দান-খয়রাতির ভণ্ড!!
নির্বাচনের সময় এলেই ভোটারদের মন পেতে তাদের প্রলুব্ধ করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর তরফে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি এবং দান-খয়রাতির হিড়িক পড়ে যায়।ভোটারদের বিনামূল্যে সুযোগসুবিধা পাইয়ে দেওয়ার এই শর্টকাট রাজনীতি যদিও নতুন কোনও বিষয় নয়।যুগ যুগ ধরেই এই দেশের রাজনীতিতে দান-খয়রাতির বিষয়টি চলে আসছে।কিন্তু সময় যত যাচ্ছে এই পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতির ব্যাধি ক্রমেই যেন গণতন্ত্রের মাথায় জাঁকিয়ে বসছে।ভোট পাওয়ার জন্য সহজসরল ভোটারদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগসুবিধা ও পরিষেবা পাইয়ে দেওয়ার জন্য ভোটের প্রতিশ্রুতির বিষয়টি সাম্প্রতিক রাজনীতিতে এতটাই জায়গা দখল করে নিয়েছে যা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত।শুধু তাই নয়, এই খয়রাতি ও দানের প্রতিশ্রুতির ফলে দেশের অর্থনীতির উপর যে বিশেষ প্রভাব পড়ছে তা আগামীদিনের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে চলেছে। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো ভোট জেতার লক্ষ্যে নির্বাচনের প্রাক্কালে ভোটারদের মধ্যে যেভাবে দেদার প্রতিশ্রুতি বিলিয়ে থাকে, ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়।আর সেই অর্থ রাজনৈতিক দলগুলোর পকেট থেকে আসে না। সবটাই জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে ক্ষমতাসীন দল তা বিলি বন্টন করে থাকে। এর ফলে একটি সরকারের যে নির্দিষ্ট পরিমাণ বাজেট থাকে,সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে গিয়ে দান-খয়রাতি বাবদ অর্থ খরচের পরিমাণ বাজেটের থেকে অনেক বেশি হয়ে যায়। এতেই দেশের ঘাড়ে আর্থিক বোঝা চাপে।বকলমে সেই অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা জনগণের কাছ থেকেই আবার ট্যাক্স বাবদ আদায় করা হয়।এইভাবে এ দেশের রাজনীতিতে যে অনৈতিক কাজকর্ম ও অবাঞ্ছিত চক্র গড়ে উঠছে তা ভবিষ্যৎ অর্থনীতিতে গুরুতর সমস্যা ডেকে আনছে।আসন্ন মহারাষ্ট্র ভোটকে সামনে রেখে যুযুধান দুই পক্ষই নির্বাচনি ইস্তাহার প্রকাশ করেছে।বিজেপির নেতৃত্বে মহাযুতি জোট ইস্তাহারে বলেছে তারা ক্ষমতায় এলে মহিলাদের প্রতি মাসে ২১০০ টাকা করে নগদ সাহায্য দেবে।পাল্টা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া মঞ্চের মহাবিকাশ আঘাড়ী বলেছে, তারা ক্ষমতায় এলে মহিলাদের মাসে ৩ হাজার টাকা করে অর্থসাহায্য দেবে এবং বিনামূল্যে বাসে যাতায়াত করতে পারবেন। দুই শিবিরের বাদবাকি প্রতিশ্রুতির কথা এখানে নাইবা বলা হলো।এর আগে দিল্লীতে আপ পাটি নির্বাচনে জল ও বিদ্যুতে ভর্তুকি দিয়েছিল।ইতিপূর্বে কর্ণাটকেও রাজনীতির একই ধরনের দান ও খয়রাতি মডেল কার্যকরী হতে দেখা গেছে।পাঞ্জাব নির্বাচনের আগেও আপের তরফে ১৮ বছর বয়সি প্রত্যেক মহিলাকে প্রতি মাসে হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল।তারপরে কংগ্রেস সেখানে প্রত্যেক গৃহবধূকে মাসে ২ হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। বলেছে বছরে ৮টি গ্যাস
সিমিয়ার কলেজের ছাত্রীদের জন্য স্কুটি, দ্বাদশ শ্রেণী উত্তীর্ণের জন্য ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। উত্তরপ্রদেশের ভোটে দ্বাদশ পাঠরত ছাত্রীদের ১টি করে স্মার্টফোন,১০ লাখ টাকার চিকিৎসা বিমার কথাও বলেছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।দেখা যাচ্ছে এইসব প্রতিশ্রুতিতে জনসাধারণও প্রভাবিত হচ্ছেন।এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে রাজনৈতিক দলগুলোর এই দান-খয়রাতি বন্ধ করতে একাধিক জনস্বার্থের মামলাও হয়েছিল।কিন্তু কোনও কিছুতেই ভোটের এই দান-খয়রাতির উপর লাগাম পরানো যায়নি।যদিও রাজনৈতিক দলগুলির এই নির্লজ্জ খয়রাতি ও ভোটে ঘুষ দেওয়ার প্রবণতার বিরুদ্ধে চরম বিতর্কের ঝড় উঠেছে।কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।কারণ আদালতে বিচারের মাধ্যমে এর সমাধান হওয়া সম্ভব নয়।আদালত বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কাঁধে এর নিয়ন্ত্রণের দায় চাপিয়ে খালাস।আর কমিশন যেহেতু সরকার নিয়ন্ত্রিত,তাই তারা ঠুটো জগন্নাথ।এতে দেশের অর্থনীতিই শুধু বড় সংকটে পড়ছে না,বরং ভারতীয় রাজনীতির কার্যকারিতা আজ বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে।মাত্রাজ্ঞান না রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি এবং তা কার্যকর করতে গিয়ে সরকারী কোষাগারের উপর যেভাবে চাপ বাড়ছে,তাতে দেশের সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের উপর আর্থিক বোঝা,করের চাপ এমন মাত্রায় গিয়ে দাঁড়াবে, একদিন দেশের ৮০ ভাগ মানুষের পক্ষে আর বেঁচেবর্তে থাকা সম্ভব হবে না।সেইদিন খুব বেশি দূরে নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর এই ভণ্ড রাজনীতিই এই দেশকে ভোগাবে।