ড্যামেজ কন্ট্রোল !

 ড্যামেজ কন্ট্রোল !
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আচমকাই বৃহস্পতিবার রাত দশটায় রাজবাড়ির অন্দরমহলে গিয়ে হাজির হলেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা। দেখা করলেন তিপ্রা মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণের সাথে। দুজনে হাসিমুখে করমর্দন করলেন। সামনা সামনি বসে দুজনে কিছুক্ষণ কথা বললেন। এরপর যথারীতি মুখ্যমন্ত্রী রাজবাড়ির অন্দরমহল থেকে বেরিয়ে এলেন। মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা রাত দশটায় রাজবাড়িতে গেছেন – এই খবর ততক্ষণে সংবাদমহলে পৌঁছে গেছে।খবর পেয়ে সাংবাদিকরাও রাজবাড়ির গেটে পৌঁছে যান।মুখ্যমন্ত্রী সাক্ষাৎপর্ব শেষে গাড়িতে উঠতে উঠতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যা বললেন,তার মূল নির্যাস হচ্ছে, ‘প্রদ্যোত কিশোর অসুস্থ – এই কথা শোনার পরই তিনি তার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে এসেছেন। এছাড়া আর অন্য কিছু নয়।’মুখ্যমন্ত্রী প্রয়োজনে যেকোনও সময়,যে কারোর সাথেই দেখা করতে পারেন। তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে পারেন। এ নিয়ে দোষের কিছু নেই, বা এ নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা করা অথবা গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।তবে এক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারে হালকাভাবে নেওয়া যাচ্ছে না। কেননা, এর পিছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত,প্রদ্যোত কিশোর আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েননি।দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অসুস্থ। তার অসুস্থতার খবর নতুন নয়। গোটা রাজ্যবাসী তার অসুস্থতার খবর জানে।প্রদ্যোত কিশোর নিজেও বহুবার নিজের মুখে তার অসুস্থতার কথা বলেছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, সবাই জানেন – অথচ মুখ্যমন্ত্রী তার অসুস্থতার কথা জানেন না? এতদিন তার স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর মনে হয়নি? তাহলে এতদিন পর কী এমন জরুরি প্রয়োজন হয়ে পড়লো যে, রাত দশটায় প্রদ্যোত কিশোরের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহাকে রাজবাড়ির অন্দরমহলে যেতে হলো?রাজনৈতিক তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে, গত তিনদিন ধরে ‘মহারাজ’
নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে যে জলঘোলা হচ্ছিল এবং পাহাড়ে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছিলো, সেই মন্তব্য সামাল দিয়ে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতেই মুখ্যমন্ত্রীকে প্রদ্যোতের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগে কতটা ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ হয়েছে বা হবে, তা অবশ্য আগামীদিনেই স্পষ্ট হবে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ‘মহারাজ’ নিয়ে জল যে বেশ ভালোভাবেই ঘোলা হয়েছে তা কিন্তু ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তার এই মন্তব্যের জল দিল্লী পর্যন্ত গড়িয়েছে বলে খবর। খোদ দলের মধ্যেই এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। এমনিতেই গোষ্ঠী বিবাদে জর্জরিত দল।যার প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে দলের রাজ্য কার্যকারিণী বৈঠকেও।এই ক্ষোভ বিক্ষোভ নিয়ে এমনিতেই রাজ্য রাজনীতি সরগরম।এর মধ্যে ‘মহারাজ’ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে উথালপাথাল শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি স্লোগান ওঠা থেকে শুরু করে তার কুশপুতুল পোড়ানো,বিভিন্ন মহল থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোলাটে হয়ে উঠছিলো।দলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীও সরাসরি এর বিরোধিতা করে বলেন, “যিনি এমন মন্তব্য করেছেন সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত – দলের বক্তব্য নয়। দল রাজাদের সম্মান করে।’ এরপর মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বিষয়টিকে হালকা করার চেষ্টা করে বলেন, ‘রাজাদের আমরা সম্মান করি। উনার সাথেও (প্রদ্যোত) আমার সম্পর্ক ভালো’ ইত্যাদি বলেছেন। কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ যে হয়েছে তা মনে করার কারণ নেই। কাজ হয়নি বলেই মুখ্যমন্ত্রীকে রাত দশটায় আচমকা স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়ার অছিলায় রাজবাড়িতে যেতে হয়েছে-এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক তথ্যাভিজ্ঞ মহল। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, এই সাক্ষাতে কতটা ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ হলো?

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.