এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় ফিরলে ভারতের বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি করে তোলার স্বপ্ন ফেরি করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।তিনি দাবি করেছেন, ২০৪৭ সালে ভারত হবে উন্নত তথা ‘বিকশিত’ দেশ।এ-হেন প্রচারে যে সারবত্তা কম,সেকথা গত পরশু হায়দ্রাবাদে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর ডি সুবারাও।তিনি বলেছেন, ২০২৯ সালের মধ্যে যদি বা সেই লক্ষ্য পূরণ হয়,তবু গরিব দেশই থেকে যেতে পারে ভারত।ফলে এই নিয়ে উৎসব উদযাপন মেতে ওঠার সঙ্গত কারণ নেই।বরং জিডিপি বৃদ্ধির চাকায় গতি আনা এবং আর্থিক সুবিধার ভাগ সকলের মধ্যে বন্টনের বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি।
ধনি দেশ মানেই যে উন্নত হবে, তার কোনও মানে নেই, সৌদি আরব তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।২৬০০ ডলার মাথা পিছু আয় নিয়ে বিশ্বের দরবারে ভারতের বর্তমান অবস্থান ১৩৯।এমনকি ব্রিকস এবং জি- ২০ গোষ্ঠীতেও আমাদের দেশ দরিদ্রতম।
প্রচলিত প্রবাদেই আছে, শরীরের রক্ত মুখে সঞ্চারিত হলে তাকে সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ বলা যায় না।ভারতের বৃদ্ধি এবং অগ্রগতির সুফল যে সাধারণ এবং স্বল্প বিত্তের মানুষেরা পাচ্ছেন না এবং এর ফলেই যে দেশের আর্থিক বৈষম্য বাড়ছে,বহু অর্থনীতিবিদ তা নিয়ে সতর্ক করেছেন। শ্রীরাও বলেছেন, ‘আমরা বড় অর্থনীতি, কারণ আমরা ১৪০ কোটি মানুষের দেশ।উৎপাদনে যাদের ভূমিকা রয়েছে।কিন্তু আমরা এখনও গরিব দেশ।উন্নত দেশ হতে গেলে চারটি উপাদান আবশ্যিক- আইনের শাসন, মজবুত রাজ্য, দায়িত্ব এবং স্বাধীন প্রতিষ্ঠান।
তবে বিরুদ্ধ-মত বলে, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি যেমন দারিদ্র কমায়, তেমনই অসাম্য বাড়ায়।কারণ বৃদ্ধির ফলে অর্থনৈতিক সুযোগের যে প্রসার হয়,তার সদ্ব্যবহার করার ক্ষমতা বিত্তবান শ্রেণির বেশি।অতএব, বৃদ্ধি চাইলে অসাম্যকেও মেনে নিতে হবে। বৃদ্ধির কারণে অর্থনৈতিক সুযোগের বিস্তার হয়, শ্রমের বাজারে মজুরি ও আয় বাড়ে, বাড়ে রাজকোষের আয়তন, তা নানা জনকল্যাণমূলক নীতির উপরে ব্যয়ের ক্ষমতা বাড়ে।তাই শুধু অসাম্যের বৃদ্ধির দিকে তাকিয়ে উদারীকরণ- পূর্ব জামানার প্রতি স্মৃতিমদুরতায় ভুগলে চলবে না।তবে গত কয়েক বছরে ভারত যে ক্রমেই ধণিদের বসবাসের দেশ হয়ে উঠেছে, গত মাসে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে তা দেখিয়েছেন অর্থনীতিবিদ তোমা পিকেটি এবং তার সহ গবেষক নীতিন কুমার ভারতী, লুকাস চ্যান্সেল, এবং আনমোল সোমাঞ্চি।তারা দেখিয়েছেন,গত এক শতকের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে অসাম্যের মাত্রা শুধু সর্বাধিক নয়, সারা বিশ্বের নিরিখেও ভারত এখন অসাম্যের নিক্তিতে একদম প্রথম সারিতে।একশো কোটি ডলারের মালিকের সংখ্যা ১৯৯১ সালে ছিল এক, ২০২২ সালে হয়েছে ১৬২।দেশে বিলিয়নেরা বা একশো কোটি ডলারের অধিক সম্পদের মালিকের সংখ্যা ২০২০ থেকে ২০২২ সালে মধ্যে বেড়েছে ষাট শতাংশেরও বেশি।১০২ থেকে ১৬৬ জন।২০১২ থেকে ২০২১ সাল অবধি দেশে যত সম্পদ সৃষ্টি হয়েছে, তার ৪০.৫ শতাংশ মাত্র এক শতাংশ ধনীতম মানুষের কুক্ষিগত হয়েছে।আর অন্যদিকে, দরিদ্রতম ৫০ শতাংশ মানুষের ভাগ পড়েছে এই সময়ে সৃষ্টি সমাদের মাত্র তিন শতাংশ।
অতএব, অসাম্যের ছবিটি ভয়াবহ অনেকে বলতেই পারেন, মানুষের মেধা, কর্মদক্ষতা বা অন্যান্যগুণের মতো আয় বা সম্পদের অসাম্যও অন্তত খানিকটা মাত্রায় স্বাভাবিক এবং তা মেনে নেওয়াই দস্তুর।এ দেশে সম্পদের উপরে কর তুলে দেওয়া হয়েছে ২০১৬সাল থেকে।দেশে জিএসটি বাবদ মোট যত কর আদায় করা হয়,তার ৪৬ শতাংশ আসে দেশের দরিদ্রতম ৫০ শতাংশ মানুষের পকেট থেকে।আর মোট জিএসটি আদায়ের মাত্র চার শতাংশ আসে ধনীতম দশ শতাংশ মানুষের থেকে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ধনীদের আয় যেভাবে বেড়েছে, লগ্নির প্রবণতা ততখানি বাড়েনি।২০১৯ সালে কেন্দ্র কর্পোরেট করের পরিমাণ বহুলাংশে কমিয়ে দেয়।তার ফলে বাজেটে যত রাজস্ব লোকসান হয়েছিল, তা ছিল দেশের মোট স্বাস্থ্য বাজেটের অর্ধেক।ফলে, আগে অসাম্য কমানোর কথা ভাবতেই হবে।নচেৎ তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি কিন্তু আখেরে ঢক্কানিনাদেই পরিণত হবে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

অর্থনীতির হাল-হকিকত

২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের প্রথম সাত মাসে প্রত্যক্ষ বিদেশি পুঁজি (ফরেন ডাইরেক্ট ইনথবর্ষের প্রথ বা এফডিআই) যা…

13 hours ago

রোমান লিপিকে স্বীকৃতির দাবিতে টি,এস,এফ এর বিক্ষোভ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-দীর্ঘদিন ধরে টি,এস,এফ দাবি করে আসছে রোমান লিপি কে স্বীকৃতি দেওয়ার।বর্তমানে যে প্রশ্নপত্র…

13 hours ago

কেন্দ্রীয় রিপোর্টে প্রকাশ্যে এলো ত্রিপুরার শিক্ষার বেআব্রু চেহারা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয়শিক্ষা মন্ত্রকের সর্বশেষ রিপোর্ট এও ফুটে উঠলো ত্রিপুরার স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার বে-আব্রু চেহারা।…

13 hours ago

ত্রিপুরাকে শ্রেষ্ঠ রাজ্য বানাচ্ছে বিজেপি সরকার: সুশান্ত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-প্রধানমন্ত্রীনরেন্দ্র মোদি সবকা সাথ সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াসের স্লোগান দিয়েছেন। আর…

13 hours ago

নি:শব্দে এগোচ্ছে চিন!!

প্রতিবেশী বাংলাদেশে গত ছয়মাস ধরে চলতে থাকা অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একেবারে নিঃশব্দে এগিয়ে…

2 days ago

নেতা-মন্ত্রীদের বারবার ঘোষণা সত্ত্বেও গ্রুপ ডি নিয়োগ হচ্ছে না!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা করছে না সরকার। জেআরবিটির মাধ্যমে গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ নিয়ে টালবাহানা…

2 days ago