তিরস্কৃত হলেন মুখ্যসচিব

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রাজ্যে আমলাতন্ত্র এমনভাবে জাঁকিয়ে বসেছে যে , রাজ্যের বর্তমান মুখ্যসচিব কুমার অলককে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক ডেকে তিরস্কার করতে হয়েছে । শুধু তাই নয় , মুখ্যসচিব কুমার অলককে চূড়ান্তভাবে সতর্ক করা হয়েছে এবং তার কৃতকর্মের ভুল সংশোধন করা হয়েছে । যদি তা না করা হতো তাহলে মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজ্যের মন্ত্রীদের জেলে যেতে হতো । রাজ্য মহাকরণ সূত্রে চাঞ্চল্যকর এবং নজিরবিহীন এই ঘটনার কথা জানা গেছে।
মুখ্যসচিব কুমার অলকের যেসব কার্যকলাপ সূত্র মারফত পাওয়া গেছে , তা জানলে সাধারণ মানুষেরও চোখ কপালে উঠে যাবে । একজন সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী , যিনি জনগণের অর্থে ভোগ বিলাস করেন তিনি এতটা সাহস পান কী করে ? এই প্রশ্ন জনমনে । মহাকরণ সূত্রে জানা গেছে , রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদল হওয়ার পর অনুষ্ঠিত সর্বশেষ মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্তকে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ডা . মানিক সাহাকে ভুল বুঝিয়ে তার কাছ থেকে স্বাক্ষর করিয়ে নেন মুখ্যসচিব কুমার অলক । অভিযোগ এমনই । শুধু তাই নয় , মুখ্যমন্ত্রী ডা . সাহার স্বাক্ষরকৃত সেই কাগজ সকলের মধ্যে বিলিও করে দেন । পরে যেভাবেই হোক বিষয়টি খোদ মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্য মন্ত্রীদের নজরে আসে । তখন তড়িঘড়ি বিশেষ কেবিনেট অলককে চূড়ান্তভাবে সতর্ক করে দেওয়ার পাশাপাশি তাকে তিরস্কারও করা হয় এবং ভুল সংশোধন করা হয়েছে বলে সূত্রের দাবি ।

যদি বিষয়টি ‘ নজরে না আসতো তাহলে মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা আইনি বেড়াজালে জড়িয়ে যেতেন । এমনই অভিযোগ উঠেছে মুখ্যসচিব কুমার অলকের বিরুদ্ধে ।
মুখ্যসচিব কুমার অলকের কাণ্ডকীর্তি এখানেই শেষ নয় । বিপ্লব দেব মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন আজ থেকে মাসখানেক আগে তিনি বিদেশ ( ভিয়েতনাম ) ভ্রমণে গেছেন । বিদেশে তিনি যেতেই পারেন । এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই । কিন্তু বিদেশ ভ্রমণে যাওয়ার কালে তিনি কাউকেই মুখ্যসচিবের দায়িত্ব অর্পণ করে যাননি । কাউকে দায়িত্ব না দিয়েই তিনি দিব্যি বিদেশে চলে গেছেন বলে বড় ধরনের অভিযোগ উঠেছে । কী করে রাজ্যের মুখ্যসচিব কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে বিদেশ ভ্রমণে চলে গেলেন ? এ নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠেছে । রাজ্যের ইতিহাসে এমন বিস্ময়কর এবং নজিরবিহীন ঘটনা সম্ভবত দ্বিতীয়টি নেই। মুখ্যসচিব না থাকার কারনে এবং কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে যাওয়ার কারণে ওইসময়ে সরকারের কোনও কাজই হয়নি। শুধু তাই নয় , তার বিরুদ্ধে বহু ‘ নোট ’ এবং মন্ত্রিসভার ‘ মাইনোটস পরিবর্তন করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে । তার বিরুদ্ধে মন্ত্রিসভার উপর ছড়ি ঘোরানো থেকে শুরু করে সরকার ও প্রশাসনে একনায়কতন্ত্র কায়েম করারও অভিযোগ উঠেছে ।

কুমার অলক রাজ্য প্রশাসনে নিজের একটি লবি তৈরি করে রেখেছেন । বাকিরা সকলে ভয়ে তটস্থ।তার এতটাই ঔদ্ধত্য যে , কোনও মন্ত্রীর চেম্বারে ডাকলেও তিনি যেতেন না । মুখ্যসচিবের কাজ হচ্ছে সরকার ও মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে কার্যকর করা । মুখ্যসচিব কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না । কিন্তু সূত্রের দাবি , কুমার অলক নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেন এবং মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত পাল্টে দিতেন মন্ত্রীদের আইনের ভয় দেখিয়ে । অন্য আইএএসদেরও ভীতির মধ্যে রাখতেন । ফলে অধিকাংশ আইএএসই মন খুলে কাজ করতেন না বলে সূত্রের দাবি । মোদ্দা কথা , স্বৈরাচারী প্রশাসকের ভূমিকা নিয়েছিলেন । জানা গেছে , পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে , কান ভারী করে মন্ত্রীদের সাথে পর্যন্ত দূরত্ব তৈরি করে দিয়েছিলেন মুখ্যসচিব । আরও বিস্ময়ের ঘটনা হল , পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে বরাবরই তিনি ছাড় পেয়ে গেছেন ।
উল্লেখ্য , ত্রিপুরা রাজ্যে আমলাতন্ত্র সব আমলেই ছিল । এখনও সমানভাবে চলছে । শাসকের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বরাবরই আমলাতন্ত্র প্রভাব বিস্তার করেছে যেমন বাম আমলের শেষদিকে রাজ্যে আমলাতন্ত্র এমনভাবেই জারি হয়ে উঠেছিল যে বিভিন্ন দুর্নীতিতে সরাসরি জড়িয়ে পড়েন একাধিক আমলা , অফিসার । ২০১৮ সরকার পরিবর্তনের পর আচমকাই সেই সময়ে প্রধান সচিবের দায়িত্বে থাকা কুমার অলক মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের ঘনিষ্ঠ বলয়ে চলে আসেন । প্রধান সচিব হলেও , বকলমে তিনিই মুখ্যসচিবের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন এবং খোদ মুখ্যসচিবের উপর ছড়ি ঘোরাতে থাকেন । একসময় প্রশাসনের অন্য আমলা অফিসাররা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন । বাধ্য হয়ে কুমার অলককে সরিয়ে দিয়ে রাজ্যান্তরিত করতে হয় । কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সবকিছু ম্যানেজ করে কুমার অলক আরও ক্ষমতা নিয়ে পুনরায় রাজ্যে ফিরে আসেন । ফিরে আসেন বললে ভুল হবে । তাকে পুনরায় রাজ্যে নিয়ে আসা হয় এবং মুখ্যসচিবের পদে বসানো হয় । অভিযোগ , মুখ্যসচিব হয়েই কুমার অলক প্রশাসনে ও সরকারে প্রভাব বিস্তার করে একেবারে জাঁকিয়ে বসেন । যে কারণে তিনি চার্জ না দিয়েই বিদেশে চলে যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন । মুখ্যমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিতে পারেন । মন্ত্রিসভার উপর ছড়ি ঘোরাতে পারেন । মন্ত্রিসভার মাইনোটস পাল্টে দিতে পারেন । মন্ত্রিসভাকে এড়িয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন । যতটুকু খবর, নয়া মুখ্যমন্ত্রী ডা . সাহা মুখ্যসচিবকে সতর্ক করে দিয়েছেন । কিন্তু আগামীদিনেও যদি এসব চলতে থাকেন , তাহলে রাজ্যবাসীই সমুচিত জবাব দিয়ে দেবেন ।

Dainik Digital

Recent Posts

আলু, ধান, সবজির সাথে ডাল চাষেও এগোচ্ছে ত্রিপুরা : রতন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য এবার ধান ও সবজির পাশাপাশি ডাল জাতীয় শস্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে…

11 hours ago

চটকলের আখ্যান!!

সর্বস্বান্ত গফুর, গ্রাম ছেড়ে মেয়ে আমিনার হাত ধরে ফুলবেড়ের সর্বমা চটকলের দিকে পা বাড়িয়েছিল বাঁচার…

12 hours ago

১০০ ও ২০০ টাকার নোট নিয়ে নয়া নির্দেশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-১০০ এবং ২০০ টাকার নোটের বিষয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বড়সড় সিদ্ধান্ত।সোমবার জারি করা এক…

1 day ago

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আগুন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আচমকাই আগুন লাগে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে । সোমবার সন্ধ্যায় আগুন…

2 days ago

সিন্ধু তীরের জলযুদ্ধ!!

পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হানার একদিন পরে বৃহস্পতিবার ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব দেবশ্রী মুখার্জি পাকিস্তানের জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের…

2 days ago

বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অপরাধে নিষিদ্ধ করা হল ১৬ টি ইউটিউব চ্যানেল!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পহেলগাঁও হামলার পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকার অ্যাকশন মোড অন করেছে । সোমবার কেন্দ্রীয়…

2 days ago