দুর্নীতি ও ভারত।।

দুর্নীতি এ দেশে এক বহুল প্রচারিত শব্দ। দুর্নীতি অর্থাৎ নীতি না দু থাকা। এই শব্দটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয় রাজনীতির ক্ষেত্রে। দুর্নীতি-এই কথাটি বেশিরভাগ ব্যবহৃত হয় নেতামন্ত্রী এবং
প্রশাসনিক আমলা, আধিকারিকদের ক্ষেত্রে।দুর্নীতির দায়ে নেতামন্ত্রীদের জেল, জরিমানা এমনকী প্রশাসনিক আধিকারিকদের জেল জরিমানার কথা এ দেশের জনগণ মিডিয়া মারফত জেনে থাকে মাঝে মধ্যেই। বিশেষ করে কোনও রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতায় বা শাসনে থাকে তখনই তাদের নেতামন্ত্রীদের বিরুদ্ধে প্রায়শই দুর্নীতির অভিযোগ উঠে।এই দুর্নীতির অভিযোগে অনেক রাজ্যে, দেশে অনেক সরকারের পতনও হয়।বিরোধীরা এই ইস্যুতে দেশজুড়ে রাজ্যজুড়ে এমন ইস্যু খাড়া করে যে জনমত সংগঠিত করে বিরোধী দল শাসককে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। সুতরাং দুর্নীতি একটি ভাইরাসের মতো এটির কখনও বিনাশ নেই।সবাই দুর্নীতি বিনাশ করার কথা বলে।কিন্তু দুর্নীতি বিনাশের কোন লক্ষণ নেই। শুধু ভারতের কথাই নয়, গোটা বিশ্বেই দুর্নীতি রয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশও রয়েছে এ কারণে।সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি নিয়ে একটি সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে।এই সমীক্ষা প্রকাশ করেছে জার্মানের একটি সংস্থা।এই সংস্থাটির নাম হলো ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। তাদের কাজ হলো বিশ্বের দেশগুলিতে সমীক্ষা চালিয়ে দুর্নীতির সূচক নির্ধারণ করা এবং সেই নিরিখে দেশগুলির ক্রমিক তালিকা প্রকাশিত করা। তাতে দেখা যাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় ভারত দুর্নীতির সূচকে আরও নিচে নামলে। অর্থাৎ ভারত অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে আরও স্বীকৃতি মিলেছে। ২০২৩ সালে ভারতের স্থান ছিল ৯৩। ২০২৪ সালে ভারতের স্থান দাঁড়িয়েছে ৯৬।
২০১৪ সালে মোদি সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন তাদের প্রতিশ্রুতি ছিল দেশে দুর্নীতি করে যারা কালোধন বিদেশে জমা করেছে তা দেশে ফিরিয়ে আনা। কিন্তু গত এগারোবছর ধরে দেশের ক্ষমতায় মোদি সরকার। কিন্তু কেউ জানে না। এক টাকা কালোধন দেশে ফিরছে কিনা।
মোদি জমানায় গত এগারো বছরে দুর্নীতির কিন্তু কম হয়নি। কিন্তু দুর্নীতি বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেই। শুধু বিরোধীদের বেলায় দুর্নীতি ইস্যুতে খড়গহস্ত শাসক। আবার উল্টোদিকে বিরোধী দলের যারা দুর্নীতিগ্রস্ত বিজেপি দল তাদের টেনে নিয়ে গেছে তখন ওয়াশিং মেশিনে তারা দুর্নীতিগ্রস্থ থেকে সাধু বলে গেছেন- এমন উদাহরণ মোদি জমানায় ভুরি ভুরি রয়েছে। সেই দেশ ভারতের যখন দুর্নীতির সূচকে আরও অবনমন ঘটে তখন এ দেশের প্রতিটি নাগরিকের মাথা হেট হয়ে যাওয়া উচিত।মোদি জমানায় রাফাল থেকে সড়ক-কম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেনি সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু সরকার নীরব। বিরোধীরা একের পর এক অভিযোগ তুললেও, সরব হলেও সরকার নীরব। ফলে কোনও ব্যবস্থা নেই।
দেশে যে দুর্নীতি কমছে না বরং বাড়ছে তারই প্রমাণ মিলেছে সাম্প্রতিক দুর্নীতি বিষয়ক সমীক্ষায়। বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে জার্মানির ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। দুর্নীতির প্রশ্নে কোন দেশ কোথায় দাঁড়িয়ে। তাই জানানো হয় এই আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টে। ১০০-এর মধ্যে কোন্ * দেশ কত নম্বর পাচ্ছে এর ভিত্তিতে তৈরি হয় তালিকা। যেমন কোনও দেশের স্কোর যদি ‘০’ হয় তাহলে এই দেশ সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত। ১০০ পেলে দুর্নীতি নেই বলে সেই দেশের স্বীকৃতি মেলে। এই প্রকাশিত তালিকায় দেখা যাচ্ছে ভারত ক্রমেই দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। ১০০-এর মধ্যে ভারত ২০২২ সালে পেয়েছিলো ৪০ নম্বর। ২০২৩ সালে এসে সেই নম্বর দাঁড়িয়েছে ৩৯-এ। ২০২৪ সালে ক্রমে ভারত আরও নিচে নেমে দাঁড়িয়েছে ৩৮-এ। দুর্নীতির প্রশ্নে গড় সূচক নম্বর ধরা হয় ৪৩-কে। কিন্তু ভারত গড়ের নিচেই রয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ বলা যায় ভারত দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে গোটা বিশ্বে আজও প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠিত দেশগুলির মধ্যে চিনের স্থান ৭৬। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থান ২৮। প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের স্থান ১৩৫ তম। শ্রীলঙ্কা ১২১। বাংলাদেশের স্থান ১৪৯ তম। তালিকার শীর্ষে ডেনমার্ক। এর পর ফিনল্যাণ্ড, সিঙ্গাপুরের মতো দেশ। ২০২৪ সালের দুর্নীতি সংক্রান্ত রিপোর্ট বিশ্ববাসীর জন্য অশনিসংকেত। বিশ্বের সর্বত্র দুর্নীতি মারাত্মক আকার নিচ্ছে। দুই তৃতীয়াংশের বেশি দেশ ৫০ নম্বর পায়নি। অথচ এই দেশগুলিতে বসবাস করে কয়েকশ কোটি মানুষ। মানুষের টাকা দুর্নীতিবাজরা লুটেপুটে খাচ্ছে। সুতরাং সর্বাগ্রে দুর্নীতি রোধে সবার এগিয়ে আসা উচিত। রিপোর্টে এরই উল্লেখ হয়েছে যে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনগুলির এ কাজে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।