তীব্র গরমে শরীরকে ফিট রাখতে হালকা ব্যায়াম

 তীব্র গরমে শরীরকে ফিট রাখতে হালকা ব্যায়াম
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। আর এই তীব্র গরমের মধ্যে ব্যায়াম করে ফিট থাকা যায় নাকি? এমনটা অনেকে ভাবেন। এই গরমেও সুস্থ থাকতে, ফিট থাকতে ব্যায়াম তো করতেই হবে। এর কোনেও বিকল্প নেই। গরম পড়েছে বলে যে ওজন বাড়বে না তা নয়। বরং তীব্র গরমে শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়া থেকে বাঁচায় ব্যায়াম। গ্রীষ্মকালীন ব্যায়াম বলে কিছু নেই। সাধারণত যেসব ব্যায়াম করেন, সেগুলোই করতে পারেন। গরমে হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন ইত্যাদির সমস্যা দেখা দেয়, ফলে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যায়াম করলে ভাল। এ সময় ব্যায়াম করলে ঘাম বেশি হয়, তাই হালকা ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম করতে পারেন। তবে গরমের সময়ে দুপুরে ব্যায়াম করা ঠিক নয়। পর্যাপ্ত জল পান করুন:-ঘুম থেকে উঠেই আগে বড় এক গ্লাস জল পান করুন। সারারাত ঘুমোনোর পর সকালে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। ফলে চা বা কফি পান করার আগে জল আপনাকে এনার্জি দেবে। তার সঙ্গে ব্রেন এবং কিডনির জন্যেও এই অত্যন্ত উপকারি। তাছাড়াও এই তীব্র গরমে শরীরের জলের মাত্রা ঠিক রাখতে জল খেতে হবে প্রচুর। উল্লেখ্য, জল পান করা খুবই প্রয়োজনীয় মেদ ঝরাতে। খাবার খাওয়ার আগে এক গ্লাস জল খেয়ে নিতে হবে। তাতে যাদের বারবার খাওয়ার প্রবণতা থাকে, তাদের পেট ভর্তি থাকে জল খেয়ে। ফলে খাবার খাওয়ার প্রবণতা এতে কমে যায়। বিনা খাটনিতে অতিরিক্ত ক্যালরি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলুন গরমেও থাকুন ফিট ও স্লিম। তাই ওয়ার্কআউট করার সর্বোত্তম সময়গুলি হল সূর্যোদয় ও সূযাস্তের সময়। এই দুটি সময়ের মধ্যে আপনার সুবিধা হবে,তা মেনে চলার চেষ্টা করুন। ওয়ার্ক আউট ছাড়া ও শরীরের চাই সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুম। একটি সুস্থ মন এবং শরীর হল খাদ্য,ব্যায়াম এবং ঘুমের সংমিশ্রণ। আপনার নিজের রুটিন তৈরি এবং বজায় রাখতে সাহায্যের প্রয়োজন হলে খাতায় নোট করে সেট করে নিন। কী খাচ্ছেন, তাই দেখুন: ভারী খাবার, লাঞ্চ ও ডিনারের পরিবর্তে আপনার হালকা খাবার ও ছোট ছোট ভাগে খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা প্রয়োজন। ফাইবার সমৃদ্ধ ও সহজে হজম হয়ে যায় এমন খাবারই বাজার থেকে কিনুন। যেসব খাবার মশালাদার বা খেলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেবে, তা এড়িয়ে চলুন। সব্জির মধ্যে যেমন বেগুন, পেঁয়াজ, পালংশাক এছাড়া রাজমা, বাদাম, রেড মিট এড়িয়ে চলুন। গরমের শুরুতেই আপেল, নাশপাতি, স্ট্রবেরি, শশা, ব্রকলি, লেটুস, মুখ কড়াই, বাটার মিল্ক ও দুই খান।

ব্যায়াম আৰু মানৱ স্বাস্থ্যঃ — Vikaspedia

এছাড়া ডায়েটে রাখুন নারকেল জলের মতো প্রাকৃতিক পানীয়। যা খেলে শরীরের লবণ ও খনিজগুলি পূরণ করতে সাহায্য করে। এছাড়া তরমুজ এই সময় খাওয়া খুবই ভাল। প্রাকৃতিকভাবে শরীরকে শীতল করতে সাহায্য করে।তীব্র গরমে ভিন্ন পদ্ধতিতে শরীর ফিট রাখুন:ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই বেরিয়ে পড়ুন হাঁটতে। তখন তাপমাত্রা কম থাকে তাই একটু হাঁটা ও একটু জগিং করা যেতেই পারে। এতে অপনার মন ও স্বাস্থ্য দুটোই ঠিক থাকবে। তবে মনে রাখবেন যতটা সম্ভব ভোরে এই ব্যায়ামটি করার চেষ্টা করবেন।তাছাড়াও, অফিস থেকে ফেরার পথে বা আশপাশে যেকোনও জায়গায় যাওয়ার সময় রিকশা না নিয়ে হেঁটে যান অথবা দিনের যেকোনও সময়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন। দুপুরে ও রাতে খাওয়ার পর ছাদে বা বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গায় বা সামনের রাস্তায় একটু হেঁটে আসুন। এই ছোট ব্যায়াম আপনার খাবার হজম করতে এবং শরীর ফিট রাখতে সহায়তা করবে। ইয়োগা বা ধ্যানও করতে পারেন। এটি কোনও ঘাম না ঝরালেও শরীর সুস্থ রাখতে এবং আপনাকে ফিট রাখতে অনেক সাহায্য করবে। কিন্তু এইগুলি সব সময় যতটা পারবেন সকালের দিকে করবেন। কারণ সকালে তাপমাত্রা অনেকটাই কম থাকে তার ফলে শরীরের কষ্টটা অনেকটাই কম হবে। গরমকালে সবচেয়ে ভাল ব্যায়ামগুলোর একটি হল সাঁতার কাটা। সাঁতার কাটলে কমবে শরীরের ক্ষতিকর চর্বি ও কোলেস্টেরল। প্রতি ১০ মিনিট ব্রেস্ট স্ট্রোক-৬০ ক্যালরি, ব্যাক স্ট্রোক-৮০ ক্যালরি, ফ্রিস্টাইল ১০০ ক্যালরি ও বাটারফ্লাই স্ট্রোক খরচ করে ১৫০ ক্যালরি। আর এই গরমে সাঁতার কাটার মাধ্যমে ক্যালরি খরচও হবে বেশি কিন্তু গরম লাগবে
কম। তাই গরমে মাত্র ৩০ মিনিট সাঁতার কাঁটলে শরীর হবে মেদ মুক্ত।বাড়িতে, অফিসে বা অন্য কোথাও ওপরে উঠতে লিফট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। সিঁড়ি ব্যবহার করুন। আপনার সারা দিনের ব্যায়ামের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে সিঁড়ি দিয়ে কয়েকবার ওঠানামা করা। দিনে তিনবার ২০ সেকেন্ডে ৬০টি সিঁড়ি ভাঙলে কার্ডিও ফিটনেস ৫ শতাংশ বেড়ে যায়। কার্ডিও রেসপিরেটরি ফিটনেস বজায় রাখলে হার্টের অসুখের সম্ভাবনা অনেকাংশ কমানো যায় এবং শরীরও হয় মেদ মুক্ত। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে কমপক্ষে ১০ মিনিট দড়ি-লাফ দিন। দিনে দিনে সময় আরও বাড়িয়ে দিন। কম সময়ে সহজ ব্যায়াম এটি। প্রচণ্ড গরমেও এই ব্যায়াম করতে খুব একটা সমস্যা হবে না । রাতের বেলা ভাল করে শুয়ে পড়ুন মেঝের ওপর। মেঝের শীতলতা আপনাকে গরম থেকে মুক্তি দেবে। আর আপনার কোমরে কিংবা পিঠে ব্যথা থাকলে তা সারিয়ে দিতে সাহায্য করবে। বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেচিং ব্যায়াম, যেমন- আর্ম স্ট্রেচিং বা লেগ লিফটিং করতে পারেন। এতে খুব একটা ঘাম হয় না কিন্তু রক্ত সঞ্চালন ভাল হয় এবং বিভিন্ন অংশের চর্বি ঝরে যায়।
দিনের কিছু সময় ধরে সাইকেল চালানোর অভ্যাস করতে পারেন। সাইকেল চালানোতে একদিকে যেমন ব্যায়াম হয়ে যাবে, অন্যদিকে গরম আবহাওয়ার সঙ্গে আপনার শরীর নিমেষেই মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করবে।যদি সময়ের অভাবে আপনি ব্যায়াম করতে না পারেন সেক্ষেত্রে ১ মিনিট পর্যন্ত স্কোয়াট করুন। হেলথ এক্সপার্টদের মতে, লোয়ার ব্যাক এবং মেরুদণ্ড মজবুত করতে এর জুড়ি নেই। শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। যদি আপনি প্রথমবার স্কোয়াট করেন, তবে ১ মিনিটে ২৫ বার করার চেষ্টা করুন।
মনে রাখবেন আনহেলদি লাইফ থেকে একটা হেলদি লাইফস্টাইল বেছে নেওয়াটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি বার্ন করে নিজেকে পারফেক্ট ওয়েটে নিয়ে আসাটাই জীবনের বড় লক্ষ্য। তাই গরম পড়েছে বলে কোনও রকম এক্সারসাইজ করা বন্ধ করে দেবো, এমন মনোভাব দূর করতে হবে।এইভাবে ছোটখাটো পদ্ধতিতে নিজের শরীরের বাড়তি মেদ ঝড়িয়ে এই তীব্র গরমেও নিজের শরীরকে ফিট করে তুলতে হবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.