর আশপাশ এলাকায় বেশ কিছু ফাঁকা জমি পরিত্যক্ত অবস্থা পড়ে থাকে। আগাছা ও জঙ্গলাকীর্ণ ওই জমিগুলো ক্রয় করে ফেলে রাখলেও ক্রেতারা সেগুলো পরিস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন না। বৃষ্টির জল এই অপরিচ্ছন্ন-পরিত্যক্ত বাড়িগুলোতে জমে মশার বংশবিস্তারে আদর্শ স্থান হয়ে উঠে। পুর নিগমকে ওই পরিত্যক্ত স্থানগুলো পরিষ্কার সহ এর প্রকৃত মালিকদের জরিমানার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু রাস্তার পাশে নালা নর্দমা ও জমে থাকা জল পরিষ্কার করলেই মূল সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে না। বর্তমানে সময়ে শহরে ও আশেপাশের এলাকায় প্রায় বেশির ভাগ বাড়িতেই এসি এবং ফ্রিজ ব্যবহার করা হয়। সেক্ষেত্রে কোন ভাবেই যাতে এর থেকে জল জমতে না পারে সে বিষয়টি পুর নিগম মাইকে জন সচেতনতার জন্য নাগরিকদের সতর্ক করতে পারে সেই দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। জনসচেতনতার উপর স্বাস্থ্য দপ্তর এবং পুর নিগমের বিশেষ প্রচারাভিযান সংগঠিত করা যেতে পারে। জেলা প্রশাসনকে জোর কদমে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিপন্ন এলাকায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতার কাজ চালিয়ে যেতে হবে।যদিও আশার কথা হল, রাজ্যে বর্তমানে ডেঙ্গুর যে ধরনের ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে তাতে উদ্বেগের কোন কারণ নেই। কিন্তু তাই বলে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসও বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। তাই প্রতিরোধ যেহেতু সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে যথাসম্ভব প্রশাসনিক সতর্কতা ও নাগরিকদের সচেতনতাই এই মুহূর্তে ডেঙ্গু থেকে নিরাপদ থাকার অন্যতম মন্ত্র হওয়া উচিত।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.