দেশে প্রাণের মূল্য!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দুর্গাপুজো,দশেরা উৎসবের আবহে এগারোটি অত্যাবশ্যক ওষুধের মূল্যের উপর নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার পর থেকে সেগুলির দাম বেড়েছে পঞ্চাশ শতাংশ, অর্থাৎ দেড়গুণ।এই সব ওষুধের মধ্যে হাঁপানি, লুকোমা, থ্যালাসেমিয়া, টিবির মতো রোগের জন্য প্রথম ধাপের ওষুধগুলি (ফার্স্ট লাইন ড্রাগস) রয়েছে। এছাড়াও বেনজাইলপেনিসিলিন, অ্যাট্রোপিন, স্ট্রেপ্টোমাইসিন (টিবি ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ),সালবিউটামল ট্যাবলেট এবং ইনহেলার (শ্বাসকষ্টের জন্য ব্যবহৃত), অ্যান্টিবায়োটিক সেফাড্রক্সিল,থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ডেসফেরিঅক্সামিন ইনজেকশন, মানসিক রোগের ওষুধ লিথিয়াম ইত্যাদি বহু ওষুধ রয়েছে। ২০২১ সালে অত্যাবশ্যক তালিকাভুক্ত ওষুধের দাম প্রায় এগারো শতাংশ বাড়িয়েছিল ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি (এনপিপিএ)। ২০২৩ সালে ওই বর্ধিত অঙ্কের উপর দাম বেড়েছিল আরও ১২ শতাংশ।আর পুজোর মাসে এক লাফে পঞ্চাশ শতাংশ অবধি মূল্য বৃদ্ধি।এর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অভিঘাত পড়ছে শহরের নিম্ন আয়ের পরিবারের উপরে, এবং গ্রামের নানা স্তরের মানুষের উপরে।খাবার,ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দামে বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের অধিকাংশ মানুষের আয় বৃদ্ধি ঘটেনি। চিকিৎসা ব্যবস্থায় সরকারী নিয়ন্ত্রণে শিথিলতার কারণে গরিব বা প্রান্তিক ও মধ্যবিত্ত মানুষজনদের কাছে চিকিৎসা করানো এতটাই ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে যাচ্ছে যে, তারা অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত চিকিৎসা বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর সাহস পাচ্ছেন না। একটু সুস্থ হলেই মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে দিচ্ছেন শুধুমাত্র অত্যধিক চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে না পেরে। বর্ষশেষে দেশের অগণিত গরিব মানুষের কাছেও এ-ও এক ‘প্রাপ্তি’। কত মানুষ ওষুধ খাওয়ার পরে পয়সার অভাবে ওষুধ বন্ধ করে দিচ্ছেন তথা ‘ড্রাগ ডিফল্টার’ হয়েছেন হয়তো কোনওদিন সমীক্ষায় জানা যাবে। জানা যাবে, মূল্যবৃদ্ধির বুলডোজারে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া বন্ধ করছেন কত মানুষ। জানা যাবে, এর ফলে অদৃশ্য ভাবে বিশেষত ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হার্টের অসুখের রোগীদের জীবন কতখানি বিপন্ন হয়েছে।
গত অক্টোবরে নিউ ইংল্যাণ্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত আমেরিকার জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত ‘দ্য ফেলিং ইউএস হেলথ সিস্টেম’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলা হয়েছিল যে, যে দুইটি বিষয়ে আমেরিকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রায়- সম্পূর্ণত ব্যর্থ হয়েছে, তা হলো এক, ব্যক্তি মানুষের স্বাস্থ্যসুরক্ষা দেওয়া এবং দুই, ভালো থাকার উপযুক্ত সামাজিক পরিবেশ তৈরি করা। রোগীদের অপ্রয়োজনীয় কষ্ট এবং অবান্তর মৃত্য এড়ানোর স্বাস্থ্যব্যবস্থা ব্যর্থ। আমেরিকার জিডিপির ১৭-১৮ শতাংশ স্বাস্থ্যের জন্য ব্যয় হওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে অসুখী দেশগুলির একটি। সেখানে ১৪২ কোটি জনসংখ্যার ভারতে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ জিডিপির দুই শতাংশেরও কম! সরকারী চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটি একটি প্রহসন নয় কি?
‘সবার জন্য চিকিৎসা’ নিশ্চিত করতে প্রধানত বিমার জন্য বিপুল বরাদ্দ করেছে -আয়ুষ্মান ভারত প্রভৃতি প্রকল্প দরিদ্রকেও বড় হাসপাতালে প্রবেশের ছাড়পত্র দিচ্ছে। কিন্তু যদি প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভঙ্গুর এবং মৃত্রপ্রায় অবস্থায় থাকে, তা হলে সাধারণ অসুখের জন্যও উচ্চতম স্তরের সরকারী হাসপাতাল কিংবা কর্পোরেট হাসপাতালে ছুটতে হবে মানুষকে।বিমা থাকলেও বেশ কিছু খরচ মেটাতে হয় পকেট থেকে।এর সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে খাওয়ার জন্য ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি যুক্ত হলে খরচের অঙ্ক কী দাঁড়াবে সহজেই অনুমেয়।সরকারী হাসপাতালে অপর্যাপ্ত শয্যাসংখ্যা ও দালাল চক্রের রমরমার কারণে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া দূরঅস্ত।তাই কঠিন অসুখে পড়েও মানুষ ধারদেনা করে অন্যত্র চিকিৎসা করাতে বাধ্য হন। চিকিৎসা করাতে যদি আয়ের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ব্যয় হয়ে যায়, তা হলে পরিবার-সহ জীবনধারণ কার্যত অসাধ্য হয়ে পড়ে। এই অত্যধিক চিকিৎসা-ব্যয় ও সরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থায় গড়িমসি এবং অব্যবস্থার কারণেই অধিকাংশ বয়স্ক মানুষজন অসুস্থতা যতটা সম্ভব লুকিয়ে রাখেন।
শুধু খরচের দিকটিই নয়, কেন্দ্রীয় সরকার প্রকাশিত অত্যাবশ্যক ওষুধের তালিকা নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগও রয়েছে।২০২২ সালে সরকার ওই তালিকা প্রকাশের পরে বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ‘ল্যানসেট’- এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, এই নির্দেশিকায় ওষুধগুলি কীভাবে ব্যবহৃত হবে, সে বিষয়েও রয়েছে বিস্তর অস্পষ্টতা। তালিকায় উল্লিখিত কোন্ ওষুধের কী উদ্দেশ্য,কোন্ পরিমাপে ব্যবহার করা যেতে পারে, নির্ধারণ করতে টাস্ক ফোর্স তৈরি করা দরকার ছিল। ২০২৪ সাল শেষ হতে চলল, সে কাজ করাই হলো না। নেহরু-প্যাটেল, গোডসে- গান্ধী ইত্যাকার বিতর্কের বাইরে দেশবাসীর স্বাস্থ্যেও কিঞ্চিৎ নজর দেবে সরকার, এটুকুই প্রত্যাশা।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

কাশ্মীরে ভয়াবহ জঙ্গি হানা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর হামলে পড়ল জঙ্গিরা। কাশ্মীরের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গিরা এলোপাথাড়ি গুলি…

3 hours ago

রাজ্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দাবি নিয়ে নীতিন সাক্ষাতে বিপ্লব!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- জাতীয় সড়ক এনএইচ-৮ -এর ভগ্নাবস্থায় বিভিন্ন অংশ দ্রুত সংস্কার ও স্থায়ী সমাধানের…

7 hours ago

ধান উৎপাদনে দেশে ষষ্ঠ স্থানে ত্রিপুরা, জমি ফেলে রাখবেন না কৃষকদের আহ্বান রতনের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-গ্রাম হলো আমাদের শক্তি,কৃষক আমাদের অন্নদাতা' এই স্লোগানকে সামনে রেখে রাজ্যের কৃষি ক্ষেত্রকে…

7 hours ago

এবার কি ইউসিসি?

কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার। রামমন্দির প্রতিষ্ঠা।তিন তালাক প্রথা বাতিল।নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ (সিএএ)। ওয়াকফ…

7 hours ago

ধস নেমে চলাচল বন্ধ জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়ে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-প্রচন্ড বৃষ্টি ও ভূমিধসের ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন জম্মু ও কাশ্মীরের রামবান জেলা…

1 day ago

না ফেরার দেশে পোপ ফ্রান্সিস!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের সোমবার মৃত্য হয়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।দক্ষিণ…

1 day ago