অনলাইন প্রতিনিধি:-প্রথমদিনের মতোই উড়ান আয়োজিত ত্রিপুরা লিটারেচার ফেস্টিভ্যালের দ্বিতীয়দিনও ছিল শ্রোতা ও দর্শকে পরিপূর্ণ। সাহিত্য, সংগীত ও বিজ্ঞানের এক অপূর্ব মেলবন্ধনে মুখর ছিল পুরো রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন। আগরতলা শহরে রবীন্দ্র ভবন প্রেক্ষাগৃহ সকাল থেকেই এক নং হল ও দুই নম্বর হল একই সঙ্গে পরিপূর্ণ এবং একই আয়োজনের পরপর অনুষ্ঠানে দর্শক শ্রোতাদের এমন উপস্থিতি ত্রিপুরা রাজ্যের ইতিহাসে বিরলতম ঘটনা। যা এবার ঘটে গিয়েছে উড়ান আয়োজিত ত্রিপুরা লিটারেচার ফেস্টিভ্যালে। উৎসবের দ্বিতীয়দিন সমস্ত দর্শক শ্রোতাদের মন কেড়ে নিয়েছেন লিভিং লিজেন্ড রাকেশ শর্মা এবং যুবকদের আইকন সঙ্গীতশিল্পী, পরিচালক এবং অভিনেতা অঞ্জন দত্ত।সেই সঙ্গে সাহিত্যের অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলো ছিল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ এবং দর্শক শ্রোতাদের মনোগ্রাহী।
শনিবার সকাল এগারোটায় ফেস্টিভ্যালের অন্যতম আকর্ষণ ছিল গায়ক, পরিচালক এবং অভিনেতা অঞ্জন দত্তের মুখোমুখি অনুষ্ঠান।রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের দুই নম্বর প্রেক্ষাগৃহ শুরু থেকেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। দর্শকদের এক বিশাল অংশ তার সরাসরি কথোপকথন ও সঙ্গীত উপভোগ করতে আগ্রহী ছিলেন। নিজের জনপ্রিয় গান ও অভিজ্ঞতার কথা শোনান তিনি। কথার ফাঁকে গিটারের ছোঁয়ায় গেয়ে ওঠেন ‘বেলা বোস’ ও ‘রঞ্জনা আমি আর আসবো না’- যা দর্শকদের উচ্ছ্বসিত করে তোলে। এর আগেই তিনি ত্রিপুরা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল-এর প্রদর্শনী মন্ডপ ঘুরে দেখেন এবং সেখানে বইয়ের স্টলে তিনি তার বইয়ে অটোগ্রাফ দেন।
ফেস্টিভ্যালের সবচেয়ে চমকপ্রদ মুহূর্ত আসে যখন ভারতের প্রথম মহাকাশচারী উইং কমান্ডার রাকেশ শর্মা রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে প্রবেশ করেন। ভারতীয় মহাকাশ অভিযানের এই জীবন্ত কিংবদন্তিকে স্বাগত জানাতে শত শত ছাত্রছাত্রী একত্রে গেয়ে ওঠেন ‘সারে জাহা সে আচ্ছা’। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে পুরো ভবন আবেগঘন পরিবেশে রূপান্তরিত হয়।
প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ করতেই হলভর্তি দর্শক-শ্রোতা দাঁড়িয়ে তাকে অভিবাদন জানান। মঞ্চে উপস্থিত হওয়ার পর পর্দায় তার মহাকাশ অভিযানের বিশেষ মুহূর্ত প্রদর্শিত হয়। এতে দেখা যায়, ১৯৮৪ সালে ভারতীয় মহাকাশ অভিযানের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘মহাকাশ থেকে ভারত কেমন দেখাচ্ছে’? এর উত্তরে রাকেশ শর্মা বলেছিলেন, ‘সারে জাহা সে আচ্ছা’।
এ সময় একদল শিল্পী ঐতিহাসিক এই গানটি গেয়ে ওঠেন, যা সমগ্র প্রেক্ষাগৃহকে এক আবেগঘন মুহূর্তে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। দর্শক-শ্রোতা এই অনন্য মুহূর্তে হাততালির মাধ্যমে তাকে অভিবাদন জানান।
এই বিশেষ দিনে রাকেশ শর্মাকে উড়ানের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জানান তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের উপদেষ্টা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত চক্রবর্তী। এছাড়া দৈনিক সংবাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সঞ্জয় পাল, হেডলাইন্স ত্রিপুরার সম্পাদক প্রণব সরকার, স্কুল অব সায়েন্সের অধ্যক্ষ অভিজিৎ ভট্টাচার্য এবং শ্যামসুন্দর জুয়েলারির কর্ণধার রূপক সাহাও তাকে সংবর্ধনা জানান। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে ভারতের মহাকাশ অভিযানে রাকেশ শর্মার অবদানের কথা।
ফেস্টিভ্যালের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল রাকেশ শর্মার মহাকাশবিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা। তিনি মহাকাশ যাত্রার অভিজ্ঞতা, প্রস্তুতি, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণা সম্পর্কে আলোচনা করেন। ছাত্রছাত্রীদের একাধিক প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি, যা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিজ্ঞানচর্চার আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তোলে। তিনি বলেন, ‘মহাকাশে যাওয়া শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত অর্জন নয় এটি দেশের সম্মান ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা।’
অনুষ্ঠানের শেষভাগে রাকেশ শর্মা ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। মহাকাশচারী হওয়ার জন্য কী কী গুণাবলি থাকা প্রয়োজন, শূন্য মাধ্যাকর্ষণ অবস্থায় জীবন কেমন, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার ভবিষ্যৎ এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘স্বপ্ন দেখো, কঠোর পরিশ্রম করো এবং নিজের লক্ষ্যের প্রতি নিষ্ঠাবান থাকো। একদিন তোমরাও মহাকাশের অংশ হতে পারবে।’
এই উৎসবে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং নতুন মিশন নিয়েও আলোচনা হয়। তিনি ভারতের চন্দ্রযান ও গগনযান মিশন সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন এবং ভবিষ্যতে ভারতীয় মহাকাশ অভিযানের আরও অগ্রগতির আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ত্রিপুরা লিটারেচার ফেস্টিভ্যালের দ্বিতীয়দিন শুধুমাত্র সাহিত্য বা সঙ্গীতের ক্ষেত্রেই নয়, বিজ্ঞান ও মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রেও এক অনন্য মাত্রা যোগ করে। অঞ্জন দত্তের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা এবং রাকেশ শর্মার ঐতিহাসিক উপস্থিতি দর্শকদের মুগ্ধ করে। ফেস্টিভ্যালের এই বিশেষ দিনে বিজ্ঞান, সঙ্গীত এবং আবেগের অপূর্ব সংমিশ্রণ প্রত্যক্ষ করলেন উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারা। এছাড়াও এদিন রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের দুই নং প্রেক্ষাগৃহে আলোচনায় অংশ নেন নরেশ দেববর্মা, দরবা সায়ন শ্রীনিবাস আচারিয়া, কাইরি মগ চৌধুরী এবং রশ্মিকা মান্ডাওয়ালা ও সরখাইবাম গমবিনি। আরেকটি সেশনে অংশ নেন বুকার পুরস্কার বিজয়ী গীতাঞ্জলি শ্রী এবং রাজ্যের রবীন্দ্র গবেষক বিকচ চৌধুরী। সন্ধ্যায় আরও একটি সেশনে অংশ নেন ড. নবকুমার বসু এবং অনুরাধা পূজারী শর্মা। এর পরই চন্দ্রিমা রায়ের আবৃত্তি পরিবেষণা। রাতে সেঁজুতি গুপ্ত সঙ্গীতে মাতিয়ে দেন গোটা হল। এদিন বহুরূপীর পরিবেশনা এবং পদ্মশ্রী ঢাকি গোকুল চন্দ্র দাসের ঢাকের ঢাকবাদ্য দর্শক শ্রোতাদের মন কেড়ে নেয়।
এই ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলোর স্মৃতি দর্শকদের মনে দীর্ঘদিন গেঁথে থাকবে। আগামীদিনে ত্রিপুরা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল কী চমক নিয়ে আসবে, তা দেখার অপেক্ষায় থাকবে সকলেই।
অনলাইন প্রতিনিধি :-শনিবার আমেরিকার পেনসিলভ্যানিয়া প্রদেশের ইয়র্ক কাউন্টির ‘ইউপিএমসি মেমোরিয়াল হাসপাতাল’ নামে ওই হাসপাতালে ঢুকে…
অনলাইন প্রতিনিধি :-আগরতলা-গুয়াহাটি-আগরতলার মধ্যে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চলাচল এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা। এই মন্তব্য করেন…
অনলাইন প্রতিনিধি :-২৪ ঘণ্টা ধরে তেলঙ্গানার শ্রীসৈলাম সুড়ঙ্গে আটকা পড়েছেন আট শ্রমিক। কাদাজলে ভরে গিয়েছে…
মার্কিন প্রেসিডেন্ট গণতান্ত্রিক রায়ের দুই লাইনের এক মন্তব্যে, শুরু হয়েছে।পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে,…
অনলাইন প্রতিনিধি :-বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমল থেকেই কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার দুর্নীতির আখড়া হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।দুর্নীতির…
অনলাইন প্রতিনিধি :-অকস্মাৎ আগুন লাগল কাছাড় জেলায় বরাক ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসে। আগুনের সুত্রপাত ট্রেনের চাকা থেকে।…