দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ভবতারিণীর শাড়ি, গয়না, সম্পত্তির হিসাবে গরমিল

 দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ভবতারিণীর শাড়ি, গয়না, সম্পত্তির হিসাবে গরমিল
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

গত কালীপুজোয় দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ভবতারিণীকে দেওয়া কয়েক হাজার শাড়ি আর বহুমূল্যের স্বর্ণালঙ্কারের নাকি কোনও হদিশই মিলছে না! হিসেব নেই কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির। এমনই অভিযোগ তুলে যাবতীয় হিসাব নিকেশের তদন্ত চেয়ে মামলা হল কলকাতা হাইকোর্টে। আদালতের নির্দেশে দু’দশক পরে হওয়া ট্রাস্টের নির্বাচনেও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মামলাকারীরা। তাদের বক্তব্য,
মন্দিরের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির কোনও হিসাব নেই। অডিট হয় না। এই অবস্থায় কোনও বিচারপতির নেতৃত্বে কমিটি গড়ে অথবা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি’কে দিয়ে তদন্ত করানোর দাবি নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে শুনানিতে। যদিও মন্দির কমিটির তরফে আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, ‘বেআইনি কিছুই হচ্ছে না। সবটাই চলছে নিয়ম মেনে।’দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সম্পত্তি, সরকারি অনুদান, এমনকী শাড়ি-গয়নার হিসাবে গরমিলের অভিযোগ। এনিয়ে এবার কেন্দ্রীয় আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি তদন্তের আর্জি জানিয়ে মামলা দায়ের হল কলকাতা হাইকোর্টে। সেবায়েত ও ভক্তদের একটি অংশের তরফে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে। চলতি সপ্তাহে এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে মামলা হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। সেই সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন রয়েছে আদালতে। এবার সম্পত্তির হিসাব নিয়ে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা হল।মামলাকারীদের তরফে অভিযোগ, গত কালীপুজোয় দক্ষিণেশ্বরে দেবী ভবতারিণীর
উদ্দেশে কয়েক হাজার শাড়ি ও বিপুল গয়না দিয়েছিলেন ভক্তরা। তার নাকি কোনও হিসাব নেই। এটার হিসেব চাওয়া হয়েছে মামলায়। একই সঙ্গে, বিপুল পরিমাণ সম্পত্তিরও হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ। রাজ্য সরকার গত কয়েক বছরে দক্ষিণেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন খাতে উন্নতির জন্য ১৩০ কোটি টাকা দিয়েছিল। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ২০ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন। এই টাকারও নাকি
হিসেব নেই বলে পিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে।মামলাকারীদের আরও অভিযোগ, মন্দিরের ক্ষমতা সেবায়েতদের একটা অংশ নিজের কব্জায় রেখেছে বলে আদালতে জানিয়েছেন মামলাকারী সেবায়েতরা। তাদের বক্তব্য, আদালতের রায়ে প্রায় বিশ বছর বাদে হওয়া ট্রাস্ট নির্বচনেও অনিয়ম হয়েছে। এর সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে, মূল মন্দির চত্বরে নির্মিত গেস্ট হাউসের নিচে দোকান বণ্টন পদ্ধতি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগও। মামলাকারীদের আর্জি , কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি ইডিকে দিয়ে তদন্ত করানো হোক। অথবা অবসরপ্রাপ্ত কোনও বিচারপতির নেতৃত্বাধীন কমিটি গড়ে দিক হাইকোর্ট। তারাই এই অনিয়মের তদন্ত করবে। দক্ষিণ ভারতের তিরুপতি বালাজি মন্দির অতি সম্প্রতি ঘটা করে তাদের সম্পত্তির হিসাব ঘোষণা করেছে। ঠিক তখনই এ রাজ্যের অন্যতম তীর্থক্ষেত্র দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সম্পত্তি নয়ছয়ের অভিযোগে সরব হয়েছেন সেখানকার সেবাইত ও ভক্তদের একাংশ। হাইকোর্টে মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী বিজয় অধিকারী ও সুকান্ত চক্রবর্তীর দাবি, বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার বিভিন্ন সময়ে উন্নয়নের জন্যে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মন্দির দর্শনে এসে ২০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তা ছাড়া ভক্তরাও প্রতিদিন প্রণামী বাবদ বিপুল অর্থ ও অন্যান্য সামগ্রী দান করেন। সে-সবের কোনও হিসেবই নেই। সেবায়তদের তরফে আর এক আইনজীবী পঙ্কজ হালদার অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন মন্দির কমিটির ভোটই হয় না। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জ্যেতির্ময় ভট্টাচার্যকে স্পেশাল অফিসার নিয়োগ করা হয়েছিল। প্রায় ৬০০ সেবাইত রয়েছেন মন্দিরে। এরপরেও মাত্র তিন জন মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও এমন ভাবে নির্বাচন বৈধ কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে মামলায়। বিষয়টি নিয়ে মন্দির ট্রাস্ট কমিটির চেয়ারম্যান কুশল চৌধুরীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘বিষয়টি যেহেতু বিচারাধীন সেই জন্য কোন মন্তব্য করব না।’

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.