এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

কোন ও চাওয়া যখন পথের থেকে বেশি সংখ্যায় পথবন্ধক কে তৈরি করে, তাকে পরিত্যাগ করাই বিধেয়।কারণ সেই চাওয়ার পিছনে আর যা-ই থাক, সামগ্রিক নাগরিক সমাজের বিষয়ে মঙ্গলভাবনা থাকে না। সম্প্রতি এই সারসত্যটি আইনের ভাষায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। চলতি সপ্তাহের প্রারম্ভে উপাসনাস্থল আইন সংক্রান্ত মামলায় ক্রমান্বয়ে নতুন আবেদন পেশ হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি শুনানির সময়ে মন্তব্য করেছেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে।এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন’।বিচারপতি খান্না বলেছেন, এ নিয়ে নয়া আবেদন পেশ এবার শেষ হওয়া প্রয়োজন।এ সংক্রান্ত নতুন আবেদন শীর্ষ কোর্ট শুনবে না।কেবল যদি নতুন বক্তব্য জানিয়ে কোনও আবেদনকারী মামলার পক্ষ হতে চান তবেই তার বক্তব্য শোনা হবে।এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ফের এই মামলার শুনানি হবে সে প্রসঙ্গ বাহ্য।
প্রায় সকলেই জ্ঞাত তৎসত্ত্বেও স্মরণে থাক, ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইন অনুযায়ী, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট কোনও ধর্মীয় স্থানের চরিত্র যা ছিল তা-ই বজায় রাখতে হবে।রাম জন্মভূমি বিবাদকে এই আইনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল।সেই আইনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে আবেদন পেশ করেন বিজেপি নেতা ও আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায়।সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলার শুনানি চলাকালীনই শাহি ইদগা-কৃষ্ণ জন্মভূমি, কাশী বিশ্বনাথ-জ্ঞানবাপী ও সম্ভল মসজিদ বিবাদ সহ ১৮টি ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতে মামলা করেন হিন্দু আবেদনকারীরা।এ সব ক্ষেত্রে আবেদনকারীরা দাবি করেন, মন্দিরের উপরেই মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। তাই ফের মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন।এই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ না করায় পরবর্তীকালে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় পূর্বতন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়কে।পরে নতুন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চ এক নির্দেশে গোটা দেশে ধর্মস্থানে সমীক্ষা চালানোর মামলা দায়ের এবং তা নিয়ে নির্দেশদান স্থগিত রাখে।ফলে আপাতত বন্ধ রয়েছে নিম্ন আদালতে এই ধরনের মামলার প্রক্রিয়া। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাবরির জমি বিবাদের নিরসন হয়েছে।মসজিদের জায়গাতেই নির্মিত হয়েছে শ্রীরামের পুণ্য মন্দির।কিন্তু বিতর্কে আগল পড়ছে না। মথুরায় শাহি দরগা, কাশীর জ্ঞানবাপী,মধ্যপ্রদেশের ভোজশালার কামাল মওলা মসজিদ,রাজস্থানের আজমের শরিফে খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির দরগা, এমনকী তাজমহল এবং কুতুব মিনার খুঁড়ে মন্দিরের (হিন্দু ও জৈন) অস্তিত্ব খুঁজে বের করার দাবিটি রীতিমতো জোরালো।
মন্দির ওহি বানায়েঙ্গে’ স্লোগান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তালিকা ধরে ধরে বাকিগুলির পালা সংক্রান্ত চলমানতায় লাগাম টেনেছেন প্রধান বিচারপতি খান্না।হোক দীর্ঘদিনের ফেলে রাখা, তবু ভারতের আত্মা ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’ রক্ষার স্বার্থে অতি-বিতর্কিত, অতি-আশঙ্কিত বিষয়গুলিকে দেরাজে বন্ধ করে রাখাই কাম্য।এমনকী, কেন্দ্রীয় সরকার এখনও সে পথেই হাঁটতে চাইছে।গত বছরের নভেম্বরে দেশের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিলেন, উপাসনাস্থল আইন মামলার বিভিন্ন দিক নিয়ে একটি সার্বিক হলফনামা কেন্দ্রের তরফে পেশ করা হবে।কিন্তু এখনও ওই হলফনামা পেশ করেনি কেন্দ্র।অবশ্য মামলাকারী বা বাদী পক্ষেরও একটি বক্তব্য রয়েছে।১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইন সম্পর্কে তারা প্রশ্ন তুলেছেন, একটি আইন তৈরি হওয়া মানে তা কি অপরিবর্তনীয়? তারা দাবি করছেন, এই আইন সংবিধানে উল্লিখিত ধর্মাচরণের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।তাদের বক্তব্য,আইনে বলা আছে ধর্মীয় উপাসনাস্থলের চরিত্র বদল করা যাবে না, কিন্তু চরিত্র বিশ্লেষণ করা যাবে না এমন কথা বলা নেই।বাস্তবিক, এক শ্রেণীর মানুষের চাহিদা অপার!এরা স্বদেশে সব মসজিদের মাটি খুঁড়ে বিজয়ের হাসি হাসতে চান, আবার একই সঙ্গে চান প্রতিবেশী বাংলাদেশ সম্পূর্ণ ‘সেক্যুলার’ হোক।সংখ্যাগুরু আদিপত্যবাদের অট্টহাসি যে কতখানি গণবিদারক হতে পারে, বর্তমান বাংলাদেশ তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। আপন ধর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান, ভক্তিমান থেকেও বহু মানুষ অন্য মানুষের দিকে তাকান ধর্মচিহ্ন না দেখে, বরং হাসি-কান্নায় গড়া এক একটি গোটা মানুষকে তারা দেখতে চান। এই মানুষেরা নিজের ধর্ম মানতে গিয়ে অন্য ধর্ম বা ধর্মস্থানের উপর চড়াও হয় না, ঘৃণা ও হিংসা ছড়িয়ে সংসারের সুখ ভোগ করতে চায় না।এই সংখ্যালঘুরাই আজকের গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত।এই আবহে উপাসনাস্থল আইনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি খান্না ক্ষোভ প্রকাশ করে যে মন্তব্য করেছেন, তথা বিতর্কে আগল দিতে চেয়েছেন তা সর্বান্তঃকরণে ধন্যবাদার্হ।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

খুশির ঈদ উদযাপন

অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…

11 hours ago

সাব ইনস্পেক্টর অব এক্সাইজ নিয়োগে, সরকারের নিয়োগনীতি কার্যকর করছে না টিপিএসসি, ক্ষুব্ধ বেকাররা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০১৮ সালে নতুন নিয়োগনীতি চালু করেছে রাজ্য সরকার। ২০১৯ সাল থেকে রাজ্য সরকারের…

12 hours ago

কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপক প্রচার সত্ত্বেও,হাসপাতালে জনঔষধির সস্তা ওষুধ সংকটে রোগীরা বঞ্চিত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয় সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সস্তায় ভালো গুণমানসম্পন্ন জনঔষধি তথা জেনারিক মেডিসিন…

12 hours ago

শান্তিরবাজারে ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন জগন্নাথ পাড়া!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-শান্তিরবাজারে সিনিয়র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হলো জগন্নাথপাড়া প্লে সেন্টার টিম। রবিবার বাইখোড়া ইংলিশ…

12 hours ago

বামফ্রন্টের রেখে যাওয়া ১২,৯০৩ কোটি সহ,রাজ্যে বর্তমানে ঋণের পরিমাণ ২১,৮৭৮ কোটি টাকা: অর্থমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত রাজ্য সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৮৭৮ কোটি…

13 hours ago

ক্রাইম ব্রাঞ্চের শক্তিবৃদ্ধিতে গুচ্ছ পদক্ষেপ : মুখ্যমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিগত ছয় মাসে ত্রিপুরা পুলিশ ক্রাইম ব্রাঞ্চকে ২২টি মামলা হস্তান্তর করা হয়েছে।২০২৪ সালের…

13 hours ago