এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

একদিকে বন্যার ক্ষতচিহ্ন অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক এক সিঁদুর মেঘ-এই কুব্জটিকার মাধ্যেই দেবী দুর্গার আগমণ ঘটিয়াছে।আবার তিথি অনুযায়ী পিত্রালয়ে তাহার চার দিবসের অবস্থান তিন দিবসেই সমাপ্ত হইয়া গিয়াছে।ইহার চাইতে বড় কথা দুর্গোৎসব লইয়া বাঙালির এতদঞ্চলে তেমন কোনও গণ্ডগোল বা অনভিপ্রেত ঘটনা নাই।মঙ্গল মতই সমাপ্ত হইয়াছে বিসর্জন পর্ব।শেষ হইতেছে বিসর্জন কেন্দ্রিক সকল অনুষ্ঠানমালা।ইহাই ছিল দেবীর নিকট ব্যষ্টির প্রার্থনা। সকল কিছুই যেন শেষ হয় শান্তিতে।
এই কথা ঠিক যে দুর্গোৎসবে এই রাজ্যের এই বছর তুলনায় আড়ম্বর ছিল কম। অর্থনৈতিক কারণ রহিয়াছে ইহার পিছনে।যে রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ মানুষ বন্যা কবলিত হইয়া সর্বস্বান্ত হইয়াছেন তাহাদের পক্ষে আলোর উৎসবে শামিল হইয়া উৎসব প্রাঙ্গণকে আলোকিত করিবার ক্ষমতা নাই।মা আসিয়াছিলেন এবং চলিয়াও গিয়াছেন- অনেকের জীবনে তার চাক্ষুস প্রভাব পড়িল বলিয়া মনে হয় নাই। পুজোর দিন গ্রামগঞ্জের যে অনুভূতি তাহাতে এই কথা বলা কোনভাবেই বাগাড়ম্বর নহে।
আমাদের দেবী মা জগজ্জননী দুর্গাকে নিজেদের ঘরের কন্যা বানাইয়া লইয়াছি।ভাংখোর দরিদ্র শিবের ঘরনী এই মেয়ে সারা বৎসর ধরিয়া কষ্টে সৃষ্টে সংসার যাপন করেন।উমা শারদ পুজোর সময়ে দিন তিনেকের জন্য বাপের বাড়ি আসিয়া থাকেন।তাহাকে লইয়া আমার আনন্দে ঝাঁপাইয়া পড়ি।পার্থিব ভোগযাতনা।শোকতাপ আরও যত কষ্ট রহিয়াছে সকল ভুলিয়া গত কয়েক শতক ধরিয়া চলিতেছে এই উৎসব।কালী সাধক রামপ্রসাদ সেন যে সঙ্গীত রচনা করিয়াছেন কালীকে সামনে রাখিয়া সেই সঙ্গীত শক্তির অন্য অবতার দুর্গার ক্ষেত্রেও সমানভাবে আমাদের জীবনে আসিয়া থাকে।’করুণাময়ী কে বলে তোরে দয়াময়ী /কারো দুগ্ধেতে বাতাসা গো তারা / আমার এমনি দশা,শাকে অন্ন অন্ন মেলে কই, কারে দিলি ধনজন মা, হস্তি অশ্ব রথচর / ওগো তারা কি তোর বাপের ঠাকুর / আমি কি তোর কেহ নই।
ঐতিহাসিকভাবে শক্তি সাধনার অন্যতম পীঠ এই বাঙলায় দীর্ঘকালীন এক চর্চা ও চর্যা তন্ত্রসাধনার নানান কাহিনিতে ভারাক্রান্ত আমাদিগের যৌথস্মৃতি আর মননে স্থায়ীভাবে স্থান করিয়া লইয়াছে চণ্ডী,চামুণ্ডা, কালী। আমাদের অন্তরের একদিকে তন্ত্রের রহস্যময় ভয়াবহতা আর অন্যদিকে স্নেহবিগলিত মাতৃরূপ যাহা প্রকারান্তেরে কন্যারূপও বটে।শাস্ত্রীয় ধর্মচিন্তন অনুযায়ী দুর্গা বা চণ্ডী আদ্যাশক্তি, সৃষ্টিস্থিতিবিনাশনী, ব্রহ্মস্বরূপিনী।বজ্রযান তান্ত্রিক বৌদ্ধ দেবী নৈরাত্মা, বাচ্ছলি, তারা, বজ্রযোগিনীর সহিত আমাদিগের কালী দুর্গার নানান মিল খুঁজিয়া পান বিশেষজ্ঞরা।তাঁহারা মিলিয়া মিশিয়া দশমহাবিদ্যার অর্ন্তভুক্ত।
আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে যে সংস্কৃত স্তোত্র পাঠ করা হইয়া থাকে ভাবগম্ভীর অবোধ্যতায় তাহার সরল বঙ্গানুবাদও রহিয়াছে।যাহার মূল কথা হইলো,হে দেবী তুমি বিষ্ণুর শক্তি, অনন্ত বীর্যের অধিকারিণী।তুমি এই বিশ্বের বীজ অর্থাৎ সৃষ্টির কারণ। তুমি মহামায়া।তোমার মায়াতেই সকলে মোহিত। তুমি প্রসন্না হইলে পৃথিবীতে মুক্তির কারণ হয়।তুমিই বিভিন্ন বিদ্যারূপে রহিয়াছ। সকল নারীর মধ্যেও তুমিই। যে মা তুমি সর্বত্র একাই ব্যপ্ত হইয়া রহিয়াছ,কি আর শ্রেষ্ঠ ভাষায় তোমার স্তুতি করা যায়।আশ্রয়প্রার্থী দীন ও আর্তকে আপনি রক্ষা করিয়া থাকেন।আপনি সকলের দুঃখ দূর করিয়া থাকেন।হে নারায়ণী,হে দেবি, আপনাকে নমস্কার করি।
ইহা কেবলই ভক্তি গদগদ বিষয় কেবল নহে।পুরান এবং ইতিহাসের তথ্য সকলেই আছে একটি সামজের পূর্ণ বিকাশে যাহা প্রয়োজন হইয়া থাকে।অতএব কোনও বাঙালিকে সেকুলার হইয়া উঠিবার ক্ষেত্রে এই রূপকল্প কোনও দিন বাধা হয় নাই। বাধা হইয়া উঠিনি প্রতীকের রূপের ভাবনা।সংস্কৃতিক সঙ্কেতের সহিত ধর্মীয় আচারের সম্পর্ক ইহাতে অটুটু থাকিয়া যায়।হয়তো তাই প্রতিমাকে বিজয়ার সন্দেশ খাওয়াইতে গিয়া আমরা দেবীর বাহন সিংহকে খাওয়াইয়া থাকি আবার অসুরকেও খাওয়ানো হয়। সেই সময়ে আমরা ভুলিয়া যাই আমাদের দুর্গা কেবল কন্যা নন তিনি দেবী,তিনি পুজ্যা। এই লইয়া বিতর্ক আসিতে থাকে।
দেবীর বিজয়া বিসর্জনের পর আমরা ফিরিতেছি জীবনের ধারাবাহিকতায়, আবার ফিরিয়া যাওয়া সেই চেনা ছন্দে।রাত দখলের পর রাত জাগরণের কাল অতিক্রম করিয়াছি, এই বছর।দেবীর নিকট আমাদিগের সংকল্প যেমন ছিল ছিল প্রার্থনাও। আমাদের পরিবেশ,প্রতিবেশী সকলই হোক শান্ত, স্নিগ্ধ আর সৌভ্রাতৃত্বের সৌরভে পূর্ণ। অন্ধকারের পথ মাড়াইয়া আমারা উত্তরিত হই এক আলোর পথে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

রাজ্যে পরিকল্পিত বিদ্যুৎ নাশকতায়, বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা কঠোর বার্তা বিদ্যুৎমন্ত্রীর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবায় ধারাবাহিক বিঘ্ন ঘটায় জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। ঘনঘন…

6 hours ago

এক পক্ষ ও তৃতীয় পক্ষ!!

পাকিস্তানের সহিত যুদ্ধ বিরতি লইয়া ভারতীয় সামাজিক মাধ্যমে এই সময়ে তোলপাড় চলিতেছে।যদিও একাংশ সংবাদ মাধ্যম…

6 hours ago

ট্রমা, রেডিওলজি সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে চরম দুর্ভোগ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের প্রধান হাসপাতাল জিবিতে রোগীর যন্ত্রণার শেষ নেই।হাসপাতালে বিদ্যুৎ পরিষেবা নিয়েও রোগীকে প্রচণ্ড…

6 hours ago

২০ দিন পর মুক্তি পেলেন ভারতীয় বিএসএফ জওয়ান!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভুল করে’ সীমান্ত পার করে পাক সীমান্তে ঢুকে পড়েছিলেন ভারতের বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম…

7 hours ago

বিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম উদ্বোধন করেন বিপ্লব দেব!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের হাপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের আদর্শে পরিচালিত শ্রীমতী ব্রহ্মদেবী সরস্বতী বালিকা বিদ্যামন্দির…

7 hours ago

ফের বৈঠকে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটি !!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বৈঠকে বসছে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে সকাল ১১টায় বৈঠকে…

7 hours ago