দৃশ্য দূষণ!!
সারা বিশ্বে গত কয়েক দশক ধরে প্রধান আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পরিবেশ ও এর বিপন্নতা।যা নিয়ে গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন এবং চিন্তিত গোটা বিশ্ব।কত আইন প্রণয়ন হচ্ছে, সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তারপরেও থেমে নেই দূষণ। বর্তমান বিশ্বে পরিবেশের সমস্যা বহুমাত্রিক।পরিবেশ দূষণের কথা এলেই বায়ু, জল এবং শব্দ দূষণের কথা বলা হয়।এই সব নিয়েই আলোচনা হয়।কিন্তু এসব ছাড়াও বর্তমানে আরও একটি দূষণের কথা ব্যাপকভাবে আলোচনায় উঠে এসেছে।সেটি হলো ‘দৃশ্য দূষণ’।
বায়ু দূষণ, জল দূষণ, শব্দ দূষণের সাথে সাথে বর্তমান সময়ে ‘দৃশ্য দূষণ’ও আতঙ্ক এবং উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।এখন প্রশ্ন হলো ‘দৃশ্য দূষণ’ বিষয়টি কী? অনেকের মতে ‘দৃশ্য দূষণ’ একটি নান্দনিক সমস্যা। কিন্তু এই নান্দনিক সমস্যা মানুষ জীবনে অত্যন্ত ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলেছে। খুব সহজ ভাবে বলতে গেলে মানুষ চোখ দিয়ে যা দেখে, সেসব চোখেই ক্যামেরাবন্দি হয়।সেই দৃশ্য চলে যায় মস্তিষ্কের সেন্ট্রাল নার্ভ সিস্টেমে।সেখান থেকে প্রবাহিত হয় সারা শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোতে। এখন দৃশ্য যদি প্রচলিত নিয়মের বহির্ভূত হয়,তবে মানুষের শরীরে নার্ভ বা স্নায়ুগুলো ক্লিষ্ট হয়।এরই নাম ‘দৃশ্য দূষণ’।পথে চলতে গেলে এমন অনেক দৃশ্য আমাদের নজরে আসে। যা আমাদের মনে অস্বস্তি বাড়ায়,বিরক্তির জন্ম দেয়।ক্ষোভ, দুঃখ, উত্তেজনা, ভয়, আতঙ্ক, লজ্জা সহ আরও নানা অনুভূতির সৃষ্টি হয়।এমন বহু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।আমরা সকলেই জানি, বর্তমান যুগ বিজ্ঞাপনের যুগ। সাধে কি আর বহু বছর আগে প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’।বিজ্ঞাপনে ঢেকে যাচ্ছে আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সভ্যতা।আমাদের মননে, চিন্তনে এখন শুধুই বিজ্ঞাপন।দৃশ্য দূষণের এই সর্বনাশা পথে খুব দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের ছোট রাজ্য ত্রিপুরাও।একদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বচ্ছ ভারতের স্লোগান।আর অন্যদিকে সেই স্লোগানকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর প্রতিযোগিতা চলছে এই রাজ্যে।শুধু প্রতিযোগিতা চলছে বললে হয়তো ভুল হবে,কে কাকে পিছনে ফেলে প্রথম হবে,এ নিয়েও নিজেদের মধ্যে লড়াই চলছে।
‘বিজ্ঞাপনে মুখ ঢেকে যায়’ বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষের এই কবিতার লাইনের অন্তর্নিহিত অর্থের সাথে বাস্তবের যে কতটা মিল রয়েছে, তা রাজধানী আগরতলা সহ গোটা রাজ্যের মানুষ ভালো ভাবেই উপলব্ধি করতে পারছেন।সকালে ঘুম থেকে উঠে, রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত দৃশ্যদূষণে তিতিবিরক্ত মানুষ। শারদোৎসব এবং দীপাবলিকে কেন্দ্র করে রাজধানী আগরতলা সহ, শহরতলির অলিগলি এমনকী রাজ্যের বিভিন্ন মহকুমা শহর, গ্রাম সর্বত্র ফ্লেক্স দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।আর ওইসব ফ্লেক্সে শাসকদলের সিকি,আধুলি, মাঝারি থেকে শুরু করে একেবারে শীর্ষনেতা-নেত্রীদের শ্রীমুখ! কেউ করজোড় কেউ বুকে হাতজোড় করে,কেউ হাস্যবদনে, এমন নানা অঙ্গভঙ্গিতে নেতা-নেত্রীদের ছবিতে ছয়লাপ।যাঁরা এ ইসব করেছেন,এবং করছেন তাদের রুচিবোধ, তাঁদের চিন্তা-চেতনা এবং দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, নেতা নেত্রীদের শ্রীমুখের বিজ্ঞাপন দিয়ে, সীমাহীন দৃশ্যদূষণ ঘটিয়ে কি জনপ্রিয়তা মাপা যায়? বিষয়টা তো এমন নয় যে, যার যত শ্রীমুখ তাঁর তত জনপ্রিয়তা।তাই যদি হতো, তাহলে জনগণের কাজ করার প্রয়োজন পড়তো না। অনেকেই বলেন, নানা সামগ্রী বিক্রি করতে চকচকে চোখ ঝলসানো বিজ্ঞাপনের প্রয়োজন হয়। নেতা-নেত্রীরাও নিজেদের এমনটা মনে করেন কিনা জানা নেই।তবে দৃশ্য দূষণের যে প্রতিযোগিতা চলছে, তাতে জনগণের মনে এমন ভাবনা এসেই যায়।