দুই পুরোহিতের মারামারি!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দৈনিক সংবাদ অনলাইনঃ মন্দির পরিচালন কমিটির ব্যর্থতা ও মন্দিরের পুরোহিতদের মাত্রাতিরিক্ত লোভের কারনে চিরাচরিত ঐতিহ্য ম্লান হচ্ছে অমরপুর বাসিদের তথা রাজ্যের মানুষের ভক্তি শ্রদ্ধার ও ধর্মীয় আস্হার অন্যতম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মাতা মঙ্গল চন্ডী দেবীর মন্দির।
সম্প্রতি মাতা মঙ্গল চন্ডী দেবীকে চিরাচরিত নিয়ম লঙ্ঘন করে কতিপয় পুর্নার্থীদের দিয়ে স্নান করানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পুরোহিতের মধ্যে বিবাদের ঘটনা শেষে মারামারিতে গরায়। তারপর থানা পুলিশ এমনকি মামলা পর্যন্ত হয়। এতে মাতা মঙ্গল চন্ডী বাড়িতে উপস্থিত পুর্নার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয় এবং বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

শতবর্ষ প্রাচীন মাতা মঙ্গল চন্ডী দেবীর মন্দির পরিচালনার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। কমিটির মাথায় রয়েছেন পদাধিকার বলে অমরপুরের মহকুমা ম্যাজিসট্রেট। কমিটির সম্পাদক সহ অন্যান্য পদাধিকারীরা হলেন মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই মন্দির পরিচালন কমিটির সম্পাদক পদে রয়েছেন অমরপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিজয় সাহা।
অভিযোগ উঠেছে, মাতা মঙ্গল চন্ডী মন্দীরের পরিচালন কমিটির ব্যার্থতার জন্যই দিনের পর দিন কলুষিত হচ্ছে মাতা মঙ্গল চন্ডী মন্দীরের চিরাচরিত ঐতিহ্য। ভুলুন্ঠিত হচ্ছে মন্দীরের পবিত্রতা। বর্তমানে গাঁজাখোরদের আখরায় পরিনত হয়েছে মাতা মঙ্গল চন্ডী দেবীর মন্দির চত্বর।  মন্দীরের অভ্যন্তরে তথা গর্বগৃহে বিশেষ বিশেষ পুর্নার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়াকে নিয়েই এবং দক্ষিনা আদায় নিয়েই পুরোহিতদের মধ্যে যত ঝামেলার সুত্রপাত। আর এনিয়ে পুর্নার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষ দীর্ঘদিনের।
অমরপুরের মাতা মঙ্গলচন্ডী বাড়ির জন্মলগ্ন থেকেই মাতা মঙ্গল চন্ডী দেবীর পূজার্চনার দায়িত্বে রয়েছেন বংশানোক্রমিক ভাবে প্রয়াত রাজকুমার চক্রবর্তীর বংশধরেরা। সেই অনুযায়ি বর্তমানে প্রয়াত রাজ কুমার চক্রবর্তীর পপৌত্র বিশু চক্রবর্তী, জীবন চক্রবর্তী, কার্তিক চক্রবর্তী, হরিনারায়ন চক্রবর্তীরা পালাকরে মায়ের পূজার্চনার করে আসছেন। উল্লিখিত পুরোহিতরা প্রতি সপ্তাহে এক একজন পালা করে মায়ের পূজার্চনার দায়িত্বে থাকেন।

গত শনিবার মায়ের মন্দীরে পূজার্চনার দায়িত্বে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মী জীবন চক্রবর্তী। এদিন সকালে জীবন চক্রবর্তীর পুত্র কিশোর চক্রবর্তী মায়ের পূজোর প্রস্তুতি হিসাবে মায়ের স্নান পর্ব সেড়ে নিচ্ছিলেন। নাট মন্দীরে বসে ফুল,বেলপাতা গুছাচ্ছিলেন জীবন চক্রবর্তী। ঠিক সে সময় মন্দীরের অপর পুরোহিত তথা জীবন চক্রবর্তীর খুরতুতু ছোট ভাই বিশু চক্রবর্তী লাঠি নিয়ে এসে অতর্কিতে জীবন চক্রবর্তীর উপর হামলা করে। পিতাকে বাচাঁতে গিয়ে পুত্র কিশোর চক্রবর্তীও বিশু চক্রবর্তীর হাত থেকে রেহাই পায়নি। বিশু চক্রবর্তীর লাঠির আঘাতে পিতা পুত্র উভয়েই অল্প বিস্তর আহত হন। ঘটনা জানিয়ে বীরগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন জীবন চক্রবর্তী। কিন্ত এতবড় ঘটনা ঘটার পরেও পরিচালন কমিটির কাউকে চন্ডী বাড়িতে দেখা যায়নি।
ঘটনার পরদিন কমিটির সম্পাদক বিষয়টি পরিচালন কমিটির সভায় মিটমাট করে নেওয়া হবে বলে এবং কোন আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্যও বীরগঞ্জ থানায় জানিয়ে আসেন। ফলে বীরগঞ্জ থানার তরফে এখনও কোন আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এবিষয়ে বিশু চক্রবর্তীকে জিজ্ঞাসা করে হলে তিনি মারপিটের ঘটনা স্বীকার করে বলেন, মন্দিরের চিরাচরিত প্রথা ও ঐতিহ্য না মেনে মন্দীরের জানালা খোলা রাখা অবস্থায় বহিরাগত কতিপয় পুর্নার্থীদের দিয়ে মাকে স্নান করানোর দৃশ্য চাক্ষুস করে তিনি মাথা ঠিক রাখতে পারেন নি।

ফলে শিক্ষা দেওয়ার জন্যই তিনি বড়ভাই ও ভাতিজার উপর হাত তুলেছেন। এই ঘটনা ঘিরে মহকুমার ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এবিষয়ে মন্দীরের পরিচালন কমিটির সম্পাদক বিজয় সাহার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, মহকুমা ম্যাজিসট্রেট বর্তমানে ছুটিতে রয়েছেন। মহকুমা ম্যাজিসট্রেট ছুটি থেকে ফিরলেই কমিটির সভায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে।
প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক নেতা এবং ধনাঢ্য পরিবারের পুর্নার্থীদের জন্য মাতা মঙ্গল চন্ডী দেবীর মন্দিরের গর্বগৃহ অবারিত দ্বার। পুরোহিতকে মোটা দক্ষিনা দিলে কিংবা রাজনৈতিক নেতা নেত্রী হলে মন্দীরের গর্বগৃহে প্রবেশ করে পূজো দিতেও পারেন। এমনকি নিয়ম লঙ্ঘন করে প্রথা বহির্ভূত ভাবে মাকে স্নানও করাতে পারেন। গত কয়েক বছর ধরে এই ট্রেডিশান চলে আসছে অমরপুরের মাতা মঙ্গলচন্ডী মন্দিরে। তাছাড়াও কারনে অকারণে অতিরিক্ত দক্ষিনা আদায় করা,পুর্নার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার করা পুরোহিতদের নিত্য দিনের ঘটনা। মন্দিরের পূজার্চনার দায়িত্বে থাকা সকল পূজারীরাই একই দোষে দোষী হলেও পুরো বিষয়টি নিয়ে মন্দিরের বর্তমান পরিচালন কমিটির নিস্পৃহ ভূমিকায় সাধারণ পুর্নার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছে। ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর আঘাত হানা হচ্ছে অমরপুরের মাতা মঙ্গল চন্ডী মন্দীরে, এমনটাই অভিযোগ উঠেছে।

Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

17 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

18 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago