তুঙ্গে চাহিদা! এক রাশ আনন্দ সঙ্গে নিয়ে এবার বাড়ির পথে বাংলার ঢাকিরা
পুজো শেষ। একাধারে আনন্দ, অন্যদিকে দুঃখও। বৃহস্পতিবার বিকেল হওয়ার আগেই জিনিসপত্র বেঁধে প্রায় প্রস্তুত অঞ্জলিরা। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের কাটোয়ার এই বধু এবার গুয়াহাটি গিয়েছিলেন পুজোয় ঢাক বাজাতে। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন ছোট্ট মেয়ে শ্রীমতীকে। গত কদিন গুয়াহাটির পুজোয় ঢাক বাজিয়ে বৃহস্পতিবার ট্রেনে উঠেছেন। এবার ঘরে ফেরা। মায়ের চেয়ে আনন্দ বেশি মেয়ের। অঞ্জলির সঙ্গে ছিলেন কাটোয়ার আরও সাত জন মহিলা ঢাকি। এ বারের পুজোটা ওদের কাছে যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ ছোট থেকেই প্রায় তিন দশক গ্রামের মাঠেই কেটেছিল পুজো। এই প্রথম বার মহিলা ঢাকিদের কদর বেড়েছে। করোনার আগে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের তরফে মহিলা ঢাকিদের সম্মান জ্ঞাপন করেছিল। করেছিল। আর তারপর থেকেই মহিলাদের মধ্যে ঢাক বাজানোর প্রবণতা দেখা যায়। অঞ্জলিও স্বীকার করেছেন লকডাউনের সময়তেই ঢাক বাজানোর হাতেখড়ি হয়েছিল তাদের। তবে কেবল মহিলা ঢাকিরাই নন, গ্রাম বাংলার পুরুষ ঢাকিরাও ছড়িয়ে পড়েছিলেন দেশজুড়ে। অঞ্জলির মতো অনেক গ্রাম্য বধূই একটু আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য কাঁধে ঢাক, হাতে কাঠি তুলে নিয়েছিলেন এ বারের পুজোয়। এদের বেশিরভাগেরই স্বামী পেশাদার ঢাকি। বাকিরাও শিখে নিয়েছেন বাজনশৈলি।
গত দু’বছর অতিমারীর দাপটে এদের অধিকাংশই ছিলেন ঘরবন্দি। এবার পরিবেশ অনেকটাই অনুকূল হওয়ায় মনে আনন্দ । এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উত্তর ২৪ পরগণার মছলন্দপুরের ঢাকিরা। তাদের অন্যতম, অভিজ্ঞ ঢাকি রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত গোকূল দাস এবার পুজোয় গিয়েছিলেন শিলিগুড়ি সেন্ট্রাল কলোনির পুজোয়। জানালেন, “ওখানে আমরা ছিলাম ৫ মহিলা-সহ ৮ জন। নবমীতেই ওই ক্লাবের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। দশমীতে একদিনের জন্য ওখানেই একটা পরিবেশনার পর শুক্রবারবার ভোরে ফিরেছি।’ মতিলালঢাকি ডটকম-এর এবার অসমে গিয়েছেন তিন মহিলা সহ ৬ জন ঢাকি, উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌতেও তিন মহিলা সহ ৬ জন, ঝাড়খণ্ড, ভোপাল এবং বালুরঘাটে পুরুষদের দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন মহিলাঢাকির দলও। কলকাতার একাধিক পুজোতেও এবার নজর কেড়েছে মহিলা ঢাকিদের দল। তথ্য-প্রযুক্তির দুনিয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পুজো উদ্যোক্তাদের চাহিদা মেনে পুরুষ এবং মহিলা ঢাকি পাঠিয়েছে মতিলালঢাকি ডটকম। এরা সকলেই শনিবার সকালের মধ্যেই ফিরছেন নিজেদের বাড়িতে। গুয়াহাটিতে দুই জায়গায় ঢাকিদের পাঠিয়েছেন ‘ভোলানাথ ব্যাণ্ড’ এর ব্যবস্থাপক সুঞ্জয় মণ্ডল। তিনি জানালেন, ‘অসমে দুই জায়গায় ১০ জন ঢাকিকে পাঠিয়েছি। এদের চার জন মহিলা। চতুর্থীতেই ওরা পুজো প্যান্ডেলে পৌঁছে গিয়েছিলেন।’
সঞ্জয়ের ব্যবস্থাপনায় এবার পুজোয় রাজস্থান, দিল্লি, মথুরার পুজো কমিটিতে গিয়েছেন চার পুরুষ ঢাকি। শুক্রবার ওরা ঘরে ফিরে এসেছেন। এ ছাড়া সৃঞ্জয়ের ব্যবস্থপনায় সুদূর জম্মু, হিমাচল প্রদেশে, কর্ণাটকে পৌঁছে গিয়েছিলেন ঢাকিদের দল। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার পিয়ালি গ্রামের মধু দাস। চার পুরুষ ধরে ঢাক বাজানোই পেশা। ঠাকুরদা সনাতন দাস, বাবা অনিল দাস, এদের কাছেই মধুর ঢাকে হাতেখড়ি। কয়েক বছর ধরে পুজোর সময় দিল্লির কালীবাড়িতে দুর্গোৎসবে আসছেন ঢাক বাজাতে।
প্রতি বছর ফিরে যাওয়ার সময় একাদশীর সকালে এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে যান। এবারও এসেছিলেন বাড়িতে। বড় ছেলে মিলন, ছোট ছেলে হিরণ, ভাইপো পঞ্চম শ্রেনির পড়ুয়া সুব্রতকে নিয়ে। দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে অধিকাংশের যখন ছুটি, ওরা একটু উপার্জনের পথ খোঁজেন। একটা পুজো গেল । আবার আগামী দুর্গাপুজোর অপেক্ষার শুরু। মাঝেও নানা পুজো-অনুষ্ঠানে, আজকাল বিজ্ঞাপনের টিজারেও ডাক আসছে ওদের।