তাৎপর্যপূর্ণ মোড়

 তাৎপর্যপূর্ণ মোড়
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে শ্রমজীবী মানুষের দ্বারা সংগঠিত সবচেয়ে বড় এবং দীর্ঘস্থায়ী গণ আন্দোলন ছিল দিল্লীর কৃষক আন্দোলন। কৃষকদের এই সংগ্রাম বিভিন্ন কারণেই ছিল ঐতিহাসিক। টানা ৩৮৩ দিন সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতৃত্বে আন্দোলন চালিয়ে কৃষকরা ২০২১ সালের ১৯ শে নভেম্বর মোদি সরকারকে তিনটি ‘কালা” কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিলেন।সেই বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রবিবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পালন করা হলো কৃষকদের বিজয় দিবস।কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসের শেষে দিল্লীর সিংঘু, টিগরি, গাজীপুর সীমান্তে দেশব্যাপী ঐতিহাসিক আন্দোলনে শামিল হয়েছিল প্রায় ৪২টি কৃষক সংগঠন।

প্রবল শীতের কামড় সহ্য করে। অনাহারে মৃত্যুবরণ করেও এই কৃষকরা প্রতিবাদের রাস্তা থেকে পিছু হটেননি।পাঞ্জাব,হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ,রাজস্থান সহ বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকরা আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে রোদে পুড়ে,জলে ভিজে, শীতের কামড়ে তারা ঠাঁই রাস্তার উপরে বসেছিলেন বছর ধরে।দীর্ঘ আন্দোলনের সুফল হিসেবে তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে সরকারকে বাধ্য করেছিলেন কৃষকরা।এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল সংযুক্ত কিষান মোর্চা।যার নেতা হিসাবে সামনে উঠে এসেছিলেন রাকেশ টিকায়েত। কৃষি আইন প্রত্যাহার হলেও রাস্তা থেকে উঠেননি আন্দোলনকারীরা।

thebridgechronicle_2021-02_38558b6d-f736-4229-a8cf-0e96f23540fa_BC_Article_Banner__10_

কৃষক ও ক্ষেত মজুরদের লাগাতর বিক্ষোভের মুখে ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর মোদি সরকার আন্দোলনকারীদের লিখিত আশ্বাস দেয়, সংযুক্ত কিষান মোর্চার প্রতিনিধিত্বে মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইজআইন প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে।পাশাপাশি অন্য সব দাবিগুলো পূরণ করার ব্যাপারেও আশ্বাস দিয়েছিলেন কেন্দ্রের এনডিএ সরকার।সেই আশ্বাসের ভিত্তিতে দিল্লীর সীমান্তে আন্দোলনকারীরা তাদের অবস্থান বিক্ষোভ স্থগিত রাখে।আন্দোলনকারীদের তরফে ১১ ডিসেম্বর আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয় এবং তারপর তারা দিল্লীর সীমান্ত খালি করে দেয়। আন্দোলনকারীদের দাবি, এই কৃষক আন্দোলনে অংশ নিয়ে ৭৩৪ জন সংগ্রামী কৃষক আত্মবলিদান করেছেন।

এই শহিদ কৃষকদের জন্যও উপযুক্ত মর্যাদা ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিলেন সংযুক্ত কিষান মোর্চা। আন্দোলন প্রত্যাহারের ১ বছর কেটে যাওয়ার পর এবং আন্দোলনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির মধ্যেই ফের জেগে উঠছে কৃষকদের অসন্তোষ। অভিযোগ উঠছে আন্দোলন ঠেকাতে কেন্দ্রীয় সরকার বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কিছুই পূরণ হয়নি। কিষান সভার বক্তব্য ফসলের ন্যায্যমূল্য এখনও নিশ্চিত করেনি কেন্দ্রীয় সরকার।লখিমপুর খেরিকাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্রকেও অপসারণ করা হয়নি। কৃষক আন্দোলনে যেসব কৃষকরা মারা গিয়েছেন তাদেরও শহিদ সম্মান দেওয়া হয়নি।

কৃষকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার এবং বিদ্যুতের বিল মকুব সহ আরও একাধিক দাবি থাকলেও সেই প্রতিশ্রুতিও নাকি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।জেলে আটক কৃষকরা এখনও মুক্তি পায়নি। সব মিলিয়ে কৃষক আন্দোলনের ক্ষোভের আগুন ফের একবার ধিকিধিকি করে চড়ছে। অল ইণ্ডিয়া কিষান সভা ২৬ নভেম্বর কৃষক আন্দোলনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির দিনে সারা দেশে বিভিন্ন রাজ্যে ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে দিনভর বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের পথে এগুচ্ছে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণের বিষয়টিতে ইতিপূর্বে সরকার বাধ্যতামূলক এবং আইনি রূপ দেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে সে পথে এগোয়নি কেন্দ্র।

এর থেকেই শুরু হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ। যার জেরে সরকারের বিরুদ্ধে ফের পথে নামছে কৃষকরা।এই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিঃসন্দেহে সরকারের জন্য ভালো বার্তা নয়। অপরদিকে ক্ষুব্ধ কৃষকরা চাইছেন সরকারকে এই বার্তাটাই পৌঁছে দিতে দেশের কৃষকরা কিছুই ভুলে যায়নি। সব মিলিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগকে ঘিরে আবারও জটিল হচ্ছে উত্তর ভারতের কৃষক- শ্রমজীবী মানুষের অসন্তোষ। এই অস্বচ্ছ রাজনীতির আগামীদিনে ২০২৪ সালে লোকসভার নির্বাচনের আগে কী বার্তা বয়ে আনে সেটাই বড় জিজ্ঞাস্য।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.