ধর্মসংকট!!
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন,তিনি ধর্মসংকটে পড়েছেন। তার এই ধর্মসংকটের কারণ হচ্ছে লোকসভার ২টি আসন থেকে জয়লাভের পর একটি আসন ছাড়া নিয়ে।তিনি ভেবে পাচ্ছেন না কোন আসন রাখা তার ঠিক হবে আর কোন আসন ছাড়া ঠিক হবে। উত্তরপ্রদেশের রায়বেরেলি কেন্দ্র থেকে এবার রাহুল গান্ধী প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছেন।অন্যদিকে, কেরলের ওয়ানাদ কেন্দ্র থেকেও রাহুল গান্ধী দ্বিতীয়বারের মতো জয়ী হয়েছেন।
এর আগে উত্তরপ্রদেশের আমেথি থেকে তিনবার (২০০৪, ২০০৯, ২০১৪)জয়ী হয়েছেন রাহুল গান্ধী।এবারই প্রথম তিনি রায়বেরেলি থেকে নির্বাচনে দাঁড়ান এবং জয়ী হন।রায়বেরেলি থেকে এর আগে দাঁড়াতেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী।গত ২০১৯-এর নির্বাচনে আমেথি থেকে নির্বাচনে হেরে যান রাহুল গান্ধী।একই সময়ে তিনি কেরলের ওয়ানাদ কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে দাঁড়ান এবং প্রথমবারের মতো ওয়ানাদ থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন।
এবারও রাহুল গান্ধী ওয়ানাদ কেন্দ্র থেকে দাঁড়ান এবং নির্বাচিত হন।একই সময়ে এবার রাহুল গান্ধী আমেথির বদলে দাঁড়ান সোনিয়া গান্ধীর ছেড়ে যাওয়া আসন রায়বেরেলিতেও।২০২৪-এর নির্বাচনে রায়বেরেলি এবং ওয়ানাদ কেন্দ্র থেকে জয়ী হবার পর এবার রাহুল গান্ধীকে একটি আসন ছেড়ে দিতে হবে।এরই মধ্যে রায়বেরেলিতে গিয়ে সেখানকার মানুষজনকে ধন্যবাদ জানান রাহুল গান্ধী তাকে ফের সাংসদ পদে নির্বাচিত করার জন্য। একইভাবে পরদিন কেরলের ওয়ানাদে গিয়েও রাহুল গান্ধী ওই কেন্দ্রের ভোটারদের ধন্যবাদ জানান।সে সময়ই এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাহুল গান্ধী বলে ওঠেন যে, তিনি ধর্মসংকটে পড়েছেন। তিনি রায়বেরেলি রাখবেন না ওয়ানাদ রাখবেন তা নিয়ে তিনি ধর্মসংকটে পড়েছেন।একই সাথে রাহুল গান্ধী বলেন, তবে মানুষ জানে যে,আমি কী করব,শুধু আমি জানি না।রাহুল বলেন, তবে যে সিদ্ধান্তই হবে উভয় কেন্দ্রের মানুষের জন্যই ভালো হবে।
রাজনৈতিক মহলে এরপর থেকেই জোর চর্চা শুরু হয়েছে যে, রাহুল কোন্ কেন্দ্র রাখবেন আর কোন্ কেন্দ্র ছাড়বেন এ নিয়ে।কেউ বলছেন, রাহুল গান্ধী ওয়ানাদ কেন্দ্র ছেড়ে দেবেন,কেউ বলছেন রাহুল রায়বেরেলি ছেড়ে দেবেন।একই সাথে এও প্রশ্ন- রাহুলের ছেড়ে দেওয়া আসনে দাঁড়াবেন কে?রাজনৈতিক মহল এও আলোচনা-বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে কোন আসন রেখে দিলে আর কোন্ আসন ছেড়ে দিলে রাহুল গান্ধীর লাভ হবে। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে প্রায় দেড় দশকেরও বেশি সময় পর কংগ্রেসের আসনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কংগ্রেস মহলের বক্তব্য- এর জন্য পুরো কৃতিত্ব রাহুল গান্ধীর।মোদি জমানায় প্রায় খাদের কিনারায় চলে যাওয়া কংগ্রেসকে পুনরুজ্জীবিত করতে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটেছেন রাহুল।প্রায় একা গোটা দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে হেঁটে মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়েছেন।এর ফলও পেয়েছে কংগ্রেস সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে। একনিমেষে বিরোধী দলের তকমা জুটেছে কংগ্রেসের। এমনকী বিরোধী দলনেতা হবার দৌড়ে এগিয়েও রয়েছেন রাহুল গান্ধী নিজে।
এ হেন রাহুল গান্ধী নিজেই বলছেন যে তিনি ধর্মসংকটে পড়েছেন।তবে উত্তরপ্রদেশের ২০২৭-এর বিধানসভা নির্বাচন যদি রাহুল গান্ধীর পাখির চোখ হয়ে থাকে তাহলে রায়বেরেলি তাকে রেখে দিতেই হবে।রায়বেরেলি কেন্দ্র গান্ধী-নেহরু পরিবারের দীর্ঘদিনের গড়।এবারের নির্বাচনে আমেথি থেকে রাহুল গান্ধী প্রার্থী না হয়ে রায়বেরেলি থেকে যে প্রার্থী হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা ছিল কংগ্রেসের একটা মাস্টার স্ট্রোক।আমেথি কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হয়েছিল গান্ধী পরিবারের দীর্ঘদিনের অনুগত এবং বিশ্বস্ত সৈনিক কিশোরীলাল শর্মাকে। আসলে বিজেপির স্মৃতি ইরানিকে বেগ দিতে কংগ্রেস এই চালটা দিয়েছিল।কংগ্রেস এতে যে একশ শতাংশ সফল তা নির্বাচনের ফলাফলেই স্পষ্ট।
লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে ইন্ডিয়া জোটের ২ শরিক কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টি অভাবনীয় ফল করেছে।রাজনৈতিক মহলকে চমকে দিয়েছে অখিলেশ-রাহুল জুটি।তাই একে ২০২৭ সালের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত অক্ষত রাখতে গেলে রায়বেরেলি আসন রাহুলকে ধরে রেখেই দিতে হবে।এখন থেকেই এই দুই নেতাকে উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে বধের ছক কৌশল করতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সুতরাং সেক্ষেত্রে রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেস ওয়ানাদ কেন্দ্রে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে প্রার্থী করে তাকে জিতিয়ে আনারও পরিকল্পনা নিতে পারে। সেজন্যই কি রাহুল ওয়ানাদে বলেছেন, যে সিদ্ধান্ত হবে তাতে ২ কেন্দ্রের মানুষই খুশি হবেন। তাহলে কি ওয়ানাদে এবার প্রিয়াঙ্কাকে দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে এনে আরেকটা চাল দেবে কংগ্রেস।কিছুদিনের মধ্যেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।