দুই যুবনেতার টানাপোড়েনে চরম হতাশ বিশালগড়বাসী!!

 দুই যুবনেতার টানাপোড়েনে চরম হতাশ বিশালগড়বাসী!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমান শাসকদলের তরুণ প্রজন্মের দুই যুবনেতার দড়ি টানাটানিতে চরম বিশালগড় বিধানসভার জনগণ।আর এই টানাপোড়েনের পিছনে রয়েছে দলের গোষ্ঠী বিভাজন এবং ক্ষমতার আস্ফালন।তার সাথে যুক্ত হয়েছে নিগো বাণিজ্য, জমির দালালি, পাচার বাণিজ্য এবং মাদক বাণিজ্য।এলাকাবাসীর অভিযোগ, বর্তমানে নিগো ও পাচার বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বিশালগড়।গোষ্ঠী বিবাদ এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, এখন প্রকাশ্যেই এক গোষ্ঠী অপর গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আঙুল তুলছে।বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। সাধারণ মানুষ অস্ত্রের আস্ফালন দেখছে।একে অপরের রক্ত ঝড়াচ্ছে।ক’দিন আগে বিশালগড়ের বিধায়ক নিজেই খুন হওয়ার আশঙ্কা করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। যা নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য। সব মিলিয়ে হতাশ বিশালগড়।অথচ দীর্ঘ বাম শাসনের পতন হয়ে রাজ্যে যখন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হয়েছিল, তখন আগরতলার সবচেয়ে কাছের একটি সুন্দর, সুশৃংখল ও পরিকল্পিত শহরের বাসিন্দারা আশায় বুক বেঁধেছিল এই ভেবে যে, তরুণ প্রজন্মের দুই উদ্যমী ও লড়াকু যুবনেতার হাত ধরে বিশালগড়ের উন্নয়ন এক অন্যমাত্রায় পৌঁছবে। তখন নবাদল বণিকের হাতে দেওয়া হয় বিজেপি যুব মোর্চার প্রদেশ সভাপতির দায়িত্ব।অন্যদিকে সুশান্ত দেবকে দেওয়া হয় সিপাহিজলা জেলার যুব মোর্চার সভাপতির দায়িত্ব। দুজনেই যুব সংগঠনকে আরও শক্তিশালী ও মজবুত করে দলকে একটি শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে সফল হয়।২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে সুশান্ত দেবকে বিশালগড় থেকে বিধায়ক নির্বাচিত করে প্রদেশ যুব মোর্চার প্রদেশ সভাপতির দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। অন্যদিকে নবাদল বণিককে রাজ্যের শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে বসানো হয়।গত এক বছরের সময়কালের মধ্যে নবাদলের নেতৃত্বে রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগম রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে একটা রেকর্ড সৃষ্টি করে।কিন্তু বিশালগড় মহকুমার জন্য শিল্প স্থাপনের মত কিছু করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। অভিযোগ মহকুমাবাসীর স্বার্থে বড় কিছু একটা করতে গেলেই নাকি বাধা আসে। অপরদিকে বিশালগড়ের বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে সুশান্ত দেবের পক্ষেও তেমন বড় কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে বিধানসভা এলাকার প্রত্যেকটি বুথে জনসম্পর্কের মাধ্যমে ভোটারদের সাথে একটা নিবিড় সম্পর্ক তৈরির আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।পাশাপাশি বেশ কয়েকটি এলাকায় সিসি রোড তৈরির মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা,পাণীয় জলের সুবন্দোবস্ত করা, শহরের সৌন্দর্যায়ন বৃদ্ধির মত বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এটাও বাস্তব, এই সময়ের মধ্যে বিশালগড়ে, নিগো বাণিজ্য, চিনির রমরমা পাচার, নেশা সামগ্রীর বাড়বাড়ন্তে যুবসমাজ ধ্বংসের পথে।তাছাড়া বাইপাসে চুরি ছিনতাই, যান দুর্ঘটনা বৃদ্ধি, জমির দালালি, রাজনৈতিক সংঘর্ষ ঘিরে দমনপীড়ন, বিরোধীদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, মামলা পাল্টা মামলা, স্বদলীয় কর্মীদের মধ্যে মারপিট, পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা সহ বেশ কিছু ইস্যুতে বিশালগড়বাসী অতিষ্ঠ। সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে বিভিন্ন সরকারী অফিস কাছারি বিশালগড়ে আনার পরিবর্তে, অফিস চলে যাচ্ছে অন্যত্র। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালে চত্বরে থাকা সিএমও অফিসটি চলে গেছে বিশ্রামগঞ্জে পূর্ত দপ্তরের অধীন ড্রিংকিং ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটাইজেশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনীয়ারের অফিসও চলে গেছে বিশ্রামগঞ্জে।আর বিশালগড় ব্লক চত্বরে থাকা বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসটিও অন্যত্র স্থানান্তরের চিন্তাভাবনা চলছে বলে খবর। এতে বিশালগড়বাসীর লাভ না ক্ষতি?বিশালগড়ের বিধায়ক তথা অভিভাবক যেহেতু সুশান্ত দেব, তাই এগুলির দায়ভারও উনার উপরই বার্তায়।তবে এটাও ঠিক, উনার আপ্রাণ প্রচেষ্টাতেই কেন্দ্রীয় সরকারের ড্রিম প্রজেক্টগুলির মধ্যে অন্যতম দিব্যাঙ্গদের জন্য ইন্সট্রুমেন্টাল ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট সারা রাজ্যের মধ্যে একমাত্র বিশালগড়ের পূর্ব লক্ষ্মীবিলেই তৈরি হচ্ছে। যদিও এক বছর আগে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু রাস্তা প্রশস্তকরণ সহ কিছু জমি সংক্রান্ত সমস্যার কারণে প্রকল্পটি সম্পন্ন হতে কিছুটা দেরি হচ্ছে বলে খবর। অন্যদিকে গোটা মহকুমা জুড়ে বিরোধীদের ভূমিকাও প্রশ্নচিহ্নের মুখে।কারণ গণতন্ত্রে বিরোধীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে সরকার তথা প্রশাসনকে সঠিক পথে পরিচালনা করাই বিরোধীদের নৈতিক কর্তব্য। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, গোটা মহকুমা জুড়ে বিরোধীদের ভূমিকা কার্যত শূন্য।তারা শুধু ভোটের রাজনীতিতেই ব্যস্ত বলে অভিযোগ।নির্বাচন এগিয়ে এলেই তাদের কর্মসূচি লক্ষ্য করা যায়।ভোটপর্ব মিটে যেতেই বিরোধী দলের নেতৃত্বরা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ। ফলে গোটা মহকুমাজুড়ে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারগুলি প্রতিষ্ঠিত করার পক্ষে সওয়াল করার কেউ নেই।সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিবাদ ধিক্কার জানানোর মধ্যেই বিরোধীদের কর্মসূচি সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে পুলিশ প্রশাসনের কথা তো না বলাই শ্রেয়।বেশ কয়েকটি ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণ পুলিশ প্রশাসনের উপর আস্থা হারিয়ে নিজেরা আইন হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা সকলেরই জানা।বোলেরো ভর্তি চিনি বাংলাদেশে পাচার করতে গিয়ে গজারিয়া এলাকায় গাড়ির ধাক্কায় এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনা, নিগো বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে বিশালগড় এসডিপিও অফিস সংলগ্ন ডিডব্লিউএসের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনীয়ার অফিসের সাপও আদিবালোকে মারপিটের ঘটনা এবং ঘনিয়ামারা এলাকায় এক কংগ্রেস কর্মীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।ফলে সাধারণ মানুষের পুলিশ প্রশাসনের উপর আস্থা এখন আগের তুলনায় অনেকটাই তলানিতে।অথচ বিধায়ক সুশান্ত দেব ও টিআইডিসি চেয়ারম্যান নবাদল বণিক দুজনেই বিশালগড়বাসীর গর্ব।দুজনেই শাসকদলের উজ্জ্বল নক্ষত্র।তা সত্ত্বেও বিশেষ প্রয়োজনে কেউ নবাদল বণিকের কাছে গেলে বিধায়ক দূরে ঠেলে দেন। অন্যদিকে বিধায়কের কাছে গেলে নবাদল বণিক দূরে ঠেলে দেন বলে অভিযোগ। এই দুই পক্ষের জাঁতাকলে পড়ে বিশালগড়ের সাধারণ মানুষের এখন খুবই নাজেহাল অবস্থা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.