দায় কমিশনেরই!
দেশজুড়ে প্রচণ্ড দাবদাহ চলছে।বিশেষ করে যে সমস্ত রাজ্যগুলিতে শেষ দফায় শনিবার ভোট হতে চলেছে সেই রাজ্যগুলিতে নজিরবিহীন দাবদাহ চলছে। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে যেমন- দিল্লী, পাঞ্জাব, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, চণ্ডীগড় সহ বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা,পশ্চিমবঙ্গে দাবদাহ চলছে।এর মধ্যে দিল্লী, রাজস্থানে ভোট হয়ে গেছে। বাদবাকি রাজ্যগুলিতে ভোট হবে শেষ দফায়,শনিবার। দিল্লীতে গত ২ দিন আগে তাপমাত্রা প্রায় ৫৩° সেলসিয়াসে এসে দাঁড়ায়। এত অসহনীয় গরমের মধ্যে দেশের ভোট চলছে।কেন এই সময়ে দেশে ভোট করা হল তা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির তরফে।ভোট করা হলেও কেন ভোট প্রক্রিয়াকে এত লম্বা করা হল সে প্রশ্নেরও জবাব নেই নির্বাচন কমিশনের কাছে।দেশে দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে ভোট চলছে।সমস্ত সরকারী কাজকর্ম বন্ধ। ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল এক দেশে ভোটকে ঘিরে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে।তিন মাস ধরে ভোট চলছে দেশে সব কিছু বন্ধ রেখে।আর মানুষকে ব্যাপক হারে ভোট দিতে আহ্বান জানাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলি। অন্যদিকে,দেশের দিকে দিকে জলের জন্য হাহাকার, বিদ্যুৎ যন্ত্রণা, কৃষক আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে আকছার। নির্বাচন কমিশন গত ১৬ মার্চ দেশে যখন সাত দফা ভোট করার ঘোষণা করে সেসময়ই প্রশ্ন ওঠে যে,এত লম্বা ভোটগ্রহণ কেন?কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাছে এর কোনও জবাব পাওয়া যায়নি। বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করে যে,শুধু কেন্দ্রের শাসকদলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে শাসকদলের করা ম্যাপ অনুযায়ীই নির্বাচন কমিশই এই সাত দফার ভোট নির্ঘন্ট জারি করেছে।অথচ এই সময় দেশজুড়ে চলে প্রচণ্ড দাবদাহ। এটা সবার জানার বিষয়। কিন্তু এদিকে কেউ নজর দিতে চায়নি।নির্বাচনি কমিশনও এদিকে কোনও নজরই দেয়নি।শুধু ভোটারদের জন্য শামিয়ানা, জল ইত্যাদির ব্যবস্থা করলেই দায় এড়ানো যায় না। আরও অনেক দায় রয়েছে কমিশনের।কিন্তু নির্বাচন কমিশন এর ধার ধারেনি। এরই মধ্যে দেশের দক্ষিণ প্রান্তে বর্ষা প্রবেশ করে গেছে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই। সেসময় দেশে উত্তর এবং মধ্য ভারত,পূর্ব ভারত জ্বলছে গরমে।যে উত্তর এবং পূর্ব ভারতের একাংশে শেষ দফা ভোট রয়েছে শনিবার।এর মধ্যে বিহার থেকে যে খবর এসেছে তাতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।বিহারে গত তিনদিনে দাবদাহের বলি হয়েছেন ৪৪ জন।এর মধ্যে বৃহস্পতিবাররই মাত্র ২ ঘণ্টার ব্যবধানে মারা গেছেন ১৫ জন।রাজ্যের নির্বাচন আধিকারিক জানান, গতকাল দাবদাহের বলি হয়েছেন ৪ জন নির্বাচন কর্মীও।এর মধ্যে একজন নিরাপত্তাকর্মীও রয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরে ১৩ জন ভোটকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। ওড়িশায় মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের।
এদিকে দেশের আবহাওয়া বিভাগ যে তথ্য সামনে এনেছে তা আঁতকে ওঠার মতো। উত্তর এবং মধ্য, পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে যে তীব্র দাবদাহ চলছে তাতে গরমের তাপমাত্রা চলছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫°-৬°বেশি।চণ্ডীগড়ে শনিবার ভোট রয়েছে। সেখানে তাপমাত্রা চলছে ৪৭° সেলসিয়াসের ঘরে। উত্তরপ্রদেশেরও তেরো আসনে শনিবার শেষ দফায় ভোট। সেখানেও পারদ চলছে ৪৫-৪৭° সেলসিয়াসের ঘরে। ঝাড়খণ্ডেও তিন আসনে শনিবার শেষ দফায় ভোট রয়েছে।ওড়িশায়ও গরম চলছে ৪৩০ – ৪৭° সেলসিয়াসের ঘরে।
এই বীভৎস গরমের মধ্যে মানুষের বাড়ি থেকে বের হওয়াই সেখানে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।সেই অবস্থায় মানুষ কেন ভোটের লাইনে এসে দাঁড়াবেন? ভোটারদের এই তীব্র গরমে ভোটদানের জন্য এরপর কি আর উৎসাহ থাকবে?এবারের লোকসভা নির্বাচনে প্রথম দফা থেকেই ভোট কম পড়ছে।এর জন্য অন্যতম কারণ হিসাবে তীব্র গরমকেই অনেকেই মনে করছেন।
এত দীর্ঘ ভোট করিয়ে ভোটারদের সামনে এখন নির্বাচন কমিশনই যেন চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়িয়েছে।তীব্র গরমে দেশব্যাপী আড়াই মাস কাল ধরে নির্বাচন কমিশন ভোট করিয়ে দেশের কী কল্যাণ করেছেন তার জবাব সময়ই দেবে।আপাতত তীব্র গরমে ভোটারদের লাইন ধরিয়ে কমিশন যে কষ্ট দিচ্ছে এর জন্য নির্বাচন কমিশনকে এর দায় নিতে হবে।এছাড়াও নির্বাচনের সাথে যুক্ত লাখো কর্মচারী, নিরাপত্তা কর্মীদেরও যে অমানুষিক কষ্ট করিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের ঠাণ্ডা ঘরে বাস করা বাবুদের এর দায়ও নিতে হবে।সর্বোপরি তীব্র দাবদাহের জেরে ভোটকর্মী থেকে শুরু করে নিরাপত্তাকর্মী, এমনকী কোন ভোটারেরও যদি কোনও প্রাণহানি ঘটে তাহলে এর দায়ও নিতে হবে কমিশনকেই।ভবিষ্যতে কমিশনকে ভোট করার আগে অনেক কিছুই ভাবতে হবে।