তৃণমূলের দ্বিধা!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-শ্যামকে রেখেও একই সঙ্গে কুলে থেকে যাওয়ার প্রয়াস সচরাচর সফল হয় না বলে যে কোনও কালেই সফল হবে না,এমন কথা বলা যায় না। কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রশ্নে তৃণমূল কংগ্রেসের বর্তমান অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে, তেমনই অবস্থান নিয়ে চলেছেন তৃণমূল নেত্রী।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পোড়খাওয়া রাজনীতিক।অনেক রাজনৈতিক পতন-অভ্যুদয়ের কারিগর তিনি।গত বছরের জুলাই মাসে নীতীশ কুমারের পৌরোহিত্যে পাটনায় বিজেপি-বিরোধী ছাব্বিশটি বিরোধী দলের প্রথম বৈঠকে, জোটের নাম ‘আইএনডিআইএ’,সংক্ষেপে ‘ইন্ডিয়া’ রাখার প্রস্তাবক তিনিই ছিলেন।অথচ তার নিজের রাজ্যে,পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিষয়টিকে বিশ বাঁও জলে বললেও কম বলা হবে। জোটের বৈঠকে আসন রফার সময়সীমা নিয়ে গোড়া থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের মতানৈক্য হয়েছে।গত বছর ডিসেম্বরে দিল্লীতে জোটের বৈঠকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আসন রফা করার চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল তৃণমূল।কিন্তু এআইসিসি নেতৃত্ব তাতে কর্ণপাত না করায় বেজায় ক্ষুব্ধ মমতা প্রকাশ্য জনসভা থেকেই পশ্চিমবঙ্গের সবকটি অর্থাৎ ৪২টি আসনে এককভাবে লড়াইয়ের কথা ঘোষণা করে দেন।এই তথ্য জানার পর অনেকেই ভাবতে পারেন,এর পরেও ‘তৃণমূলের দ্বিধা’ কথাটি আসছে কেন?আসছে কারণ, সম্ভবত বিজেপির ঘরে তাদের সঙ্গে তৃণমূলের নৈকট্য-বার্তা দিতে কংগ্রেস হাইকমাণ্ড বঙ্গে এখনও জোটের আশা জিইছে রেখেছে বলে।আবার পক্ষান্তরে,প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী তৃণমূলের বদলে বামেদের সঙ্গে জোটে আগ্রহী।অধীর ঘোষিতভাবে মমতা-বিরোধী। বিজেপি বা সিপিএম যে ভাষায় মমতাকে আক্রমণ করে,অধীরের আক্রমণ ততোধিক।দলের সার্বিক জয়ের চাইতে এক জন সাংসদ সর্বদাই নিজের আসন বাঁচাতে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক।অধীরের মনে হতেই পারে, জোট হলে তার বহরমপুর আসনে তাকে হারাতে তৃণমূলের সিংহভাগ ভোট বিজেপিতে গিয়ে পড়তে পারে।সেক্ষেত্রে লড়াই একের বিরুদ্ধে এক হয়ে পড়লে তিনি হেরে যেতে পারেন।ভাবনটা ভুল নয়।কিন্তু মমতার অনাগ্রহের কারণ?এর ব্যাখ্যা একাধিক হতে পারে।অধীরের মতো একই ভাবনায় তৃণমূলেরও মনে হতে পারে, জোট হলে তৃণমূল প্রার্থীদের হারাতে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেস কর্মীদের সিংহভাগ ভোটেও কাস্তে-হাতুড়ি অথবা পাঞ্জার বদলে পদ্মে গিয়ে পড়তে পারে। পড়তেই পারে।
এহ বাহ্য,তৃণমূলের সামনে জোটের প্রশ্নে দোলাচালের আরও কারণ নিহিত আছে। তৃণমূল এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিদায়ঘন্টা বাজায়নি।মমতার মনে হতেই পারে, ‘ইন্ডিয়া’র সঙ্গে সুতো ছিন্ন করলে বঙ্গের প্রায় ৩২ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে বিরূপ বার্তা যেতে পারে। যেতেই পারে।তৎসত্ত্বেও জোটের প্রশ্নে দ্বিধার হেতু? পাছে ‘ইন্ডিয়া’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ালে যদি সিবিআই- ইডির প্রকোপ বাড়ে।অতএব জোট করা নাকি ছিন্ন করা,কোন্টা বেশি বিপজ্জনক সেই দোলাচল তৃণমূল এখন কাটিয়ে উঠতে পারছে না। বিশেষত নির্বাচনের মুখে সন্দেশখালি চলে আসায়, পরিস্থিতির জটিলতায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে আরও দেরি হচ্ছে।এটা ঘটনা যে, মমতার তেরো বছরের রাজ্যপাটে সন্দেশখালির মতো এতটা প্রবল অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন আগে হতে হয়নি তৃণমূলকে। একাধিক মন্ত্রী-সান্ত্রী,বিধায়ক দুর্নীতির অভিযোগে জেলবন্দি হওয়ার পরেও হয়নি।আগামী ৬ অথবা ৮ মার্চ (এখনও চূড়ান্ত নয়) আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বারাসাতের সভামঞ্চে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সন্দেশখালির নির্যাতিতা মহিলাদের মুখে শেখ শাহজাহান বাহিনীর হাতে তাদের দুর্দশার বারোমাস্যা শুনবেন বলে বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছে। এমন বেগতিক পরিস্থিতিতে একলা জগাই হয়ে লড়াইয়ের চেয়ে কংগ্রেস-সহ জোটের শরিকেরা পাশে থাকলে মন ও পেশিতে বল বাড়ে।সমাজবাদী পার্টি ও আপের সঙ্গে একাধিক রাজ্যের কংগ্রেসের আসন সমঝোতা চূড়ান্ত।মহারাষ্ট্রেও পাওয়ার এবং উদ্ধবকে নিয়ে তেমন জটিলতা নেই।যত সমস্যা বঙ্গে।সিপিএম নেতৃত্ব এবং অধীর চৌধুরি অনেকদিন ধরে দিদি-মোদি সেটিং তত্ত্ব আউড়ে চলেছেন।এমন একটা ধারণাও তারা তৈরি করতে চেয়েছেন যেন মমতা ‘ইন্ডিয়া’ জোটে বিজেপির ছেড়ে দেওয়া’ ‘ট্রোজান হর্স’। গ্রিক পৌরাণিক কাহিনিতে ট্রোজান ছিল একটি কাঠের ঘোড়া, যা ট্রোজান যুদ্ধের সময় গ্রিকরা ট্রয় শহরে প্রবেশ করতে এবং সেই যুদ্ধে জয়ে ব্রহ্মাস্ত্র হিসাবে সেটিকে ব্যবহার করেছিল।তৃণমূলের মনের কথাটি শুধু তারাই জানে।তবে জোট নিয়ে তাদের দ্বিধাটি কিন্তু দৃশ্যত।