দুর্গত মানুষের হাহাকার!!
পৃথিবীতে সৃষ্টির পাশাপাশি ধংসও (প্রলয়)একইভাবে বিরাজমান।অনেকের মতে, পৃথিবীর উপর যখন সভ্যতার বোঝা স্থানুর মতন চেপে বসে,হয়ত তখনই পৃথিবীর বুকে নেমে আসে কোনও না কোনও বিপর্যয়ের খাঁড়া।যা গোটা পৃথিবীকে, গোটা সভ্যতাকে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে।এই পৃথিবীতে বিপর্যয়কে মোটামুটি দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়।একটি হলো মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়, আর অন্যটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়। প্রকৃতির রোষানলের কাছে মানুষ যে কতটা অসহায়, তা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলে মানুষ অনুধাবন করতে পারে।সভ্যতার আস্ফালন যতই তীব্র হোক না কেন, প্রকৃতির অনন্ত শক্তির কাছে তা অতি তুচ্ছ।প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলো মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে প্রকৃতির নিজস্ব খেয়াল অনুসারে পরিচালিত এমন এক বিধ্বংসী প্রক্রিয়া যা বিপুল পরিমাণ পার্থিব সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি থেকে শুরু করে জীবনহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের রং, রূপ, সংজ্ঞা, কারণ সবই পাল্টে গেছে।পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জলবায়ুর পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণকেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করছেন, যা এককথায় মনুষ্যসৃষ্ট।এর থেকে পরিত্রাণের একটাই উপায়-জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষা করা এবং পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা।গোটা পৃথিবীর মানব সমাজ এই বিষয়টিকে যতদিন উপেক্ষা করে যাবে,ততদিন এই ধরণের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে।এ নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।
সম্প্রতি আমাদের রাজ্যে ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৩২ জনের প্রাণ গেছে।রাজ্যের আট জেলাই বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে গোমতী ও দক্ষিণ জেলার।ওই দুই জেলার আপামর মানুষ একেবারে বিপর্যস্ত।সবাই বলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কারও হাত নেই।বিপর্যয় কখন আসবে,তা আগে থেকে বলে করে আসে না।কিন্তু বর্তমান আধুনিক সমাজে এই ধারণাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে দিয়েছে বিজ্ঞান।পরিবেশ বিজ্ঞানীরা এখন বিপর্যয়ের পূর্বাভাস দিয়ে সতর্ক করে দেন।ফলে বিপর্যয় মোকাবিলায় এখন আগে থেকেই নানা প্রস্তুতি নিয়ে রাখা যায়।কিন্তু রাজ্যের সাম্প্রতিক বন্যার আগাম পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও, আমরা কি বিপর্যয় মোকাবিলায় সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পেরেছি?এই প্রশ্নই এখন সবথেকে বড় হয়ে উঠেছে।কেননা, গত ১৯ আগষ্ট থেকে আজ পর্যন্ত গোটা রাজ্যের মানুষ যে ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে দিন যাপন করেছে, তাতে এ কথা বলতে কোনও দ্বিধা নেই যে বিপর্যয় মোকাবিলায় সরকার এবং প্রশাসন কোনও প্রস্তুতিই নেয়নি।
বন্যাকবলিত এলাকা থেকে জলবন্দি মানুষকে উদ্ধার করা থেকে শুরু করে, অসহায় মানুষের কাছে দ্রুতগতিতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া, সব ক্ষেত্রেই সরকার ও প্রশাসন সফল-এই কথা জোর দিয়ে একেবারেই বলা যাবে না। একমাত্র ত্রাণ শিবিরগুলি
ছাড়া গোটা রাজ্যে সরকারী উদ্যোগ অসহায় মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ এখনও শূন্য।চতুর্দিকে দুর্গত মানুষের হাহাকার চলছে।এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। তাঁর প্রতিদিনই প্রচুর ত্রাণসামগ্রী দিয়ে বন্যাকবলিত দুর্গত মানুষের কাছ ছুটে যাচ্ছে।এই উদ্যোগ আজও অব্যাহত আছে। সাধারণ মানুষ এভাবে দুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে না এলে কী পরিস্থিতি হতো? তা সহজেই অনুমেয়। খবরে প্রকাশ, রাজ্যের ভয়াবহ বন্যায় মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে অনুদানের হিড়িক পড়েছে। গত দশদিনে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে যে পরিমাণ অর্থ জমা পড়েছে তা একশো কোটি ছাড়িয়ে গেছে।প্রশ্ন হচ্ছে, এই অর্থ খরচ হবে কবে? মানুষের কষ্ট, মানুষের দুঃখ, মানুষের হাহাকার লাঘবে প্রয়োজনের সময় যদি এই অর্থ খরচই না করা যায়, তাহলে কী লাভ মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল স্ফীত করে? এই প্রশ্ন কিন্তু উঠেছে।