ত্রিপুরায় বন্যা ও কিছু কথা!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অপ্রতি সম্প্রতি ত্রিপুরায় ভয়াবহ বন্যা হয়ে গেল।যার রেশ এখনও কাটেনি।বন্যার ভয়াবহতা এত বিপুল ছিল যে রাজ্যের প্রায় আট জেলাতেই একসাথে এর প্রভাব পড়েছে।বলা হচ্ছে ১৯৮৩ সালের পর এত ভয়াবহ বন্যা রাজ্যে আর হয়নি।ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক।সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অমরপুর, উদয়পুর এবং সোনামুড়ায়। উদয়পুর, সোনামুড়ায় এখনও বহু জায়গা থেকে জল সরেনি।মানুষ বিপন্ন অবস্থায় রয়েছেন।বিশেষ করে মানুষের বাড়িঘর। বেসরকারী ক্ষেত্রে ফসল, কৃষিজমি, মৎস্যচাষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।সরকারীভাবে বেশি ক্ষতি হয়েছে সড়ক এবং বিদ্যুতের। প্রাথমিকভাবে সরকার জানিয়েছিল, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় টিম এসেছে।বেশকিছু এলাকা তারা ঘুরে দেখেছেন। কেন্দ্রীয় টিম দিল্লীতে গিয়ে কী রিপোর্ট দেয় তাই দেখার এবং কেন্দ্র ত্রিপুরার জন্য কোনও প্যাকেজ পাঠায় কিনা তাও মূলত দেখার বিষয় রয়েছে।১৯৮৩ সালের সাথে ২০২৪- এর বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।এখন সবকিছুই প্রায় হাতের মুঠোয়।পরিকাঠামো এখন আগের থেকে অনেক আপডেট।কিন্তু তাও প্রাকৃতিক বিপর্যয় রাজ্যকে অনেক পিছিয়ে দিল। আবহাওয়া দপ্তর গত ১৬ আগষ্টই রাজ্যের দক্ষিণ, গোমতী জেলার জন্য ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের পূর্বাভাস জারি করেছিলো। এর কতটা আন্দাজ করতে পেরেছিলো প্রশাসন তা প্রশাসনই ভালো বলতে পারবে।শুধু তাই নয়, এরপর প্রতিদিন আবহাওয়া দপ্তর রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি করে।কিন্তু প্রশাসন তাতে আমলই দেয়নি।অন্তত বন্যার চেহারা এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নি দেখে তা বোঝা যায়।১৯/২০ আগষ্ট রাত থেকে ২১ আগষ্ট দিনভর ভারী বর্ষণের পর রাজধানী অবরুদ্ধ হবার পরই যেন যুদ্ধ যুদ্ধ একটা ভাব লেগে যায়।আগরতলা এবারও অতিবর্ষণে বন্যার জলে একাকার হয়ে যায়। নতুন সংযোজন ধলেশ্বর, ইন্দ্রনগর, কৃষ্ণনগর, রামনগর ইত্যাদি এলাকায় জল দাঁড়ানো।নীচু এলাকাগুলির কথা বলে তো লাভই নেই।কাটাখালের বাঁধ, হাওড়া নদীর বাঁধ- এই দুই বাঁধ আগরতলা শহরকে দুই দিক থেকে রক্ষা করে।কিন্তু এই বাঁধগুলোর অবস্থা কী? এগুলি কি সুরক্ষিত আছে? বন্যা হলেই এই দুই বাঁধের কথা আমাদের মনে পড়ে। স্মার্ট শহরের স্মার্টবাবুরা এরপর সব ভুলে যান। এরপর সব স্বাভাবিক। আবার বন্যা এলে ভাবা যাবে। অন্যদিকে এর আগে থেকেই দক্ষিণ, গোমতী জেলায় বন্যা পরিস্থিতি। পরবর্তী সময়ে ডম্বুর বাঁধের জল ছাড়ায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়, বিশেষ করে অমরপুর, উদয়পুর এবং সোনামুড়া মহকুমায়। অতিবৃষ্টির ফলে জল সরে গেছে আগেই।কিন্তু উদয়পুর, অমরপুর এবং সোনামুড়ার বা অনেকাংশে এখনও জল দাঁড়িয়ে রয়েছে।জল সরলেও খুব বি ধীরগতিতে সরছে।ফলে এই তিন জেলাতেই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক।অর্বণনীয় ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন সেখানকার হাজার হাজার মানুষ।
এবারের বন্যার অন্যতম বিশেষত্ব হলো একদিনে রেকর্ড বৃষ্টি।অন্যান্য রাজ্যের, বিশেষ করে পাহাড়ি রাজ্যগুলিতে যেমন একেক সময়ে অতিবর্ষণ হয় এবার রাজ্যে এমনটাই বর্ষণ হয়েছে।আর এতেই রাজ্যের প্রায় সব জেলাই কমবেশি প্রভাবিত হয়েছে।ইতোমধ্যেই রাজ্য সরকার গোটা রাজ্যকেই প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।রাজ্যে এবারের বন্যায় প্রায় ৩২ জন সরকারী হিসাব অনুযায়ী মারা গেছেন।ছোট রাজ্যের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান নিঃসন্দেহে উদ্বেগের।এখন সবচেয়ে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হচ্ছে বিপন্ন মানুষজনকে সহায়তা করা।কেন্দ্র থেকে ইতোমধ্যেই ৪০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে।হেলিকপ্টার পাঠিয়েছে কেন্দ্র। এনডিআরএফ টিম পাঠিয়েছে- ইত্যাদি সহায়তা মিলেছে।এতে বিপন্ন মানুষজনদের উদ্ধারকাজে সহায়তা হয়েছে ঠিকই। এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে দুর্গত মানুষজনদের পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ দান।মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে প্রচুর মানুষ অর্থসাহায্য করছেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তা প্রচার করছেন।বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠন, এনজিও থেকে শুরু করে সংস্থা- যে যার মতো করে বিপন্ন মানুষজনদের সহায়তা করছেন। কিন্তু তা যৎসামান্যই।যে মানুষের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে, পুকুর, জলাশয়ের মাছ সব ধানের জলে ভেসে গেছে অথচ তিনি এই মাছ বিক্রি করেই সংসার চালাতেন তার কী হবে?সেই কৃষকের কী হবে যার বিঘার পর বিঘা জমির ফসল সব সাফ হয়ে গেছে, গ্রামের গৃহস্থ যে নাকি গরু পালন,ছাগল পালন করে দিনাতিপাত করতেন যা বন্যার জলে শেষ হয়ে গেছে তাদের পাশে কেউ কি দাঁড়াবে?সরকারী সাহায্য কবে আসবে, কবে ক্ষয়ক্ষতির নিরুপণ হবে তা সুনিশ্চিত করবে কে?এখানে যে রাজনীতিকরণ হবে না এর গ্যারান্টি দেবে কে? বনার্তদের নিয়ে রাজনীতিকরণ কি আদৌ ঠিক?এই অবস্থায় আর কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি। ক্লাবগুলি মেতে উঠবে অলিখিত প্রতিযোগিতায়। কার মণ্ডপ কত উঁচু, কার বাজেট কার থেকে বেশি এ নিয়ে চলবে প্রতিযোগিতা। এর আগে শুরু হবে চাঁদা নিয়ে জুলুমবাজি।আর এতে চাপা পড়ে যাবে বন্যার্তদের চাপা দুঃখ কষ্ট, যাবতীয় যন্ত্রণা। সবই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।কিন্তু দুঃসহ বন্যার স্মৃতি শুধু তাড়া করে বেড়াবে বন্যার্তদের, দুর্গতদের। আসুন সবাই মিলে আমরা এ বছর পুজোর বাজেট কাটছাঁট করে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াই।তাদের যাবতীয় দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা আমরাও ভাগ করে নিই।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

এ কে-৪৭ ও প্রচুর কার্তুজ সহ ৬ বৈরী ধৃত মিজোরামে, চাঞ্চল্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি:- বাংলাদেশ থেকে কাঞ্চনপুর মহকুমার ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে মিজোরামে যাওয়ার পথে মামিত জেলার…

3 hours ago

ফাইফরমাশ খাটছেন টিএসআর জওয়ানরা !!

অনলাইন প্রতিনিধি :- নিরাপত্তার কাজে নয়, টিএসআর জওয়ানদের খাটানো হচ্ছে আর্দালি হিসাবে। পুলিশ আধিকারিকদের ও…

3 hours ago

ইন্ডিগো আরও একটি দিল্লীর বিমান চালু করছে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- ইন্ডিগো আগরতলা- দিল্লী রুটের উভয় দিকে যাতায়াতে আরও একটি বিমান চালু করছে।…

4 hours ago

ইন্দ্রপ্রস্থে ভোট!!

দিল্লীর বিধানসভা ভোট নিয়ে সরগরম দিল্লী। দিল্লীতে এবার এক আঙ্গিকে বিধানসভা ভোট হচ্ছে। গত পরিস্থিতির…

4 hours ago

বহিঃরাজ্যে গেল “ধানি লঙ্কা”ওরফে ধান্না মরিচ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরায় উৎপাদিত" অর্গানিক বার্ড আই চিলি " স্হানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ধানি…

1 day ago

কুম্ভ ইকনমি

২২জানুয়ারী,২০২৪।এক বছরের ব্যবুধানে ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি।গত বছরের মেগা ইভেন্টের আসর বসেছিল অযোধ্যায়। এবার মেগা…

1 day ago