ধনপুরে ৮৩.৯২%,বক্সনগরে ৮৯.২%।দুই কেন্দ্রেই উপভোট নির্বিঘ্নে।
অনলাইন প্রতিনিধি :- দুই-একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া রাজ্যের দুটি বিধানসভা ধনপুর ও বক্সনগর কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ভোট পর্ব অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ভোটকে কেন্দ্র করে দুই কেন্দ্রের কোথাও বড় ধরনের কোনও অশান্তির খবর নেই। নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বিকাল চারটা পর্যন্ত সার্বিক ভোট পড়েছে ধনপুর কেন্দ্রে ৮১.৩৪ শতাংশ এবং বক্সনগর কেন্দ্রে ৮৫.৫২ শতাংশ। তবে এই ভোটের হার দুই কেন্দ্রেই আরও বাড়বে বলে দাবি করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কেননা, নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরও দুই কেন্দ্রের বহু বুথে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভোটারদের দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা গেছে। রাত আটটায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন থেকে সর্বশেষ যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তাতে ২৩ ধনপুর কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৮৩.৯২ শতাংশ এবং ২০ নং বক্সনগর কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৮৯.২ শতাংশ। এক কথায়, দুই কেন্দ্রেই ভোট হয়েছে উৎসবের মেজাজে।ভোটকে কেন্দ্র করে অশান্তি হয়েছে ধনপুর বিধানসভার আনন্দপুর ৫ নং বুথে। এলাকাটি এডিসির অন্তর্ভুক্ত এবং জনজাতি অধ্যুষিত এলাকা। এই বুথে সকাল এগারোটা নাগাদ শাসকদল বিজেপি এবং সিপিএম ও তিপ্ৰা মথা কর্মীদের মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় সাতজন বিজেপি কর্মী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে চারজনকে জিবি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ থেকেই অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ তোলা হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রথমে বিজেপি কর্মীরা সিপিএমের কয়েকজন কর্মীকে মারধর করেছে।পরবর্তীকালে সিপিএম এবং তিপ্রা মথা কর্মীরা একজোট হয়ে বিজেপি কর্মীদের উপর আক্রমণ করে।শাসকদলের পক্ষ থেকে অবশ্য সিপিএম কর্মীদের মারধরের ঘটনা অস্বীকার করা হয়েছে।তবে নিরাপত্তা কর্মীদের তৎপরতার কারণে অশান্তি বেশিদূর গড়াতে পারেনি।পরে ওই বুথে ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। এছাড়াও ধনপুরের চান্দুলে ১৪ নং বুথে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।সেখানে শাসক ও বিরোধী দলের কর্মীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। এতে পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নিরাপত্তা কর্মীদের হস্তক্ষেপে ঘটনা বেশিদূর গড়ায়নি। ওই বুথেও পরে ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। এই দুটি ঘটনা ছাড়া আর তেমন কোনও ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।বক্সনগর কেন্দ্রে একটিও গোলমালের ঘটনা নেই।পুরো কেন্দ্রেই ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণ। ধনপুরের সিপিএম প্রার্থী কৌশিক চন্দ প্রায় চার হাজার ভোটারকে ভোটদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুললেও, তার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।এ দিন দুই কেন্দ্রে উপভোটকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।ধনপুরে ৫৯টি বুথ এবং বক্সনগরে ৫১টি বুথ।প্রতিটি বুথেই নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানরা।বুথের দুশো মিটারের বাইরে এবং ভোট কেন্দ্রগুলিতে যাওয়ার রাস্তায় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল টিএসআর ও পুলিশ।কোনও কেন্দ্রেই ভোটারদের তরফ থেকে ভোটদানে বাধা,বা ভোট কেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি।দুই কেন্দ্রেই দিনভর টিএসআর ও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানরা টহল দিয়েছেন।
এক কথায় নিরাপত্তা ছিল কঠোর। তবে সকালে ভোট গ্রহণ শুরু হলে দুই কেন্দ্রের একাধিক বুথে ইভিএম গোলমালের কারণে ভোটপর্ব বিলম্বিত হয়েছে। যদিও খবর পাওয়ার সাথে সাথে ইভিএম পরিবর্তন করে পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু করা হয়। এতে ভোটারদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে ভোটারদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তবে বিলম্ব হলেও সকল ভোটাররাই তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন।এদিন সকাল থেকেই দুই কেন্দ্রের প্রতিটি বুথে নারী ও পুরুষ ভোটারদের দীর্ঘ লাইন লক্ষা করা গেছে। দুপুরের দিকে লাইন কিছুটা ফাঁকা হয়ে গেলেও বিকালের দিকে আবার ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
তবে এ দিন ভোটকে কেন্দ্র করে দুই কেন্দ্রেই বেশকিছু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য করা গেছে। যেমন ধনপুর কেন্দ্রের বিজেপি ও সিপিএম প্রার্থীকে দিনভর নিজ নির্বাচন ক্ষেত্রের বিভিন্ন বুথ ও এলাকায় ঘুরতে দেখা গেছে। দুই প্রার্থীকে একে অপরের কাঁধে হাত দিয়ে ছবি তুলতেও দেখা গেছে। বক্সনগর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীকেও দিনভর নিজ কেন্দ্রের বুথে বুথে চরকির মতো ঘুরতে দেখা গেছে। কিন্তু বক্সনগর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী মিজান হোসেনকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোথাও দেখা যায়নি।মোদ্দা কথা, তার হদিশ কোথাও পাওয়া যায়নি। তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোথায় আছেন রহস্যজনকভাবে তিনি গোপন করেছেন। পরে জানা যায়, তিনি বাড়ি থেকেই বের হননি। এর পেছনে কী কারণ তা অবশ্য জানা যায়নি। শুধু তাই নয়, ধনপুর এবং বক্সনগর দুই বিধানসভার বহু বুথে সিপিএম দলের কোনও এজেন্ট দেখা যায়নি। এমনকী দুই কেন্দ্রেই বুথের বাইরে রাজনৈতিক দলের কর্মীদের যে পরম্পরাগত জমায়েত লক্ষ্য করা যেতো, উপভোটে দুই কেন্দ্রেই শাসকদলের কর্মীদের উপস্থিতি ছাড়া সিপিএম দলের কর্মীদের তেমন কোনও উপস্থিতিই লক্ষ্য করা যায়নি। সব দেখেশুনে মনে হয়েছে, ভোট হয়েছে একেবারে একতরফা। বিশেষ করে এই পরিস্থিতি সব থেকে বেশি নজরে পড়েছে বক্সনগর কেন্দ্রে। ধনপুর কেন্দ্রে কিছু কিছু এলাকায় ‘সিপিএম কর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও শাসক দলের তুলনায় তা নিতান্তই কম।এদিকে, সিপাহিজলা জেলার জেলা শাসক ডা. বিশাল কুমার জানিয়েছেন, ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। দুটি জায়গায় সামান্য গোলমাল হয়েছে। তবে নিরাপত্তা বাহিনী সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সিপিএম দলের পক্ষ থেকে কয়েকটি অভিযোগ জানানো হয়েছিল। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখার পর দেখা গেছে সব অভিযোগ সঠিক নয়। যে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে, সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া দুই কেন্দ্রেই সিপিএম দলের কয়েকটি বুথে এজেন্ট ছিলো না। এ ব্যাপারে আমি নিজে সিপিএম নেতৃত্বদের বার বার অনুরোধ করেছি এজেন্টদের নাম দেওয়ার জন্য। আমরা বলেছি প্রয়োজনে পুলিশ এসকর্ট করে এজেন্টদের পৌঁছে দেব। কিন্তু সিপিএম নেতৃত্ব কোনও সহযোগিতা করেনি। নিরাপত্তা নিয়ে জেলা শাসক ডা. বিশাল কুমার সন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ভোটকে কেন্দ্র করে শুরু থেকেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। আমরা চেয়েছি ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে। সেভাবেই যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে একটি ঘটনা বাদ দিলে দুই কেন্দ্রে ভোট পুরোপুরি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, ভোটদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এখন ভোট গণনার জন্য অপেক্ষা।