দেনার দায়ে অর্থনীতি।

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ৯ বছরের কার্যকাল সম্প্রতি পূর্ণ করেছে। এই সময়কালে মোদি সরকারের স্লোগান ছিল দেশে আচ্ছে দিন আসছে। সরকারীভাবে দাবি করা হয় এই ৯ বছরে দেশের ৪ কোটি মানুষ মাথার উপর ছাদ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায়।প্রায় ১১ কোটি মানুষ পেয়েছেন শৌচালয়। এছাড়া উজ্জ্বলা যোজনা আসার পর এখন নাকি দেশে আর কাউকেই লাকড়ি দিয়ে উনুনে রান্না করতে হচ্ছে না। দেশজুড়ে এখন বিভিন্ন নামে বেশকিছু কেন্দ্রীয় প্রকল্প চলছে। চলছে স্কিল ইণ্ডিয়া, মেক ইন ইণ্ডিয়ার মতো একাধিক প্রকল্প। এছাড়া কর্মসংস্থান,দারিদ্র্য দূরীকরণ, কৃষিভিত্তিক একাধিক প্রকল্প দেশে বর্তমানে চালু রয়েছে। ভারতের অর্থনীতিকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে আত্মনির্ভর ভারত গঠনের ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।কিন্তু মোদি সরকার দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য যতই পরিকাঠামোগত সংস্কারের কথা প্রচার করুক না কেন, বাস্তব চিত্রটা কিন্তু ঠিক সেরকমটা নয়।বরং বলা হচ্ছে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার পর গত ৯ বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের দেনার পরিমাণ আকাশ ছুঁয়েছে। গত ৯ বছরে মোদি সরকারের শাসনে দেশে ঋণ বেড়েছে ১০০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। যার ফলে আত্মনির্ভর ভারতে এখন মোট ঋণের পরিমাণ ১৫৫ লক্ষ কোটি টাকা।শনিবার দিল্লীতে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির এই গুরুতর চিত্র তুলে ধরে দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এই সম্পর্কে জনগণের কাছে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করার জন্যও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনেত্রে অভিযোগ তুলেছেন ২০০৪ সালে মনমোহন সিং যখন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যান তখন দেশের মোট দেনার পরিমাণ ছিল ৫৫ লক্ষ কোটি টাকা। বর্তমানে সেই দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫৫ লক্ষ কোটি টাকা।এর অর্থ হলো স্বাধীনতার ৬৭ বছরে দেশের ১৪ জন প্রধানমন্ত্রী দেশ চালাতে গিয়ে মোট ৫৫ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন।আর একা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার ৯ বছরের শাসনকালে দেশের কাঁধে ১০০ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ চাপিয়ে দিয়েছেন।অর্থাৎ এই মুহূর্তে ভারতে প্রতি সেকেণ্ডে চার লক্ষ টাকা দেনা চাপছে।আর বছরে শুধুমাত্র ঋণের সুদ মেটাতে দেশকে খরচ করতে হচ্ছে ১১ লক্ষ কোটি টাকা।বিরোধী কংগ্রেস দলের তরফে মোদি সরকারের শাসনকালে দেশের ঋণের বোঝা ক্রমাগত বেড়ে চলার এই অভিযোগ উঠলেও, সরকারী নথি এবং পরিসংখ্যান কিন্তু বিরোধীদের এই অভিযোগকে সরাসরি অস্বীকার করছে না।কেন না কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্যই বলছে ২০২২ সালে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে দেশের ঋণের বোঝা বেড়েছে ১১ লক্ষ ৩১ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ সালের বাজেট পেশের সময় কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে জানিয়েছিল কেন্দ্রের ওপর এখন ঋণের বোঝা ১৩৫ লক্ষ ৮৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসে এই অঙ্কটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৭ লক্ষ ১৯ হাজার কোটি।অথচ মনমোহন সিং সরকারের থেকে ২০১৪ সালে কেন্দ্রের কৃর্সিতে নরেন্দ্র মোদি সরকার বসার সময় এই ঋণের অঙ্কটা ছিল প্রায় ৫৮ লক্ষ কোটি টাকা।এরপর থেকে মোদি সরকারের সময় লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে দেশের ঋণের বোঝা।বিরোধী দলের অভিযোগ হলো,বিশ্বের বহু বিদেশি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছে ভারত সরকার এবং ঋণ শোধ করার বিষয়ে ভারত সরকারের বক্তব্য ছিল, রাষ্ট্রয়াত্ত সংস্থা এবং সরকারী জমি বিক্রি করেই এই ঋণভার কমানো হবে।একই সঙ্গে বিভিন্ন খাতে বাড়ানো হবে দেশবাসীর থেকে কর আদায়ের পরিমাণ। এরপর পরই দেখা গেছে বেশকিছু রাষ্ট্রয়াত্ত সংস্থা বিক্রি করার ঘটনা ঘটেছে।এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো দেনার দায়ে ঝুঁকে পড়া দেশের অর্থনীতিকে সামলে তোলার পরিবর্তে কেন ঝাঁ চকচকে সেন্ট্রাল ভিস্তার মতো এত বড়সড় প্রকল্পে মেতে উঠেছিলেন মোদি সরকার। বিরোধীদের তরফে ইতিপূর্বেই সরকারের বেশকছুি অপ্রয়োজনীয় ব্যয় নিয়ে সরকারকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল।কিন্তু সরকার বিরোধীদের তরফে উত্থাপিত এই সমস্ত অভিযোগের কোনও গুরুত্বই দিতে রাজি ছিল না।সরকারের তরফে বরং বিরোধীদে অভিযোগ খণ্ডন করে যে কথা বলার চেষ্টা হয়েছে তা হলো, কোভিডে সময় বাড়তি খরচ এবং আয় হ্রাস পাওয়াতেই দেশের ঋণের বোঝা বেড়ে গিয়েছিল।তা সত্ত্বেও ভারতের দেনার পরিমাণ অনেকটাই স্থিতিশীল বলে দাবি করছে সরকার।তাছাড়া টাকার মূল্য বা সুদের ক্ষেত্রে ভারতী অর্থনীতির দিক থেকে ঝুঁকি কম।বলা হচ্ছে সিংহভাগ ঋণই ভারতী মুদ্রায় নেওয়া। আর বিদেশ থেকে যে সমস্ত ঋণ নেওয়া হয়েছে তার সবই কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়েছে।যে কারণে বলা হচ্ছে বিদেশের বাজারে অর্থনীতির মন্দা বা ভালো অবস্থা যাই হোক না কেন তার ঝুঁকি দেশে আছড়ে পড়ার ভয় থাকে না। অভিযোগ এবং পাল্টা প্রত্যুত্তর যাই হোক না কেন, দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান এই দেনার ভার যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে, তাতে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি সহ আনুষ্ঠানিক বিষয়গুলোর সাধারণ মানুষের দুর্দশা কমার বদলে উত্তরোত্তর বাড়ার সম্ভাবনাই যে বেশি সেটার বড় শঙ্কার কারণ।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

খুশির ঈদ উদযাপন

অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…

9 hours ago

সাব ইনস্পেক্টর অব এক্সাইজ নিয়োগে, সরকারের নিয়োগনীতি কার্যকর করছে না টিপিএসসি, ক্ষুব্ধ বেকাররা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০১৮ সালে নতুন নিয়োগনীতি চালু করেছে রাজ্য সরকার। ২০১৯ সাল থেকে রাজ্য সরকারের…

9 hours ago

কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপক প্রচার সত্ত্বেও,হাসপাতালে জনঔষধির সস্তা ওষুধ সংকটে রোগীরা বঞ্চিত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয় সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সস্তায় ভালো গুণমানসম্পন্ন জনঔষধি তথা জেনারিক মেডিসিন…

9 hours ago

শান্তিরবাজারে ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন জগন্নাথ পাড়া!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-শান্তিরবাজারে সিনিয়র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হলো জগন্নাথপাড়া প্লে সেন্টার টিম। রবিবার বাইখোড়া ইংলিশ…

10 hours ago

বামফ্রন্টের রেখে যাওয়া ১২,৯০৩ কোটি সহ,রাজ্যে বর্তমানে ঋণের পরিমাণ ২১,৮৭৮ কোটি টাকা: অর্থমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত রাজ্য সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৮৭৮ কোটি…

10 hours ago

ক্রাইম ব্রাঞ্চের শক্তিবৃদ্ধিতে গুচ্ছ পদক্ষেপ : মুখ্যমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিগত ছয় মাসে ত্রিপুরা পুলিশ ক্রাইম ব্রাঞ্চকে ২২টি মামলা হস্তান্তর করা হয়েছে।২০২৪ সালের…

11 hours ago