দৈনিক সংবাদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন আক্রমণ!!

 দৈনিক সংবাদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন আক্রমণ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-এবার দৈনিক সংবাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ডা.মানিক সাহার ওএসডি পরমানন্দ সরকার ব্যানার্জি।আগরতলা সিজেএম কোর্টে তিনি মামলা করেছেন।মামলা নম্বর সিআর ২৮২/২০২৪/ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ২১০ এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩৫৬ (২), ৩৫৬ (৩) ধারায় মামলা করেছেন তিনি।
সম্ভবত তিনি মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের অনুমতি নিয়েই এই মামলা করেছেন।উক্ত মামলায় তিনি দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়াও,দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক এবং প্রকাশক প্রদীপ দত্ত ভৌমিক, ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিক ট্রাস্ট,ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সঞ্জয় পাল এবং দৈনিক সংবাদের ইমপ্রিন্ট অফসেট প্রেসকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন।যদিও তাঁর দায়ের করা মামলার নোটিশ এখনও দৈনিক সংবাদ এবং দৈনিক সংবাদ কর্তৃপক্ষ হাতে পায়নি।
এখন মামলা যখন হয়েছে, তখন আইন আইনের পথেই চলবে।বিচার ব্যবস্থার প্রতি দৈনিক সংবাদ বরাবরই শ্রদ্ধাশীল থেকেছে, আগামীদিনেও থাকবে।এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে অন্য জায়গায়।যে সংবাদের ভিত্তিতে দৈনিক সংবাদ এবং দৈনিক সংবাদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর ওএসডি পরমানন্দ সরকার ব্যানার্জি, সেই সংবাদের সাথে দৈনিক সংবাদ এবং দৈনিক সংবাদের কোনও প্রতিনিধির সরাসরি যোগসূত্র নেই।
সম্প্রতি রাজ্য বিধানসভার বর্ষাকালীন অধিবেশনে কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার উপস্থিতিতে তাঁরই ওএসডি’র বিরুদ্ধে একাধিক বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন।সুদীপ রায় বর্মণ মুখ্যমন্ত্রীর ওএসডি’র বিরুদ্ধে মারাত্মক দুর্নীতির অভিযোগ তুললেও তিনি কারোর নাম উল্লেখ করেননি।জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ এবং একটি দায়িত্বশীল ও অগ্রণী সংবাদ মাধ্যম হিসাবে দৈনিক সংবাদ বিধানসভায় উত্থাপিত কংগ্রেস বিধায়কের অভিযোগ রাজ্যবাসীর সামনে তুলে ধরে জনগণের প্রতি সংবাদ মাধ্যমের নৈতিক দায়িত্ব পালন করেছে।শুধু তাই নয়, দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও কোথাও ওএসডি’র নাম উল্লেখ করা হয়নি। পরবর্তীকালে সাংবাদিক সম্মেলন করেও কংগ্রেস বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রীর ওএসডি’র বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। দৈনিক সংবাদ সেই সংবাদও জনস্বার্থে তুলে ধরেছে।সেই প্রকাশিত সংবাদেও কারও নাম উল্লেখ করেনি দৈনিক সংবাদ।
প্রশ্ন হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর আরও একাধিক ওএসডি আছেন। কিন্তু হঠাৎ করে পরমানন্দ সরকার ব্যানার্জি কেন নিজেকে সামনে এনে মামলা করলেন?বিষয়টি ‘ঠাকুর ঘরে কে? আমি তো কলা খাইনি’ প্রবাদের মতো হয়ে গেল না?
দৈনিক সংবাদের প্রাণপুরুষ এবং প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রয়াত ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিক তাঁর জীবদ্দশায় যে আদর্শকে সামনে রেখে সংবাদপত্র পরিচালনা করেছেন,সেই আদর্শকে সামনে রেখেই দৈনিক সংবাদ পরিচালিত হচ্ছে এবং আগামী দিনেও একই আদর্শে অবিচল থাকবে। দৈনিক সংবাদ রাজ্যের মানুষের মুখপত্র হিসাবে বরাবরই বঞ্চিত,নিপীড়িত, অসহায় মানুষের কথা বলেছে।মানুষের অভাব, অভিযোগ, সমস্যার কথা দায়িত্ব নিয়ে তুলে ধরেছে। আজও সেই দায়িত্ব নিরলসভাবে পালন করে চলেছে। এর জন্য দৈনিক সংবাদ বরাবরই শাসকের চক্ষুশূল হয়েছে।শাসকের রোষানলে পড়েছে।কিন্তু দৈনিক সংবাদ জন্মলগ্ন থেকেই লক্ষ্য এবং দায়িত্বে অবিচল থেকেছে। কোনও ভয়ভীতি এবং হুমকির কাছে মাথা নত করেনি দৈনিক সংবাদ।আগামীদিনেও করবে না।
বিগত সরকারগুলির আমলেও দৈনিক সংবাদ জনগণের নানা অভিযোগ, বিধানসভায় বিরোধী দলের সদস্যদের উত্থাপিত নানা তথ্য, অভিযোগ,সরকার পক্ষের বক্তব্য দায়িত্ব সহকারে জনগণের সামনে তুলে ধরেছে।কিন্তু বিস্ময়ের ঘটনা হলো, অতীতের কোনও মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় বা মুখ্যমন্ত্রীর ওএসডি এই ভাবে দৈনিক সংবাদের বিরুদ্ধে এমন আক্রমণ এবং প্রতিহিংসা নামিয়ে আনেননি!দৈনিক সংবাদ জন্মলগ্ন থেকেই জনগণের কথা, বিরোধীদের অভিযোগ এবং সরকার ও শাসক দলের বক্তব্য গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে।বিগত কংগ্রেস- টিইউজিএস জোট সরকারের রাজত্বকালেও সঠিক তথ্য এবং জনগণের কথা জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্য জোট সরকারের চক্ষুশূল হয়েছিল।দৈনিক সংবাদে হামলা পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু দৈনিক সংবাদকে থামাতে পারেনি।একইভাবে বিগত পঁচিশ বছর ধরে দৈনিক সংবাদ বাম সরকারের চক্ষুশূল হয়ে থেকেছে।দৈনিক সংবাদের বিরুদ্ধে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মুখ বন্ধ করার আপ্রাণ চেষ্টা হয়েছে।বহু হুমকির মধ্যে পড়তে হয়েছে দৈনিক সংবাদকে।কিন্তু থেমে থাকেনি দৈনিক সংবাদ। আদর্শ থেকে একচুলও সরানো যায়নি।দৈনিক সংবাদের এই বলিষ্ঠ ভূমিকাকে হাতিয়ার করেই ২০১৮ সালে বামফ্রন্ট সরকারকে হটিয়ে প্রথমবারের মতো বিজেপি জোট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাজ্যে।কিন্তু এই সরকারও ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে নানাভাবে দৈনিক সংবাদের উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে।আর এখন তো আগের যাবতীয় আক্রমণকে পেছনে ফেলে দিয়েছে বর্তমান সরকার। দৈনিক সংবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিহিংসামূলক আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে।শুধু তাই নয় দৈনিক সংবাদের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র ফৌজদারি মামলাই নয়, দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধিদের নানাভাবে হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে।এমনকি দৈহিক আক্রমণের চেষ্টাও বাদ যাচ্ছে না।
এর থেকে স্পষ্ট, দৈনিক সংবাদ সঠিক পথে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আগামীদিনেও দৈনিক সংবাদ প্রয়াত সম্পাদক ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিকের আদর্শপথে চলবে।এই লক্ষ্য থেকে দৈনিক সংবাদকে কেউ সরাতে পারবে না-যতই আক্রমণ করা হোক।তবে একটা কথা মনে রাখতেই হবে, ক্ষমতা, পদ, চেয়ার সাময়িক। জনতা যেদিন ছুঁড়ে ফেলে দেবে, সেদিন আর ক্ষমতার এই অনৈতিক আস্ফালন থাকবে না।মানুষ ফিরেও তাকাবে না।কিন্তু দৈনিক সংবাদ মানুষের প্রতিনিধি হয়ে মানুষের কথা বলেই যাবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.