দেওয়াল লিখন!!

 দেওয়াল লিখন!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দেওয়াল লিখন পড়তে পারছে বিজেপি? হাইভোল্টেজ দে লোকসভা নির্বাচনে দেশবাসী যা রায় দেবার দিয়ে দিয়েছেন।গত দশ বছর ধরে নিজের মর্জিমতো দেশ চালানোর অধিকার থেকে এবার বিজেপিকে বঞ্চিত করেছে দেশের জনতা।অর্থাৎ এবারের নির্বাচনে দেশে একক গরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। বিজেপিকে আগামী পাঁচ বছর সরকার চালাতে শরিকদের প্রয়োজন হবে এবং হচ্ছেও।তাই মর্জিমতো সরকার চালানোর দিন শেষ বিজেপির।লোকসভা ভোটের ফলাফলের একমাসের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে দেশে ৭ রাজ্যে যে ১৩টি আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তাতে কি বিজেপির দেওয়াল লিখন স্পষ্ট হয়ে গেছে?দেশে কি এবার বিজেপি অস্তমিত সূর্যের মতো ঢলে পড়ার দিকে এগোচ্ছে? সাত রাজ্যে ১৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি তথা এনডিএর দখলে গেছে মাত্র ২টি আসন। বাদবাকি ১০টি আসনে বিরোধী ইন্ডিয়া জোট জয়ী হয়েছে।১টি আসনে জয়ী হয়েছে নির্দল প্রার্থী।এই জয় নিয়ে বিরোধীরা বেজায় উৎসাহী।অন্যদিকে বিমর্ষ বিজেপি শিবির।
২০১৪ সালের পর থেকে বিজেপি দেশে এমন একটা কালচার সৃষ্টি করেছে যে, যেকোন রাজ্যে নির্বাচিত সরকারক(অবশ্যই বিরোধী দলের) ভেঙে ফেলা যেন তাদের বা হাতের খেলা। এই খেলায় সবসময় বিজেপি যে সাফল্য পেয়েছে এমনটাও নয়।যেমন গত বছর হিমাচলে সরকার ফেলতে তৎপর হয় বিজেপি। কিন্তু সাফল্য পায়নি। তেমনি ঝাড়খণ্ডেও, একবার বিজেপি চেষ্টা চালায় কিন্তু সাফল্য পায়নি। কিন্তু শেষবার মহারাষ্ট্রে সাফল্য পায় বিজেপি। এনসিপিকে ভেঙে, শিবসেনাকে ভেঙ্গে ছত্রখান করে নির্বাচিত সরকার (জোট সরকার) ভেঙে নয়া সরকার গঠন করে বিজেপি।
কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এসে গত দশ বছরের মধ্যে প্রথম ঝটকাটি খায় বিজেপি।গরিষ্ঠতা থেকে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে থাকে বিজেপি। ফলে বিজেপিকে এখন সরকার চালাতে গিয়ে প্রতি মুহূর্তে শরিকদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে, শরিকদের সন্তুষ্ট করতে হচ্ছে।কিন্তু এর পরও নিশ্চয়তা নেই যে, এই সরকার পুরো পাঁচ বছর তার মেয়াদ সম্পূর্ণ করতে পারবে বলে। সম্প্রতি আরজেডি সুপ্রিমো ও বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব তার সরকারের ২৭ তম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে এসে জানিয়ে দেন যে,কেন্দ্রের সরকারের মেয়াদ বড়জোর আর একমাস। সুতরাং দলীয় কর্মীদের তৈরি থাকতে হবে। এরই মধ্যে মুম্বাইয়ে গিয়ে উদ্ধব ঠাকরে, শারদ পাওয়ার, তেজস্বী যাদবদের সাথে বৈঠকের পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়ে দেন যে কেন্দ্রীয় সরকার যে কোন সময় ভেঙে যেতে পারে।
অর্থাৎ সব মহল থেকেই সংশয় ব্যক্ত করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে অথচ গত দশ বছরে এই ধরনের চিন্তাভাবনা ছিল ভাবনার অতীত।মোদি শাহ জুটির প্রবল পরাক্রম ছিল দেশজুড়ে।ফলে জম্মু কাশ্মীর থেকে ৩৭০ বিলুপ্তি, তিন তালাকের বিলুপ্তি। নোটবন্দি থেকে জিএসটি চালু, সিএএ আইন কার্যকর করা, সাংসদদের বহিষ্কার করে একের পর পর এক সংসদে বিল পাস করা ছিল মোদি সরকারের ‘বাঁয়ে হাত কা খেল’। কিন্তু ২০২৪ সব হিসাব নিকাশ এক নিমিষেই পাল্টে দিয়েছে। মোদির গ্রাফ এখন আর উর্ধ্বমুখী নয়। ক্রমশ নিম্নমুখী। যে রাজ্যের দোহাই দিয়ে বিজেপি ভেবেছিল এবারের লোকসভা ভোট হেলায় পার করা যাবে কিন্তু তা তো হয়নি, উল্টো অযোধ্যায় বিজেপি হেরে ভূত হয়ে গেছে। অযোধ্যায় বিজেপির হার বিজেপিকে এক চরম সত্যের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। পরবর্তীতে লোকসভা ভোটের ফলাফলের পর বিজেপির মুখে একদিনের জন্যও ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শোনা যায়নি।
গত ১১ জুলাই ৭ রাজ্যের ১৩আসনে যে বিধানসভা উপনির্বাচন হয়ে গেল তাতে উত্তরাখণ্ডের বদ্রীনাথ আসনও ছিল। সেই বদ্রীনাথ আসনেও বিজেপি হেরে গেছে। অযোধ্যার পর বদ্রীনাথ আসনে বিজেপি হার বিজেপিকে একেবারে চুপ করিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিজেপিশাসিত উত্তরাখণ্ডের ২ টি আসনেই বিজেপি হেরেছে। পাশের অপর রাজ্য হিমাচল প্রদেশে তিন আসনে বিজেপি জিতবে এটা প্রায় ধরেই নিয়েছিলো। কিন্তু একটি মাত্র আসনে জয়ী হয় বিজেপি। ২টি আসনে জয়ী হয় কংগ্রেস। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লোকসভায় দাঁড়িয়ে জোর গলায় কংগ্রেসকে কটাক্ষ করতে গিয়ে বলেছিলেন বিজেপির সাথে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কংগ্রেসের স্ট্রাইক রেট নেহাতই নগণ্য। এবার কী বলবেন প্রধানমন্ত্রী? হিমাচল ও উত্তরাখন্ডে বিজেপির সাথে কংগ্রেসের সরাসরি টক্কর হয় ৫টি আসনে। এর মধ্যে চারটিতে জয়ী হয় কংগ্রেস। অর্থাৎ ৫-এ ৪। এবার স্ট্রাইক রেট কত দাঁড়ালো প্রধানমন্ত্রী কি বলবেন এবার? বাদবাকি পশ্চিমবঙ্গে তিনটি আসন খুইয়েছে বিজেপি। মধ্যপ্রদেশে এবং হিমাচলের মোট ২টি আসনে কোনরকমে জিতেছে বিজেপি। তাহলে কি বলা যায় বিজেপির দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গেছে? এই দেওয়াল লিখন বিজেপি পড়তে পারলে ভালো। আর কিছুদিন মধ্যেই উত্তরপ্রদেশে বেশ কিছু আসনে বিধানসভা উপনির্বাচন হবে। এতে কিন্তু ঝাঁপাবে ইন্ডিয়া শিবির।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.