দ্বিতীয়বার সরকার করে প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী

 দ্বিতীয়বার সরকার করে প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দৈনিক সংবাদ অনলাইন প্রতিনিধি।। দ্বিতীয়বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করার পর বৃহস্পতিবার প্রথম সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন প্রফেসর ডা: মানিক সাহা। এদিন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডস্থিত মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎ করেন তিনি।
এর আগে মাত্র ৮ মাসের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। এবার তাঁর হতে পাঁচ বছর, মাঝে যদি কোনও সমস্যা না হয়। কাজেই সময়টা অনেকটা বেশি তাঁর কাছে। তবে রাজ্যের উন্নয়নে ৫ বছরও কম সময় বলে মনে করেন তিনি। এইজন্যে উল্টো কাউন্টডাউন এর ক্যালেন্ডার তৈরির করার পরিকল্পনা নিচ্ছেন তিনি। যেই ক্যালেন্ডারের দিকে তাকালেই প্রতিদিনই কমতে থাকবে পাঁচ বছরের দিনাঙ্ক। সরকারি দপ্তরের প্রত্যেক দেওয়ালে লাগানো থাকবে এই ক্যালেন্ডার। সাংবাদিক সম্মেলনে এই অভিনব পরিকল্পনার কথা তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই তিনি রাজ্যবাসীকে ধন্যবাদ জানান বিজেপি এবং তাদের জোটশরিক আইপিএফটির উপর আস্থা রেখে দ্বিতীয়বারের জন্যে সরকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবার জন্য। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মার্গ দর্শনে ত্রিপুরাতেও মানুষ বিজেপির উপর আস্থা রেখেছে। স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর আগমন এবং ব্যাপক লোকসমাগম নিয়ে মানিক সাহা বলেন, কোন ধরনের ভাষণ না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান দেখার জন্য মানুষ এত সুশৃঙ্খলতার সাথে সেখানে বসে ছিল যা সত্যি প্রশংসনীয়।
এদিন তিনি ধন্যবাদ জানান, নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে যারা যারা ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে নির্বাচন কমিশন , আরক্ষা দপ্তর , ত্রিপুরা সরকারের আধিকারিকগণ , সংবাদমাধ্যম সহ রাজ্যের সমস্ত ভোটারদের। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে ইতিহাস রচনা হয়েছে। কারণ কোন জায়গায় কোন রকম উশৃঙ্খলতার খবর ছিল না ১৬ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ ভোটের দিন। এতদিন ধরে রাজ্যে বিভিন্ন ধরনের সাইন্টিফিক রিগিং হতো , ছাপ্পা ভোটের কথা বলা হত ১৬ ই ফেব্রুয়ারি এগুলি কোথাও ছিল না। ২রা মার্চ ফলাফলের দিন কোন ধরনের সমস্যা প্রত্যক্ষ করা যায়নি। এর জন্যেও তিনি সবাইকে ধন্যবাদ দেন।
কিন্তু ইদানিংকালে বেশ কিছু ঘটনা নিয়ে এদিন সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মানিক সাহা। তিনি বলেন, কিছুদিন যাবৎ বেশ কিছু জায়গায় কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার খবর আসছে। যা একটা স্বার্থান্বেষী মহল থেকে সংগঠিত করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতির কঠোরভাবে মোকাবেলা করার জন্য আরক্ষা দপ্তরকে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন বলে দাবি করেন। বলেন, আইন আইনের পথেই চলবে ।
নির্বাচনের আগে নির্বাচনী ইশতেহার বা ভিশন ডকুমেন্ট যা বিজেপি প্রকাশ করেছিল তার সঠিক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করবে বিজেপি সরকার। এমনটাই বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন ত্রিপুরাতে আইনের শাসন যেন বজায় থাকে সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। তাছাড়া স্বাস্থ্য ও কৃষিকে সবচাইতে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি শিক্ষা এবং ক্রীড়াঙ্গনকেও সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবে বিজেপি সরকার। সর্বোপরি সাধারন এবং প্রান্তিক মানুষের মৌলিক সমস্যা নিরসনের দিকেও গুরুত্ব দেবে সরকার।
জনজাতিদের প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের জনজাতি ক্ষেত্রগুলি দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন সমস্যায় ধুঁকছিল। বিজেপি-আইপিফটি জোট সরকার চেষ্টা করেছে সেই সমস্যাগুলি সমাধান করার। আগামী দিনে সেই সমস্যা গুলির ওপর আরও বেশি করে নজর দেওয়া হবে যেন রাজ্যের জনজাতি ভাই-বোনদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন আরও বেশি করে হয়, বললেন ড: মানিক সাহা।
তিনি আরও বলেন, আঞ্চলিক দল তিপ্রা মথার সাথে রাজ্যের জনজাতিদের উন্নয়নের স্বার্থে কথা হয়েছে। তবে গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড এর দাবি কখনোই সমর্থন করবো না বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যেমন স্বচ্ছ সরকার চলছে ঠিক একইভাবে ত্রিপুরায়ও সরকার চালানোর ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতার নিদর্শন রাখতে চান বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার সকালেই নতুন সরকারের প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় মহাকরণে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী সহ মন্ত্রিসভার আরও ৮ জন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন । বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ নিয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী জানান পানিসাগরের বিধায়ক বিনয়ভূষণ দাসকে বিধানসভার পোর্টেম স্পিকার বানানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বৈঠকে। পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করার আগে ভোট অন একাউন্ট পাশ করা হবে। এই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয় এদিনের ক্যাবিনেট বৈঠকে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও আগামী এক দুইদিনের মধ্যেই দপ্তর বন্টনের কথা ঘোষণা হবে বলেও জানান তিনি। তবে দপ্তর বণ্টনের আগে দিল্লি যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই বিস্তারিত আলোচনা হবে।
রাজ্যমন্ত্রীসভায় নতুন মুখের আগমন এবং পুরনোদের বাদ যাওয়া নিয়ে করা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন , বিজেপির রীতিনীতি এরকম। কাউকে বাদ দেওয়া হয়নি। কেউ আসবে কেউ যাবে। এটা রুটিন কাজের মধ্যেই পরে। তিনি আরো বলেন খুব শীঘ্রই মন্ত্রিসভার বাকি ৩ টি শূন্য আসন পূরণ করা হবে।
এদিনের বৈঠক শেষ করেই সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ড মানিক সাহা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.