দূর পরিণাম উদ্বেগের!!

 দূর পরিণাম উদ্বেগের!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আচ্ছে দিনের ভারতে ভোট যখন মধ্যগগনে তখন বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জেরে আম জনতার নাকানি চোবানি দশা।সরকারী এক রিপোর্ট থেকেই দেখা গেছে,দেশজুড়ে চলমান ভোটের মধ্যেই পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি হু-হু করে বেড়েছে।ভোট নিয়ে আমজনতা যখন যে যার মতো করে স্বপ্ন বুনছেন চোখে, তখন বাজারে মূল্যবৃদ্ধির এই খবরে অনেকেই খানিকটা হলেও অস্বস্তিতে পড়েছেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক সর্বশেষ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।এই রিপোর্টে এসেছে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য।তাতে দেখা গেছে,গত মাসে অর্থাৎ এপ্রিলে বিগত তেরো মাসের মধ্যে দেশের মূল্যবৃদ্ধি সর্বোচ্চস্তরে গিয়ে ঠেকেছে। এই তেরো মাসে সরকারী অর্থমন্ত্রকের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের অপেক্ষা এই
বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে পাইকারি জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে ১.৩ শতাংশ।কেন আচমকা এই মূল্যবৃদ্ধি এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে,দেশজুড়ে এই সময়ের মধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি, প্রাকৃতিক গ্যাস, সমস্ত ধরনের খাদ্যপণ্য এবং বিদ্যুতের মাশুল বেড়ে যাওয়ার কারণেই দেশে গত এক বছরের মধ্যে এই এপ্রিল মাসে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। রিপোর্ট থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে প্রচুর পরিমাণে পণ্যের দাম বেড়েছে।যার মধ্যে আমরা
এপ্রিল মাসে যে অপরিশোধিত তেলের দাম দেখেছি সেটাও এর অন্যতম কারণ।কীভাবে এই মূল্য বেড়েছে তা এই পরিসংখ্যান
থেকেই পরিষ্কার যে, মার্চ মাসে সবজির পাইকারি দর যা ছিল ১৯.৫২ শতাংশ, সেটাই এপ্রিলে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৩.৬০ শতাংশে।আলুর
ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, মার্চে যেটা ছিল ৫২.৯৬ শতাংশ, এপ্রিলে বেড়েছে ৭১.৯৭ শতাংশ।পেঁয়াজের ক্ষেত্রে আগের মাসে যেটা ছিল
৫৬.৯৯ শতাংশ,এপ্রিলে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯.৭৫ শতাংশ।উদ্বেগের যেটা খবর তা হলো পাইকারি মূল্যসূচক টানা দুই মাস ধরে বাড়ছে এবং আগামী আরও দুই মাস সেটা চলতে পারে।দেশে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া যেখানে টানা সপ্তমবারের মতো সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে এবং বলেছে দেশে খাদ্য মূল্যবৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী
ঝুঁকির মধ্যেও সেটা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে, তখনই পাইকারি জিনিসপত্রের এই অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি এবং আগামী দুই মাস পর্যন্ত এই অবস্থা পরিবর্তনের সম্ভাবনা যে ক্ষীণ তা যথেষ্ট উদ্বেগের। এই অবস্থা চলতে থাকলে মে-জুন মাসে পাইকারি জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি দুই শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। গত কিছু মাসে খুচরো মুদ্রাস্ফীতি যখন সামান্য কমেছে, তখন এই পাইকারি মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়া
বাজারের জন্য অশনি সংকেত মনে করছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা।এ ধরনের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা আইসিআরের প্রধান অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ারের একটি বক্তব্য থেকেও পরিষ্কার।এই মুদ্রাস্ফীতি খুব সহসাই দেশের মানুষের জন্য বড়সড় অস্বস্তি ডেকে আনতে চলেছে।তবে বিশেষজ্ঞদের অনুমান হলো, ধাতু, রাসায়নিক, রাবার, প্লাস্টিক এ ধরনের পণ্যগুলোতে পাইকারি মুদ্রাস্ফীতির সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে।কারণ সরাসরি উৎপাদন খাতের সঙ্গে এই জিনিসগুলি জড়িত।এর সহজ অর্থ হলো এই পণ্যগুলোর মূল্যবৃদ্ধির কারণে অন্যান্য উৎপাদিত সব জিনিস ব্যয়বহুল হয়ে পড়া। যে কারণে বড় ধাক্কা আসতে চলেছে বাজারে এবং সহসাই সেটা খুচরো বাজারে বড়সড় অস্বস্তি ও অস্থিরতা ডেকে আনবে।এমনিতেই ভোটের বছরে অর্থনীতির উপর বড়সড় চাপ পড়ে যায়।এর মধ্যে প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে বাজারের স্বাভাবিক ছন্দে একটা অনিশ্চয়তা ও মসৃণতায় তাল কেটেছে।এখন পাইকারি বাজারে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তুলবে যা কিনা সাধারণ মানুষের পকেটে নি:সন্দেহে চাপ বাড়াবে।সব মিলিয়ে নতুন করে খাদ্যপণ্য সহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের মূল্য মাথা তোলা দিনে এর দূর পরিণাম যে অনেকটাই উদ্বেগ বড় সমস্যা ডেকে আনবে তা বলাই বাহুল্য।তবে এর আশু সমাধান কী এবং কতদিন পর্যন্ত এই মূল্যবৃদ্ধির হার চড়া থাকবে সেটাই এখন বড় মাথাব্যথা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.