দায় সরকারেরও!!
ত্রিপুরায় সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ের একটি হলো বিদ্যুৎ পরিষেবা। বর্তমান সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর সবচেয়ে বেশি যে ক্ষেত্রটিতে জনদুর্ভোগ বেড়েছে এর অন্যতম একটি হোল বিদ্যুৎ। আজ থেকে প্রায় ছয় বছর আগে ২০১৮ সালে সরকার পরিবর্তনের পর রাজ্যের ৫ টি বিদ্যুৎ ডিভিশনের বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্ব বেসরকারী একটি সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছিল বিজেপি জোট সরকার।তারপর থেকে এই রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবার অবনমন নিরন্তর ঘটে চলেছে।গত বৃহস্পতিবার রাতে সাক্রম বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে মহকুমা হাসপাতাল সংলগ্ন পথে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক যুবকের অকাল মৃত্যু ঘটে।কয়েক মিনিটের সামান্য একপশলা বৃষ্টিতে একটি বিদ্যুৎ পরিবাহী তার ছিঁড়ে রাস্তায় পড়ে থাকায়, রাতে বাড়ি ফেরার পথে সেই তারের সংস্পর্শে আসা মাত্রই তরতাজা এক যুবক বিদ্যুতে জড়িয়ে যান এবং প্রাণ হারান।এটা একেবারেই বিচ্ছিন্ন একটা ঘটনা নয়।এর আগেও রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ দপ্তর ও পরিষেবার দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারী এক সংস্থার গাফিলতির কারণে বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এই সাক্রমেরই হরিণা স্কুলের পেছনের পাড়ায় বিদ্যুৎপরিবাহী তার জমিতে পড়ে থাকায় এক ব্যক্তি প্রান হারিয়েছিলেন।এর আগে দৌলবাড়িতেও একই কারণে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে তিনজন প্রাণ হারান।কমলপুর, আমবাসা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এ ধরনের একাধিক ঘটনায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু ও অগনিত গৃহপালিত পশু মারা গেছে। সাধারণত এই সময়ে বেশিরভাগ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ হয় বিদ্যুতের পরিবাহী লাইনের উপর গাছ ভেঙে পড়ার কারণে।এটি সাধারণত শক্তিশালী বাতাস ও বজ্র বিদ্যুৎ জনিত বিপর্যয়ের কারণেই হয়।কখনো খুঁটি ভেঙে পড়ার কারণেও এমনটা হয়ে থাকে।এটি বছরের কয়েকবার হয় এবং কয়েকশ বাড়ি কয়েকঘন্টা বিদ্যুৎহীন থাকে।কিন্তু এই রাজ্যে বিদ্যুতের বারমাস্যার শেষ নেই। প্রখর দগ্ধ দিনে, খটখটে রোদের উত্তাপে যখন মানুষ দিশাহারা,তখনও বিদ্যুৎবিহীন রাত কাটাতে হয় ভোক্তাকে। শুধু রাত কেন,দিনের মধ্যেও একাধিকবার এই বিদ্যুৎযন্ত্রণা নিত্যদিনের ঘটনা
ঝড়-জলের দেখা নেই, আচমকাই বিনা ঘোষণায় ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎহীন আবদ্ধ জীবন কাটাতে হবে গ্রাহককে।আরও উদ্বেগের ঘটনা হলো, গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় একবার বিদ্যুৎ পরিষেবা বিকল হয়ে গেলে, তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে ৩-৪ দিন সময়ও ব্যয়িত হচ্ছে।গ্রাহকরা নির্দিষ্ট সময়ে প্রতি মাসে নিগমের নির্ধারিত হারে বিদ্যুৎ মাশুল বাবদ চড়া অর্থ মিটিয়ে দেওয়ার পরেও পরিষেবার এতটুকুও অগ্রগতি গত ৫-৬ বছরে দেখা যায়নি।অথচ বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক ও ত্রুটিমুক্ত রাখার জন্য নিয়মিত সংস্কার, খুঁটি পরিবর্তন, তদারকি, ট্রান্সফর্মারের গোলযোগ সারাই করার মতো পদক্ষেপগুলো নির্দিষ্ট নিয়মে করা হচ্ছে না।বিপজ্জনক অবস্থায় বহু স্থানে বিদ্যুতের তার ঝুলে থাকলেও কুম্ভকর্ণ নিগম আর তাদের এজেন্ট বেসরকারী সংস্থার তরফে সেদিকে কোনও নজর নেই। নিম্ন মানের বহু পুরোনো ট্রান্সফরমার দিয়ে বিদ্যুৎ বিতরণ ও পরিবাহী ব্যবস্থাকে চালু রাখার শর্টকাট পদ্ধতিতে নিগম কাজ করে চলেছে। আর এর খেসারত গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। নিগম পরিচালকদের অকর্মণ্যতা, রাজ্য সরকারের দায়হীন মনোভাব,আর বেসরকারী সংস্থার বেলেল্লাপনায় সাধারণ মানুষ নাজেহাল অবস্থায় আছেন। প্রতিদিন এ রাজ্যে এমন কোন এলাকা নেই যেখানে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চপলতার বিভীষিকাময় পরিস্থিতি থেকে মানুষ নিস্তার পাচ্ছেন।অথচ বিদ্যুৎ লাইন সংস্কারের নামে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে মেরামতির কথা বলা হলেও এর কোন সদর্থক প্রতিফলন রাজ্যবাসীর অনুভবে ধরা পড়ছে না। হেল্পলাইনে অভিযোগ জানানোর নামে আরেকপ্রস্থ হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে ভোক্তাকে।সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা হলো, সাক্রমে বিদ্যুৎপরিবাহী তারে যুবকের মৃত্যুর ঘটনার দায় দপ্তরের মন্ত্রী বেসরকারী সংস্থার ঘাড়ে চাপিয়ে সরকার ও নিগমের দায়িত্ব ঝেরে ফেলতে চাইছেন।একটি মৃত্যুর ঘটনায় মৃতের বাড়িতে সহমর্মিতা ও শোক জানাতে মন্ত্রীর অন্তরাত্মা কেঁদে ওঠা এবং সেখানে ছুটে আসা অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য।কিছু তাই বলে বেসরকরী সংস্থার ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দিলেই সরকারের নিজের অপরাধ ও ব্যর্থতা আড়াল হয়ে যাবে না। এর বেহাল পরিষেবা দায় সরকারকেই বহন করতে হবে এবং এই বিপর্যয় দূর করতে সরকারকেই আন্তরিক হতে হবে।