দায় লইয়া অগ্রগমণ!

 দায় লইয়া অগ্রগমণ!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

এয়োদশ বিধানসভায় এইবার শুরু হইবে বিধায়কগণের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আর মন্ত্রিসভা গঠনের আয়োজন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হইলে আবার কাজ শুরু করিবে প্রশাসন । এই কথার অর্থ হইলো বিজেপির সরকারের মেয়াদ শেষ হইবার আগেই আবার বিজেপিরই সরকার গঠন হইতেছে। সকল কিছু আগের মতনই রহিয়াছে, এইবার কেবল কাজ শুরু হইবে সামান্য বিরতির পর। বিজেপির পূর্বতন সরকারের মুখ, সেনাপতি ডা. মানিক সাহা যে এইবারও সরকারের মুখ হইবেন তাহাতে সন্দেহ নাই।দলে তাহার সজ্জন ও ভদ্রজনোচিত ভাবমূর্তি রাজ্যবাসীকেও বিমোহিত করিয়াছে। ইহার প্রমাণ ২৩ শের নির্বাচন। এই নির্বাচনে রাজ্যের নানান প্রান্তে দলের প্রার্থীরা নানান পরিস্থিতিতে, নানান ইস্যুতে ভর করিয়া জয় পাইয়াছেন। কিন্তু দেখা গিয়াছে আট বড়দোয়ালী কেন্দ্রে তিনি যে জয় হাসিল করিয়াছেন তাহা ছিল কঠিন জয়। একজন সিজনড, পোড়খাওয়া রাজনীতিকের বিরুদ্ধে একজন সজ্জন ব্যক্তির লড়াই হইয়াছে এই কেন্দ্রে, যে ব্যক্তি রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী পদাধিকারীও বটে। ছয় সাত মাসের এক খণ্ডিত সময়কালের জন্য তিনি উপনির্বাচনে আসিয়াছিলেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করিয়াছেন। এইবার আসিয়াছেন সম্পূর্ণ সময়ের জন্য।ইহাই পার্থক্য থাকিতেছে। যে কাজ স্বল্প সময়ের মধ্যে শেষ করিতে পারেন নাই, সেই সকল কাজ এইবার সমাধা করিবার পাশাপাশি রাজ্যের উন্নয়নে নতুন নতুন উদ্যোগ আয়োজন তাহার নেতৃত্বে দেখিবে ত্রিপুরাবাসী।২০২৩ বিধানসভার হিংসামুক্ত অবাধ যে নির্বাচন হইয়া গেল তাহাতে রাজ্যের মানুষ বিজেপির ওপরেই আবার তাহাদের বিশ্বাস ব্যক্ত করিলেন। ইহার ফলে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার সরকারের দায় আরও বাড়িয়া গেল। সর্বোপরি পূর্বতন বিজেপি সরকারের আমলের এমন কিছু ভ্রান্তি বা কাজ যাহা রাজ্যের মানুষ ভালোভাবে নেন নাই সেই সকল বিষয়ের দায় কিন্তু মানিক সাহাকেই নিতে হইয়াছিল, যদিও সেইসকল বিষয় তাহার মুখ্যমন্ত্রিত্বকালের ছিল না। যদিও তিনি সেই সকল অভিযোগের জবাব দিয়াছেন, মানুষকে সন্তুষ্ট করিতেও পারিয়াছিলেন। আর তাহারই প্রমাণ হইলো তেইশের জয়।এই কথা ঠিক যে, ২০১৮ সালের তুলনায় নানান কারণে বিজেপির ভোট, আসন সংখ্যা সকলই কমিয়াছে। দলীয় নেতৃবর্গ নিশ্চয়ই সেই সকল বিষয় পর্যালোচনা, মন্থন সভা করিবে। তবে এই সকল ঘটনার সঠিক কারণ নির্ণীত হইলেই ভালো। আর ভালো সেই সকল ঘটনা হইতে শিক্ষাগ্রহণ করিয়া ভবিষ্যতের পদচারণা। যদি বলা হয় বিরোধীদের উত্থাপিত হিংসা আর গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার ইস্যু, ভোটের স্লোগানকে মোকাবিলা করিয়াই বিজেপি ক্ষমতায় আসিয়াছে তাহা হইলে ইহাও বুঝিয়া লইতে হইবে ভোটের গণতান্ত্রিক আবহে রাজ্যের ভোটার শাসক বিরোধী সকল পক্ষের কথা শুনিয়া, বুঝিয়া, বিবেচনা করিয়া যাহাদের জয়ী করিয়াছে, এককথায় বলিতে হইবে, হিংসার বিরুদ্ধেই করিয়াছে। সাধারণ মানুষ কোনওরকম অশান্তি চাহিবে না ।
আবার বৃহৎ অংশের জনগণ কিন্তু সরকারের কাছে চাকরি কর্মসংস্থানের প্রত্যক্ষ সুযোগও দাবি করে না। তাহারা চায় সরকার কাজ করিয়া নিজের সংস্থান নিজে করিয়া লইবার মতন পরিবেশ তৈরি করিয়া দেওয়া হোক। বাকি বিষয়গুলি তাহারা নিজেরা নিজেদের উদ্যোগেই করিতে পারিবে। গড় মানুষ নিজের পায়ে নিজেই দাঁড়াইতে পছন্দ করেন। তাহারা চান শুধু কাজ করিবার মতন একখানা পরিবেশ। তাহাদের কথা সর্বাগ্রে ভাবিতে হইবে সরকারকে। আগেকার সরকার কখনওই ইহা ভাবে নাই এমন বলা যাইবে না তবে এই ভাবনাকে সংহত করিবে সরকার ইহাই কামনা থাকিবে সকল অংশের শান্তিকামী মানুষের। এই সময়ে বলিতে হয় আমাদের রাজ্যের নির্বাচনি সংঘর্ষের কথা। এই পরম্পরা অনেক প্রাচীন নহে। এই পরম্পরা এক আমদানি করা সংস্কৃতি। ইহাকে বন্ধ করিতে হইবে।এই সংস্কৃতি ত্রিপুরার মাটির নহে। ত্রিপুরাকে যাহারা ভালোবাসেন, সেইরকম প্রতিটি ত্রিপুরাবাসীর কর্তব্য হইলো ত্রিপুরার প্রাচীন সংস্কৃতিকে জাগ্রত করিয়া ভাবী প্রজন্মের সামনে সেই সুন্দর পরিবেশ ফিরাইয়া দেওয়া। ভোট আসিলে নানান দল নানান মত পথ লইয়া কথা বলিবে, ইহা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বর্ণিত রহিয়াছে। কিন্তু ভোটের পর সরকার আর যার যার নহে, সরকার সকলের। সকলকে এক সঙ্গে লইয়া চলিতে পারিলে তবেই দ্রুত উন্নত ত্রিপুরার অভীষ্টে পৌঁছানো সম্ভব। এই ক্ষেত্রে শাসক দলকেই সর্বাগ্রে ভূমিকা লইতে হয় ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.