ডেমু ট্রেনে নিত্যদিনের দুর্ভোগে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।

 ডেমু ট্রেনে নিত্যদিনের দুর্ভোগে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- ডেমু ট্রেন রেলযাত্রীদের কাছে দুর্ভোগের আরেক নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের তথা লোক্যাল এই ট্রেনে নিত্য নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। জানা গেছে, এর পেছনে বহু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ও প্রধান কারণ সারাদিনে অত্যন্ত কম সংখ্যক ডেমু ট্রেন চলাচল করছে। আগরতলা – সাব্রুম – আগরতলা এবং আগরতলা – ধর্মনগর – আগরতলা দুই দিকেই ডেমু ট্রেনের সংখ্যা তিনগুণ করার দাবি দীর্ঘদিনের।পাশাপাশি দাবি রয়েছে উভয় দিকে ডেমু ট্রেনের কোচের সংখ্যা বৃদ্ধির।তাছাড়া নিয়মিত ও যথাযথভাবে ডেমু ট্রেন সাফাই করা হয় না। এমনই অভিযোগ ভুক্তভোগী যাত্রীদের। এর মূলে রয়েছে ডেমু ট্রেনের রেকের স্বল্পতা। একই সঙ্গে আগরতলা ছাড়া অন্য কোথাও এই ট্রেনের সংস্কার এবং সাফাইয়ের কোনও পরিকাঠামো নেই।এসব কারণে ডেমু ট্রেনের যাত্রীদের নানা সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। এর মধ্যে সম্প্রতি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রেনের অপরিচ্ছন্নতা। ডেমুর নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এর প্রায় পুরো অংশ অপরিচ্ছন্ন থাকে। মেঝে থেকে শুরু করে এর উপরিভাগ পর্যন্ত নোংরা আবর্জনাযুক্ত অবস্থায় থাকে। এর বসার আসন ছাড়া প্রায় কোনও অংশই পরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে না বলে নিত্যযাত্রীদের বক্তব্য।কোনও কোনও দিন পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ হয়ে পড়ে। দুর্গন্ধে ট্রেনে টেকা দায় হয়ে দাঁড়ায় যাত্রীদের। আর ডেমুর শৌচাগার ব্যবহারের তো কোনও উপায়ই প্রায় থাকে না। ভুলক্রমে কোনও যাত্রী শৌচাগারের দরজা খুললে পুরো ট্রেনময় ছড়িয়ে পড়ে উৎকট গন্ধ। এই ট্রেনে শৌচাগারের কাছের আসনে বসা অথবা দাঁড়িয়ে গেলেও দিতে হয় কঠিন ধৈর্যের পরীক্ষা।এমতাবস্থায় যাত্রীদের তরফে ডেমু ট্রেন নিয়মিত ও যথাযথভাবে সাফাই করার দাবি উঠেছে।একই সঙ্গে নতুন করে আগরতলা – সাক্রম- আগরতলা,আগরতলা – ধর্মনগর – আগরতলার উভয় দিকে ট্রেনে সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়ানোর দাবি উঠেছে। নিত্যযাত্রীদের বক্তব্য, শেষ কবে ডেমু ট্রেনের কোচ যথাযথভাবে সাফাই করা হয়েছে বলা শক্ত। বিশেষত এর শৌচাগারের অবস্থা তো কহতব্য নয়। শৌচাগার ব্যবহার দূরে থাক, এর দরজা খোলার কথাই নিত্যযাত্রীরা মাথায় আনতে চান না। এর উপর উভয় দিকে ডেমু ট্রেনে ভিড় হয় মাত্রাছাড়াভাবে। ফলে আগরতলা, সাক্রম, ধর্মনগর অথবা করিমগঞ্জের যেখান থেকে ট্রেন ছাড়ে সেখানেই এর আসন পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বহু যাত্রী বাধ্য হন ট্রেন যাত্রার শুরু থেকে। সেই ক্ষেত্রে পরবর্তী স্টেশনে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের অবস্থা অনুমেয়।ডেমু ট্রেনে বসার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সফর করার ব্যবস্থা রয়েছে।এর জন্য ট্রেনের কোচের উপরের দিকে যাত্রীদের ধরে দাঁড়ানোর জন্য বহু হাতল দেওয়া রয়েছে। অভিজ্ঞ ও নিত্যযাত্রীদের কাছে এই বিষয়টি পুরোপুরি জানা। এ কারণে নিত্যযাত্রীদের অনেকেই ডেমু ট্রেনে দাঁড়িয়ে আসা-যাওয়া করায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে নিত্যযাত্রীদের বক্তব্য ভিন্ন। তারা মনে করেন ট্রেনে দাঁড়িয়ে সফর করা মানে চিড়ে চ্যাপটা হওয়া নয়। অথচ ত্রিপুরাতে প্রায় আক্ষরিক অর্থেই ডেমু ট্রেনের যাত্রীদের প্রতিদিন চিড়ে চ্যাপটা হতে হচ্ছে। ট্রেনে নড়াচড়ার উপায় পর্যন্ত কার্যত থাকছে না। সপ্তাহের প্রথম ও শেষ দিন তো অবস্থা আরও কাহিল হয়ে পড়ে।
আগরতলা-সাক্রম-আগরতলার মধ্যে দৈনিক তিন জোড়া ডেমু ট্রেন রয়েছে। এই দিকে ট্রেনের কোচের সংখ্যা ট্রেনের দুই দিকের দুইটি ইঞ্জিন সহ মোট আটটি। প্রতিটি ট্রেনেই কোচের স্বল্পতার জন্য ঠাঁই নাই ঠাই নাই অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়।আগরতলা-ধর্মনগর-আগরতলা এবং আগরতলা-করিমগঞ্জ-আগরতলার মধ্যে দৈনিক এক জোড়া করে ডেমু ট্রেন রয়েছে। এদিকে ট্রেনের মোট কোচ থাকে দুইদিকে দুইটি ইঞ্জিন সহ মোট দশটি।ট্রেন ও কোচের অপ্রতুলতার কারণে উল্লেখিত সব দিকেই ট্রেনের ভেতর পা রাখা দায় হয়ে দাঁড়ায়। কারণ ট্রেন ও কোচের সংখ্যার তুলনায় সব দিকেই যাত্রী চাপ অত্যন্ত বেশি। তার সঙ্গে অপরিচ্ছন্নতা ও দুর্গন্ধ যুক্ত হওয়ায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
২০১৯ সালের চার অক্টোবর আগরতলা-সাক্রম-আগরতলা এবংআগরতলা-ধর্মনগর-আগরতলার উভয় দিকে শুরু হয় ডেমু ট্রেন চলাচল। সম্প্রতি এক জোড়া ডেমু ট্রেন আগরতলা-ধর্মনগর-আগরতলার পরিবর্তে আগরতলা- করিমগঞ্জ-আগরতলার মধ্যে চলাচল শুরু হয়েছে।ধর্মনগরের পরিবর্তে আসামের করিমগঞ্জ জংশন স্টেশন পর্যন্ত ডেমু ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় যাত্রী দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। কেননা করিমগঞ্জ পর্যন্ত ডেমু ট্রেনের চলাচল শুরু হলেও বাড়েনি এর কোচের সংখ্যা। মোটেও বাড়েনি আগরতলা-ধর্মনগর-আগরতলার মধ্যে লোক্যাল ট্রেন হিসাবে ডেমু ট্রেনের সংখ্যা। অথচ রাজ্যে ডেমু ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার সময় উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের তরফে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধির আশ্বাস দেওয়া হয়। বলা হয় ধাপে ধাপে অন্তত প্রতি এক ঘন্টা অন্তর উভয় দিকে ডেমু ট্রেন চলাচল করবে বলে।তারপর প্রায় পাঁচ বছরে পা দিতে চলে ডেমু ট্রেন। এর মধ্যে বাড়েনি ট্রেনের সংখ্যা। এক ঘন্টা অন্তর অন্তর ডেমু ট্রেন চলাচলের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বাড়েনি এর পরিষেবার মান। ফলে কোনও কারণে একটি ট্রেন ধরতে না পারলে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ প্রায় ছয় ঘন্টা।আগরতলা-ধর্মনগর-আগরতলার ক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে হয় আরও অনেক বেশি সময়। এ কথা মাথায় রেখে যাত্রীরা বাধ্য হয় ডেমু ট্রেনে চাপতে। এদিকে, আগরতলা ছাড়া অন্য কোথাও ডেমু ট্রেন সংস্কার ও সাফাইয়ের সুবিধা এবং সুযোগ নেই। এতে ক্রমান্বয়ে ডেমু ট্রেন আবর্জনা পূর্ণ হতে থাকে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে যাত্রী দুর্ভোগ। তার উপর আগরতলা স্টেশনে ডেমুর দুইটি রেক ছাড়া অতিরিক্ত কোনও রেক প্রায় থাকেই না। এ কারণেও বাড়ছে যাত্রী দুর্ভোগ। দৈনিক এক ঘন্টা অন্তর ট্রেনের জন্য বাড়াতে হবে রেখের সংখ্যা। কমবে যাত্রী দুর্ভোগও।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.