দলদাসত্বের পরাকাষ্ঠা।

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আইনের শাসনের মূলোৎপাটন করে পশ্চিমবঙ্গের ভয়ঙ্কর সাপঞ্চায়েত নির্বাচনের পর, চার মাস আগের সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়টি ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। সে রায় এতদিনে কার্যকর হয়ে গেলে বঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটে, এমনকী সোমবার প্রায় সাতশো বুথে পুনর্নির্বাচনেও গণতন্ত্রে উৎসবের এমন কদর্য রূপ, হিংসার এতখানি উন্মুক্ত অনুশীলন দেখা যেত কি?গত ২ মার্চ বিচারপতি কুট্টিল ম্যাথু জোসেফের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করে অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি রায়দান করে। সেটি হল, কেন্দ্রীয় সরকারের বদলে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং তার সঙ্গী নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করবে প্রধানমন্ত্রী,প্রধান বিচারপতি এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতাকে নিয়ে তৈরি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি।নরেন্দ্র মোদি সরকার নির্বাচন কমিশনকে বশে রাখতে চাইছে বলে ২০১৫ সালে জনৈক অনুপ বার্নওয়াল নির্বাচন কমিশনের সদস্য নিয়োগে কেন্দ্রের অনুশীলনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন।পরে একই বিষয়ে শীর্ষ আদালতে আরও মামলা হয়। ২০১৮ সালের অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ সব মামলা একত্রিত করে বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠায়।গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিচারপতি কে এম জোসেফের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। প্রশান্ত ভূষণ,তুষার মেহতা, দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল সহ বাঘা বাঘা আইনজীবী বিতর্কে অংশ নেন।রায়দান হয়। গত ২ মার্চ।সে এক দীর্ঘ, অসামান্য রায়। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন বলতে কী বোঝানো উচিত,ওই রায়ে তার চমৎকৃত লিখিত ব্যাখ্যা আছে। স্থানাভাবে এইটুকু উল্লেখ থাক, গত বছরের ১৮ নভেম্বর কেন্দ্রীয় সরকারের ভারী শিল্পমন্ত্রকের সচিব পদে স্বেচ্ছাবসর নেন অরুণ গয়াল। ঠিক তার পরদিন কেন্দ্র তাকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করে। পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ শ্রীগয়ালের নিয়োগকে ‘রহস্যময়’ আখ্যা দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যে বলেছিল, উনি যেন স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার সময়ই জানতেন, উনাকে নিয়োগ করা হতে চলেছে।’ সরকারের, মতান্তরে প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তে কোনও আজ্ঞাবহ আমলা সাংবিধানিক দায়িত্বে নিযুক্ত হলে ক্ষমতার অপপ্রয়োগের উদাহরণ আমাদের দেশে ভুরি ভুরি।অথচ সেই রায়ের চার মাস অতিক্রান্তের পরেও মোদি সরকার সদর্থক বা নঞর্থক কোনও সাড়াই দেয়নি।অতএব দুঃশাসন কে রুধিবে,সে প্রশ্ন ওঠা অবাস্তর নয়।পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাসে দীর্ণ, রক্তস্নাত নির্বাচন দেখার পর সে রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিন্হার ভূমিকা দেখে মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে একজন দলদাস, কর্তাভজা, অমেরুদণ্ডী, অকর্মণ্য আমলার হাতে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্পন্ন করানোর দায়িত্ব বর্তালে এর পরিণতি কত ভয়ঙ্কর হতে পারে। দলদাসত্বের এমন পরাকাষ্ঠা দেখে সুপ্রিম রায়ের সূত্র ধরে বলতে হয়, গণতন্ত্র রক্ষিত হয়, এমন সাংবিধানিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার তথা সেই সরকারের প্রশাসনিক প্রধানের একার সিদ্ধান্ত কাম্য তো নয়ই, বাঞ্ছনীয়ও নয়। ব্যালটের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার অর্থ স্বজনপোষণ ও স্বেচ্ছাচারিতা কায়েম করার লাইসেন্স পাওয়া নয়। সাংবিধানিক পদের অপপ্রয়োগ, বিচ্যুতি,দলদাসত্বের প্রাতিষ্ঠানিক নিরাময় দরকার। সেক্ষেত্রে চার মাস আগে সাংবিধানিক বেঞ্চের ওই রায় কিন্তু ধন্বন্তরির ভূমিকা নিতে পারে।হিংস্র রাজনীতি নিরবচ্ছিন্ন প্রমত্ততা,এক অপার অরাজকতা বঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটে আজকের নতুন নয়। প্রশ্নটা শুধু পশ্চিমবঙ্গ বলে নয়, নির্বাচনের পবিত্রতা রক্ষার। শাসকের প্রচ্ছন্ন ইশারায় অন্য রাজ্যেও অরাজকতার এমন দৃশ্যপট তৈরি হতে পারে। দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলে পরিচিত কলকাতার নাগরিক সমাজ থেকে গণতন্ত্র ব্রক্ষার সেই আন্দোলন শুরু হতে পারে। পরে তা অনুসৃত হতে পারে দেশের বাকি রাজ্যগুলিতেও। রাজ্য সরকারের একক সিদ্ধান্তে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার (পঞ্চায়েত এবং পৌর নির্বাচনের ভার যার হাতে ন্যস্ত) নিয়োগের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে কোনও জনস্বার্থ মামলা দায়ের হতেই পারে। কেবলমাত্র তাৎক্ষণিক লাভ- লোকসানের অঙ্ক না কষে এ ব্যাপারে বিরোধীরাও অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারেন।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

23 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

23 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago