দেশ শাসন করেন কারা!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অষ্টাদশ লোকসভার সদস্যদের সম্পত্তির বহর দেখে যদি কারও চোখে কপালে উঠে যায়,সেক্ষেত্রে বলতে হবে,তিনি নির্ঘাত বিদায়ী সপ্তদশ লোকসভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পদের খোঁজ করেননি কখনও।সপ্তদশ লোকসভায় ৫৪৩ জন সাংসদের মধ্যে ৪৭৫ জনেরই – অর্থাৎ প্রায় অষ্টাশি শতাংশের (৪৭৫জন) ঘোষিত সম্পদের পরিমাণ ছিল এক কোটি টাকার বেশি। এবারের জয়ী-তালিকায় সাংসদদের গড় সম্পত্তি গতবারের চেয়ে পাঁচ শতাংশ বেশি,৯৩ শতাংশ অর্থাৎ ৫৪৩ জন সাংসদের মধ্যে এবার ৫০৪ জনই কোটিপতি, বিলেতি ভাষায় মিলিওনিয়ার। অ-সরকারী সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস বা এডিআরের তথ্য মতে,এবারে ধনাঢ্য সাংসদ- তালিকায় শীর্ষ তিন সাংসদের ঘোষিত সম্পত্তির বহর যথাক্রমে টিডিপির চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি (৫,৭০৫ কোটি), বিজেপির তেলেঙ্গানা থেকে নির্বাচিত কোন্ডা ভেঙ্কটেশ্বর রেড্ডি (৪,৫৬৮ কোটি) এবং হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে আসনে বিজেপির নবীন জিন্দাল (১,২৩১ কোটি টাকা)। অতএব,কোটিপতিদের ছড়াছড়ি।বস্তুত এরাই দেশের চালিকা শক্তি তথা আইনপ্রণেতা।
এই সম্পদের পরিমাণ ঠিক কতটা বেশি,তা বুঝতে গেলে তুলনা প্রয়োজন।নাইট ফ্র্যাঙ্ক নামক এক রিয়াল এস্টেট সংস্থা ২০২৩ সালে একটা হিসাব প্রকাশ করেছিল- কোনও দেশে শীর্ষ এক শতাংশ ধনী হতে গেলে অন্তত কত টাকার মালিক হওয়া প্রয়োজন।ভারতের ক্ষেত্রে এই অঙ্কটি ছিল এক কোটি পঁয়তাল্লিশ লক্ষ টাকা। কোনও ব্যক্তির সম্পদের পরিমাণ এর চেয়ে বেশি মানে তিনি ভারতের শীর্ষ এক শতাংশ ধনীর মধ্যে পড়েন। অর্থাৎ এবারের সাংসদরা গড়ে দেশের ধনীতম এক শতাংশের নিম্নসীমার সাড়ে পনোরো গুণ বেশি বড়লোক। অতি ধনীদের হিসাব ছেড়ে যদি গড় আয়ের খবর নেওয়া যায়? ভারতের চাকরিজীবী শ্রেণির মধ্যে মাথাপিছু মাসিক আয় বত্রিশ হাজার টাকার কাছাকাছি।লক্ষণীয়, দেশের মোট কর্মরত জনসংখ্যার দশ শতাংশেরও কম সংগঠিত ক্ষেত্রে নিয়োজিত,মূলত যাদের বেতনের হিসাব সমীক্ষায় ধরা হয়েছে। অন্যদের বেতন আরও কম। কত কম?যেমন পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ কর্মসংস্থান যোজনায় মজুরির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে দৈনিক ২৫০ টাকা।বছরে সর্বাধিক ১০০ দিনের কাজ, অর্থাৎ ২৫,০০০ টাকা।২০২৩ সালেও ভারতের দারিদ্ররেখা ছিল শহরে মাসে ১৯০০ টাকার সামান্য বেশি, গ্রামাঞ্চলে ১৬০০ টাকার কিছু বেশি।জাতীয় গড় মেনে নিলেও দেশের পাঁচ শতাংশের বেশি মানুষ এখনও এই দারিদ্রসীমার নিচে।সেখানে এই দেশের বর্তমান সাংসদদের গড় সম্পদের পরিমাণ বাইশ কোটি টাকা।
এডিআরের তথ্য বলেছে, বিজেপি ২৪০ জন সাংসদের মধ্যে ২২৭ জন (৯৫ শতাংশ) কোটিপতি।কংগ্রেসের ৯৯ জন সাংসদের মধ্যে কোটিপতি ২১ জন, ডিএমকের ২২ জন, তৃণমূলের ২৯ জনের মধ্যে ২৭ জন এবং সমাজবাদী পার্টির ৩৭ জনের ৩৪ জন কোটিপতি।এর বাইরে আপ-এর তিন জন, জেডিইউয়ের বারো জন এবং টিডিপির ১৬ জন কোটিপতি। মোট সাংসদের ৪২ শতাংশের ঘোষিত সম্পত্তি দশ কোটির বেশি।প্রসঙ্গত উল্লেখ থাকে যে,২০০৯ সালে কোটিপতি সাংসদের হার ছিল ৫৮ শতাংশ (৩১৫ জন)।তথ্য বলছে, তারপর থেকেই সাংসদের কোটিপতিদের ভিড় কার্যত স্রোতের মতো বেড়েছে।পনেরো বছরে ৫৮ থেকে ৯৩ শতাংশ যে বিরাট উল্লম্ফন,তা বলার অপেক্ষা রাখে না।লাঠি যার মহিষ তার, আপ্তবাক্যটি সামান্য বদলে এখন এটাই দ্বিধাহীন সত্য যে বিপুল নোট যার ভোট তার।ভোটে যে সবার উপরে নোট সত্য তাহার উপরেই নাই, এর মোক্ষম উদাহরণ কেন্দ্রী অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের মন্তব্য।এবারও তিনি লোকসভায় লড়েননি।এর কারণ হিসাবে তিনি বলেছিলেন,লোকসভা নির্বাচনে লড়ার মতো টাকার জোর তার নেই।টাকার জোরকেই গণতন্ত্রের প্রবেশিকা করে তোলা গণতন্ত্রের আত্মাকে হত্যা করার শামিল নয় কি?যে দেশে সাধারণ মানুষের পান্তা ফুরোনোর আগে নুন আনার সময়টুকুও থাকে না,সে দেশে কি এই অতি ধনীরা আদৌ জনপ্রতিনিধি হতে পারেন? কোন অর্থে তারা প্রতিনিধিত্ব করেন? যদি সংসদের বৃহদংশ অতি ধনী হয়, তা হলে গণতন্ত্রে ময়দান কি আদৌ সকলের জন্য সমান হয়? দারিদ্র সীমার নিচে থাকা পরিবারের জীবন কেমনভাবে কাটে, সে কথা উহ্য রাখলেও, কোনও মধ্যবিত্তের জীবন সংকট, তার আশা- আকাঙ্ঘা উত্থান পতনের কোনও আঁচ কি এই প্রতিনিধিরা টের পান? তাদের পক্ষে পাওয়া সম্ভব? সর্বোপরি, টাকার জোরই যদি প্রকৃতার্থে অধিকার অর্জনের একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়ায়, তবে তাকে আর গণতন্ত্র বলা যায় কিনা, ভাবা প্রয়োজন।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

খুশির ঈদ উদযাপন

অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…

1 hour ago

সাব ইনস্পেক্টর অব এক্সাইজ নিয়োগে, সরকারের নিয়োগনীতি কার্যকর করছে না টিপিএসসি, ক্ষুব্ধ বেকাররা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০১৮ সালে নতুন নিয়োগনীতি চালু করেছে রাজ্য সরকার। ২০১৯ সাল থেকে রাজ্য সরকারের…

2 hours ago

কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপক প্রচার সত্ত্বেও,হাসপাতালে জনঔষধির সস্তা ওষুধ সংকটে রোগীরা বঞ্চিত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয় সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সস্তায় ভালো গুণমানসম্পন্ন জনঔষধি তথা জেনারিক মেডিসিন…

2 hours ago

শান্তিরবাজারে ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন জগন্নাথ পাড়া!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-শান্তিরবাজারে সিনিয়র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হলো জগন্নাথপাড়া প্লে সেন্টার টিম। রবিবার বাইখোড়া ইংলিশ…

2 hours ago

বামফ্রন্টের রেখে যাওয়া ১২,৯০৩ কোটি সহ,রাজ্যে বর্তমানে ঋণের পরিমাণ ২১,৮৭৮ কোটি টাকা: অর্থমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত রাজ্য সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৮৭৮ কোটি…

3 hours ago

ক্রাইম ব্রাঞ্চের শক্তিবৃদ্ধিতে গুচ্ছ পদক্ষেপ : মুখ্যমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিগত ছয় মাসে ত্রিপুরা পুলিশ ক্রাইম ব্রাঞ্চকে ২২টি মামলা হস্তান্তর করা হয়েছে।২০২৪ সালের…

3 hours ago