দুর্নীতি, সাফাই দিলেন ভগবান কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরোলো সাপ।

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-দুর্নীতিতে নাম জড়ালো ভগবানের বীরজিতের প্রশ্নবাণে জোর গুঞ্জন’শীর্ষক সোমবার বিধানসভায় উত্থাপিত প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ঘিরে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে।সোমবার বিধানসভায় কংগ্রেস বিধায়ক বীরজিৎ সিনহার উত্থাপিত প্রশ্ন নিয়ে যখন আলোচনা চলছিল, তখন হাউসে উপস্থিত শাসকদলের বিধায়ক ভগবান দাস ছিলেন চুপচাপ।কিন্তু এই বিষয়ে তিনি পরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার দুপুরে আগরতলাস্থিত নতুন বিধায়ক আবাসে সাংবাদিক সম্মেলন করে, তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের সাফাই দিলেন।সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন,কোভিড পরিস্থিতিতে বাগানের শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছিলেন না। তারা মারাত্মকভাবে আর্থিক অনটনে পড়ে যায়।এই পরিস্থিতিতে চা শ্রমিকদের দশ জনের একটি প্রতিনিধি দল তার কাছে ডেপুটেশন দেয় এবং এই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানায়।ভগবানবাবুর বক্তব্য, এরপর তিনি ঊনকোটি অতিরিক্ত জেলা শাসকের সাথে টেলিফোনে কথা বলেন।পরবর্তী সময় চা শ্রমিক প্রতিনিধিরা আবার তার কাছে আসেন এবং হুমকি দেন যদি শ্রমিকরা মজুরির অর্থ না পায়, তাহলে তারা সড়ক অবরোধ করবে। কোভিড পরিস্থিতিতে সড়ক অবরোধ হলে জেলার সাধারণ জনগণ বড় ধরনের সমস্যায় পড়বে।তাই পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে এবং গরিব চা শ্রমিকদের সমস্যার বিষয়টি চিন্তা করে একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে গত ২৭ মে ২০২১ জেলার অতিরিক্ত জেলা শাসককে চিঠি দিয়েছেন।সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি নিজেই এডিএমকে দেওয়া চিঠির কপি সাংবাদিকদের দিয়েছেন।শুধু তাই নয়,সেই চিঠি তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে পড়েও শোনান। শুধু তাই নয়, পুরো বিষয়টিকে তিনি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছেন।তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য, স্বদেশি-বিদেশি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। তাকে নিয়ে অনেকে ভয় পাচ্ছে। তাই তাকে নানাভাবে অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে। ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এই প্রসঙ্গে তিনি একটি প্রবাদ বাক্যেরও উল্লেখ করেন, ‘পাটা- পুতার ঘষাঘষিতে মরিচের কাম শেষ’। এই প্রবাদের মাধ্যমে তিনি কী ইঙ্গিত করতে চাইলেন, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি। পাটা কে বা কারা? পুতাই কে বা কারা? বোঝা যায়নি। তবে তিনি যে ‘মরিচ’ এটা বোঝা গেছে।এছাড়াও তিনি বলেছেন, এই ঘটনার সাথে দুর্নীতির কোনও প্রশ্ন নেই। এই ব্যাপারে তিনি আর কিছুই জানেন না।আগে কী হয়েছে, পড়ে কী হয়েছে, এসব ব্যাপারে তিনি কিছুই জানতেন না এবং জানেনও না। সোমবার বীরজিৎবাবু প্রশ্ন উত্থাপন করেন। অতিরিক্ত প্রশ্নে তিনি আমার নাম উল্লেখ করেন এবং আমার চিঠি প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। বিধানসভায় চুপ থাকা নিয়ে বলেন, আমি বেশিরভাগ সময়ই নীরব থাকি। এটাই আমার স্বভাব এবং জন্মগত অভ্যাস। দুর্নীতির অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য বলে দাবি করেন ভগবানবাবু।এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক সম্মেলন করে ভগবানবাবু নিজের সপক্ষে যে সাফাই দিয়েছেন, তাতে তিনি কতটা ‘ক্লিনচিট’ পেলেন বা পাবেন – সেটা অবশ্য সময়ই বলবে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে তথ্য প্রমাণ উঠে এসেছে, তা তিনি গোপন করবেন কীভাবে? সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি যে চিঠি পড়ে শোনালেন, তার সেই চিঠির বয়ান সম্পর্কে তিনি নিজে কতটা ওয়াকিবহাল, এই নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। যে চিঠি তিনি এডিএমকে দিয়েছেন, তাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন
………intervention to remove the restriction order imposed upon the account of Sunshine Tea Processing Company Pvt. Ltd.” ভগবানবাবু এই চিঠির মাধ্যমে তিনি নিজেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন।এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই বিপদ ইচ্ছাকৃত কিনা? সেটা অবশ্য তদন্ত সাপেক্ষ।চা-বাগানের শ্রমিকরা মজুরি না পেলে তিনি চা-বাগানের মালিক বা সংস্থাকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানাতে পারেন। কিন্তু তিনি কীভাবে এডিএমকে চিঠি দিয়ে সরকারী নির্দেশে বন্ধ করে রাখা ওই কোম্পানির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সরকারী নির্দেশ সরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানালেন ?ভগবানবাবুর এই চিঠি পাওয়ার পর তড়িৎ গতিতে ঠিক পরদিনই ২৮ মে ২০২১ ইং তারিখে এডিএম এসবিআই কৈলাসহর ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে চিঠি দিয়ে বলেন, ‘সানসাইন টি কোম্পানির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নং 33740673729 খুলে দেওয়ার জন্য। সেই চিঠির কপি তিনি বিধায়ক ভগবান দাসকেও দিয়েছেন।অথচ বিস্ময়কর ঘটনা হলো, এই অতিরিক্ত জেলা শাসক ই তার দুই সপ্তাহ আগে অর্থাৎ১২ মে ২০২১ ইং এসবিআই কৈলাসহর ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে চিঠি দিয়ে স্পষ্টভাবে বলেছেন (No.F.DM/LA / KAL /1/2017/143-45) সানসাইন টি প্রসেসিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের অধিগৃহীত জমি নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে।ওই বিতর্ক মিটমাট না হওয়া পর্যন্ত তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে (33740673729) যাতে 58,28,476 টাকা না দেওয়া হয়। অর্থাৎ পেমেন্ট আটকে রাখার জন্য বলেছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে ভগবানবাবুর চিঠি পাওয়ার সাথে সাথেই কি জমি নিয়ে যে বিতর্ক ছিল, সেটা মিটে গেছে?কেলেঙ্কারির এখানেই শেষ নয়, সাংবাদিক সম্মেলনে এদিন ভগবানবাবু নিজেই দাবি করেছেন, তার এডিএমকে চিঠি দেওয়ার দুই মাস আগেই অর্থাৎ গত ৪ মার্চ ২০২১ ইং ওই সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে (33740673729) জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫৮ লক্ষ ২৮ হাজার ৪৭৬ টাকার ঢুকে গেছে।পরে নানা সময়ে তা তুলেও নেওয়া হয়েছে। এখানেই উঠেছে একাধিক প্রশ্ন। ভগবানবাবুর দাবি অনুযায়ী টাকা যদি মার্চ মাসেই অ্যাকাউন্টে চলে যায় তাহলে মে মাসে কেন শ্রমিকরা তার কাছে আসবে? এডিএম নিজেও কি জানেন না ওই কোম্পানিকে ব্যাঙ্ক টাকা আগেই দিয়ে দিয়েছে। অথচ তিনি ১২/৫/২০২১ ইং ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে চিঠি দিয়ে বলেছেন জমি নিয়ে বিতর্ক আছে তাই পেমেন্ট যাতে আটকে রাখা হয়। অথচ ব্যাঙ্ক দুই মাস আগেই টাকা পেমেন্ট করে ফেলেছে। কীভাবে? কার নির্দেশে ব্যাঙ্ক টাকা দিলো?এ বিষয়ে কংগ্রেস বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা জানিয়েছেন, নটিংছড়া চা বাগানের মালিকানা নিয়ে বিতর্ক আছে।বাগানের মালিক বলে যে সংস্থা (সানসাইন) দাবি করছে, সেটি একটি চিটফাণ্ড কোম্পানি বলে অভিযোগ।উক্ত চা বাগানের কিছু জমি জাতীয় সড়কের জন্য অধিগ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। এছাড়াও এই চা বাগানের বেশকিছু সরকারী খাস জমিও রয়েছে। জমির মালিকানা নির্ধারন নিয়ে ঊনকোটি জেলা শাসকের পক্ষ থেকে একটি মামলাও গ্রহণ করা হয়েছিল। সেই মামলার একটি শুনানি হয় গত ৩ এপ্রিল ২০২১ ইং তারিখে। রাজ্য সরকারের রাজস্ব দপ্তরের তৎকালীন সচিব তনুশ্রী দেববর্মণ সেই শুনানি গ্রহণ করে একটি অর্ডার পাস করেন। সেই অর্ডারে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও মোসব্বির আলি নামে এক ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দেওয়ার কথা বলেন।একই সাথে মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন ১ মে ২০২১ইং তারিখে। কিন্তু আশ্চর্যের ঘটনা হল, (ভগবানবাবুর চিঠি অনুযায়ী) এই মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই সানসাইন টি প্রসেসিং কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের অর্থ (58,28,476) প্রদান করেছে ব্যাঙ্ক। সংস্থার গত ১/১/২০২১ থেকে ৩১/৫/২০২১ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট সেই কথাই বলছে। এখন প্রশ্ন হলো ব্যাঙ্ক কীভাবে? কার বা কাদের নির্দেশে এই টাকা প্রদান করলো। কে দেবে এই মহা কেলেঙ্কারির জবাব?এর থেকেই স্পষ্ট, এই দুর্নীতির পেছনে একাধিক ব্যক্তি জড়িত?শেষ পর্যন্ত তাদের খোঁজ পাওয়া যাবে কিনা?সেটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন।

Dainik Digital

Recent Posts

গয়নার ল্যাবে তৈরি হলো বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম রুবি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বাংলায় চুনি, ইংরেজিতে রুবি।চুনির রং কতটা টকটকে লাল, তার উপর এই মানিকের দাম…

2 hours ago

মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বাঁচাতে পুলিশ প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-চাঁদারজুলুম নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে তথাকথিত সুশাসনের রাজ্যে প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে এলো।…

2 hours ago

কাজের বাজারে মন্দা!!

কেন্দ্রে ১০০ দিন পূর্ণ করল তৃতীয় মোদি সরকার।যদিও বর্তমান ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকারকে মোদি সরকার আখ্যা…

3 hours ago

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

1 day ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

1 day ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago