ধনাঢ্যের কথা

 ধনাঢ্যের কথা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নরেন্দ্র মোদি সরকারের আমলে সর্বাধিক আলোচিত এক ব্যবসায়ী শিল্পপতির নাম গৌতম আদানি। তিনি কেবল দেশের অভ্যন্তরেই আলোচিত নহেন, ইদানীং বিশ্বময় এই বণিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হইয়া উঠিয়াছে। বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষা শেষ হইবার আগেই তাহার শিক্ষাঙ্গনের পাট চুকিয়া গিয়াছিল। ভারতদেশের এই নাগরিক বণিক আজ কেবল এশিয়া মহাদেশে নহেই বিশ্বে অন্যতম ধনিক হিসাবে খ্যাতি, কুখ্যাতি পাইয়াছেন। সম্পদের বিশাল পাহাড় রচনা করিয়া আজ এই ঝঞ্ঝার সম্মুখীন তিনি। গত এক সপ্তাহে তাহার সম্পদ মূল্য কমিয়া গিয়াছে পাঁচ হাজার কোটি ডলার।

_128419343_adani

ফোর্বসের ধনী তালিকায় তিনি তিন নম্বর হইতে সাতে নামিয়া আসিয়াছেন। কেবল আর্থিক ক্ষতিই নহে, তাহার সুনামেও বড়সড় ধাক্কা লাগিয়েছে।আদানি শিল্পগোষ্ঠী শেয়ার বাজারে জালিয়াতি করিয়া থাকে। কী মতে ও প্রকারে এইসব জালিয়াতি তাহার বিবরণ প্রকাশ করিয়াছে আমেরিকার একটি বিনিয়োগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিণ্ডেনবার্গ রিসার্চ। এই ঘটনায় বিশ্বব্যাপী আদানির সংস্থার সুনামেও আঘাত লাগিল । এই গবেষণা পত্র প্রকাশের পর আদানির নানান কোম্পানির শেয়ারের দাম পড়িতে শুরু করিয়াছে এবং এই পতন নাকি উল্লেখযোগ্য,এমনই মনে করিতেছে নানান আর্থিক সংস্থা।

দেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বান্ধব বলিয়া পরিচিত এই গৌতম আদানিও গুজরাট প্রদেশ হইতে আসিয়াছেন।দেশে বিরোধী দলসকলের নিয়মিত অভিযোগ, আদানি এবং মোদির রাজনীতি এবং বাণিজ্য লইয়া সহযোগিতার সম্পর্ক রহিয়াছে দীর্ঘদিন ধরিয়া।
মোদির প্রধানমন্ত্রীর আমলে আদানির সাম্রাজ্য কয়েকশত গুণ বৃদ্ধি পাইয়া যায়। তাহার ব্যবসায় সূচনা ছিল ভোগ্যপণ্য ব্যবসা দিয়া।গুজরাট হইতে ভোগ্যপণ্য অন্য রাজ্যে, বাজারে লইয়া যাইতেন।এই আমলে তাহার ব্যবসার গতিপথ ও তীব্রতা পরিবর্তিত হয়।সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর হইতে শুরু করিয়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, খনি, ভোজ্যতেল, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি ইত্যাদি ক্ষেত্রে তিনি বিনিয়োগ করিয়াছিলেন।

সম্প্রতি তিনি সংবাদ মাধ্যম আর সিমেন্টেও বিনিয়োগ করিতেছেন, দেখা গিয়াছে। তাহার ব্যবসা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাহার তালিকাভুক্ত সাতখানা কোম্পানির শেয়ারের দামও বৃদ্ধি পাইতে থাকে। সর্বশেষ গত তিন বছরে তার কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে দেড় হাজার শতাংশেরও বেশি। আবার প্রচুর পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগও পাইয়াছে আদানির শিল্প গোষ্ঠী। সম্পদের পাহাড়ে বসিয়া শেষপর্যন্ত আদানি ফোর্বসের তালিকায় বিশ্বের তৃতীয় ধনিক হিসাবে খেতাব পাইয়া যান। তাহার আগেকার নাম ছিল বার্নার্ড আরনল্ড এবং ইলন মাস্ক এই দুই ধনিকের সেই সময়ে তাহার সম্পদের পরিমাণ ছিলো ১২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বিশাল সম্পদের মালিক হইলেও তাহার পরিচিতি ছিল না। ৬০ বৎসর বয়সি আদানি নিজেই তাহার সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম দেখাশোনা করিয়া থাকেন। সম্প্রতি তাহার দুই পুত্র তাহার ব্যবসায় যুক্ত হইয়াছেন। তার স্ত্রী একজন দন্ত চিকিৎসক। আদানি সম্পর্কে এই সকল তথ্য সকলের সম্মুখে আসে ফোর্বসের খেতাবের পর। দেশের ভিতরে বিরোধী রাজনীতিকেরা বরাবরই বলিয়া থাকে আদানি প্রধানমন্ত্রীর বান্ধব বলিয়া সকল সুযোগ পাইয়া থাকে, যদিও আদানি এই অভিযোগ বরাবর খণ্ডন করিয়া থাকেন। মোদি সরকার ও আদানিকে সুযোগ দেওয়া হয় বলিয়া অভিযোগ অস্বীকার করিয়াছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদি আদানির কর্পোরেট বিমান ব্যবহার করিয়া থাকেন, এই লইয়া তুমুল সমালোচনা শুরু হইলে আদানি বলিয়াছিলেন, মোদি বিমানের পুরো টাকাই শোধ করিয়া দিয়া থাকেন। ইদানীং বিশাল সম্পদের অধিকারী হইবার পর আদানি নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করিতে চাহিতেছেন। নিজেও সংবাদ মাধ্যম কিনিয়াছেন। নিজেকে লাজুক বলিতেই তিনি ভালোবাসেন। তাহার কথায়, দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিই তাহাকে অধিক পরিচয় ঘটাইয়া দিয়াছে, বিখ্যাত করিয়াছেন। কারণ তাহারা সব সময়েই তাহার সমালোচনা করিয়া থাকেন।

বিশেষ করিয়া রাহুল গান্ধী ২০১৪ সালের পর হইতে প্রায় সকল সময়েই আদানির বন্ধুপ্রীতির কথা বলিয়া থাকেন। আদানির উল্কাগতিতে উত্থানের যে অনুশীলন তাহাতে বিশাল ধাক্কা আসিল জানুয়ারীর তৃতীয় সপ্তাহে। শুধু এক সপ্তাহেই শেয়ার বাজারে তাহার কোম্পানির শেয়ারে ধস নামিয়া লোকসান হয় বিশাল। তাহার মূলধনের ক্ষতি হইয়াছে চার হাজার আটশতে কোটি ডলার। হিণ্ডেনবার্গ রিসার্চ বলিতেছে, আদানির ব্যবসা বিশ্বের নানান জায়গায় যেসকল কর অবকাশের সুযোগ পাইয়া থাকে সেইগুলির বেআইনি ও অনুচিত ব্যবহার করিয়া থাকে।আবার আদানির বিপুল পরিমাণ ঋণের কথা ও উদ্বেগের কথাও বলিতেছে তাঁহারা।

আদানি অবশ্য এর আগেও নানান বিতর্কে পড়িয়াছেন। যেমন কেরলে ৯০ কোটি টাকার বন্দর নির্মানের কাজে গিয়া মৎস্যজীবীদের বিক্ষোভের মুখে পড়িতে হয়।এই জন্য আদানি মৎস্যজীবী সংগঠন ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করিয়াছেন। অস্ট্রেলিয়ায় আদানির কারমাইকেল কয়লাখনি লইয়া পরিবেশবাদীরা দীর্ঘ সময় ধরিয়া প্রতিবাদ জানাইয়া আসিতেছেন। সব মিলাইয়া মোদি আমলে উল্কা গতিতে যাহার উত্থান সেই আদানি যে বিশাল ধাক্কা খাইয়াছেনএই লইয়া কাহারও দ্বিমত নাই।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.