তড়িঘড়ি প্রয়োগ!!

 তড়িঘড়ি প্রয়োগ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-আইপিসি, সিআরপিসি এবং এভিড্যান্স অ্যাক্ট বাতিল করে গত আইপি ডিসেম্বর প্রায় বিরোধী শূন্য সংসদে তড়িঘড়ি তিন বিল পাস করিয়েছিল মোদি সরকার।নতুন বিলগুলো ছিল ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বি এনএস),ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএসএস) এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম (বিএসএ)। গত ২৫ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি এই তিন বিলে তাঁর সম্মতিও দিয়েছেন।ইতিমধ্যেই লোকসভার ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার সময় এগিয়ে এসেছে।তার আগেই দেশের ফৌজদারি ১ বিচার প্রক্রিয়ার নতুন তিন আইন চালুর ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে,আগামী ১লা জুলাই থেকে দেশে চালু হয়ে যাবে নতুন তিন আইন।আগামী এক পক্ষকালের মধ্যেই দেশে লোকসভা নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক দিনক্ষণ ঘোষণা করতে চলেছে দেশের নির্বাচন কমিশন।প্রাথমিক অনুমান, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী এপ্রিল মে মাসের মধ্যেই নির্বাচনি গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে নতুন সরকারের শপথ এবং অষ্টাদশ লোকসভা গঠিত হয়ে যাবে, অর্থাৎ ১ লা জুলাই থেকে দেশে নতুন তিন আইন চালু হওয়ায় অর্থ হচ্ছে,তার আগেই দেশে ভোট পর্ব মিটে যাবে এবং নতুন সরকার গঠিত হয়ে যাবে।সেক্ষেত্রে নুতন সরকার শপথ নিয়ে এসেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে নতুন তিন আইন বলবৎ করতে পারতো।কিন্তু অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র দপ্তর।সে সবের ধার না ধরেই আগাম বিজ্ঞপ্তি জারি করে নতুন আইন চালুর ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে।এটা লক্ষ্যণীয় যে,দেশের প্রায় সব কয়টি বিরোধী দল, আইনজ্ঞদের বিরাট অংশ এবং নাগরিক ও সুশীল সমাজের অনেকেই কেন্দ্রীয় সরকার রচিত এই নতুন তিন আইনের বিরোধিতা শুরু থেকেই জারি রেখেছেন। যদিও রাষ্ট্রপতি জিল তিন বিলেই অনুমোদন দিয়েছেন, তবে দেশজুড়ে গাড়ি চালকদের আন্দোলনের জেরে বিএনএস এর ১০৬ধারাটি আপাতত: কার্যকারী হবে না বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে,এই ধারাতে হিট অ্যান্ড রানের ঘটনায় ১০ বছর পর্যন্ত জেল এবং জরিমানার উল্লেখ ছিল। বর্তমানে প্রচলিত আইনে এই অপরাধে সাজার মেয়াদ দু’বছরের উল্লেখ আছে।শুধু তাই নয়,নতুন আইনে সাধারণ ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় সন্ত্রাসবাদ ও সংঘঠিত অপরাধের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।রাষ্ট্রদ্রোহের সংজ্ঞা, ধরন এবং সাজার মেয়াদ সম্প্রসারিত করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডের সংস্থান বেড়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন দণ্ডাজ্ঞাণ মানে আমৃত্যু কারাবাস হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।এখানেই শেষ নয়,নতুন আইনে এমন কিছু সংস্থান রাখা হয়েছে যা নাগরিকের মৌলিক অধিকার এবং সুরক্ষা কার্যত প্রশ্নের মুখে এসে ঠেকবে বলেই আশঙ্কা দেশের আইনজ্ঞদের। কারণ গ্রেপ্তার ছাড়াই যে কোনও ব্যক্তির ফিঙ্গার প্রিন্ট, হাতের লেখায় নমুনা কিংবা ভয়েস স্যাম্পল পুলিশ সংগ্রহ করতে পারবে নতুন আইনে। কিংবা পুলিশ সন্তুষ্ট হলেই ৭ বছর সাজাযোগ্য অপরাধে এফআইআর গ্রহণের বিধান রাখা হয়েছে নয়া ব্যবস্থায়। জেলে বন্দি অভিযুক্তকে যখন খুশি পুলিশ নিজেদের হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে নতুন ব্যবস্থায়।এতদিন ধরে দেশে যে ব্রিটিশ রাজদ্রোহ আইন ছিল সেটাও বাতিল করা হয়েছে নতুন আইনে।তার পরিবর্তে এসেছে দেশদ্রোহ আইন।পুরানো আইপিসি আইনে ১২৪ এ ধারা হলো রাজদ্রোহ রোধ আইন।এবার এর পরিবর্তে আনা হয়েছে সংহিতায় ১৫২ধারায় দেশদ্রোহ বিরোধ আইন।পূর্বে এই আইনে সাজা ছিল ৩ বছর জেল বা আজীবন জেল।খোল নলচে বদলে নতুন আইনে সাজার পরিমাণ ৭ বছর জেল বা যাবজ্জীবন জেল। বিরোধীদের আশঙ্কা,বর্তমান সরকার যেভাবে কথায় কথায় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে দেশদ্রোহ বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, তাতে নতুন আইনে নিশ্চিত ভাবেই বিরোধী দলের আন্দোলন দমনের উদ্দেশে দেশদ্রোহ আইনকে কাজে লাগানো হতে পারে।যে কোনও দেশেই সংবিধান ও আইনকে সময়োপযোগী করা স্বাভাবিক বিষয়।কিন্তু নতুন তিন আইনে সরকার যে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন তাকে নজিরবিহীন মনে করা হচ্ছে।তাই ওয়াকিবহাল মহলের আশঙ্কা নতুন আইনে নাগরিকের অনেক অধিকার খর্ব হবে।নানা ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের জামিন পাওয়ার সুযোগ কমে যাবে। অন্য তদন্তকারী সংস্থার মতো পুলিশ এবার অভিযুক্তের সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করতে পারবে।অর্থাৎ লোকসভা ভোট মিটলেই দেশে অপরাধ আইনের চেহারা ও প্রয়োগ দুইই বদলে যাবে।কিন্তু নতুন সরকার ক্ষমতায় বসার পর তা কার্যকরী হলে পুরানো সরকার এই আইন প্রয়োগের জন্য তড়িঘড়ি আগাম বিজ্ঞপ্তি জারি করার ঘটনা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.