ত্রিপুরার সাহিত্য চর্চায় নয়া ইতিহাস রচনা করেছে উড়ান: জয় গোস্বামী।।
ধলাইয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এইডস, বাড়ছে উদ্বেগ!!!

দৈনিক সংবাদ অনলাইন, আমবাসা, ১৬ জুলাই।। ধলাই জেলা জুড়ে এখন নয়া আতঙ্কের নাম এইডস্ বা এইচআইভি। প্রতিটি গ্রামে এই মারন ব্যাধিটির বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে উপজাতি মহল্লা গুলিতে এই রোগের প্রকোপ প্রতিদিন বাড়ছে। আমবাসা মহকুমার বিভিন্ন প্রত্যন্তের পাড়া গুলিতে,এই রোগের ভয়াবহতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেই স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি সূত্রে জানা গেছে। তার উপর ইটভাটা গুলোতে বা বাগান এলাকায় এই রোগের মাত্রা রয়েছে যথেচ্ছ হারে।

গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, আমবাসার দের মাইল,আড়াই মাইল,হরিণ ছড়া,নয়মাইল,গঙ্গানগরের বিভিন্ন এলাকা সহ জেলার রইস্যা বাড়ী ব্লক এলাকায় প্রতিদিন সংখ্যাটা বৃদ্ধি হচ্ছে। অপরদিকে, লংতরাই এর বিভিন্ন পাড়াগুলোতে রয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। তাছাড়া মহকুমার নিকটবর্তী পাড়া গুলিতেও রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন গুটি গুটি করে বাড়ছে। ধলাই জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর এবং আমবাসা মহকুমা এলাকার একটি সমাজসেবী সংস্থা যৌথভাবে এই রোগের বিরুদ্ধে মাঠে নামলেও সংখ্যাটা কোনোভাবেই কমাতে পারছেনা। স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি সূত্র মতে, বর্তমানে এই রোগটি যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে আগামী দুই বছরের মধ্যে তা কল্পনাতীত সংখ্যায় গিয়ে দাঁড়াবে।

ধলাই জেলায় এই মারণ রোগটি আউট ব্রেক হতে বাধ্য। স্বাস্থ্য দপ্তরও এমনটাই মনে করছে। তার মূল কারণ হিসেবে উঠে আসছে একই সিরিঞ্জের ব্যবহার। নেশায় আসক্ত যুবকদের মধ্যে একটি সিরিন্জ দিয়ে নেশার ওষুধ নিজেদের দেহে নেওয়া। বিশেষ করে নেশায় আসক্ত যুব সমাজের একটি ব্যাপক অংশই এই গ্রুপটিতে নাম লেখাচ্ছে। স্বাস্থ্য দপ্তর কর্তাদের বক্তব্য,প্রতিদিন প্রতিটি স্কুলে,গ্রামে গ্রামে সচেতনতামূলক কর্মসূচি ব্যাপক আকারে করা প্রয়োজন। নেশায় আসক্ত হয়ে পড়া যুবকদের যেকোন উপায়ে এই রাস্তা থেকে ফিরিয়ে আনতে না পারলে সমাজটাই বিষাক্ত হয়ে পড়বে। আর তখন কেউ কাউকে দোষ দিয়ে পার পাবে না।

অন্যদিকে,এই রোগ নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলি বিষয়টাকে অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্যে রেখে কাজ করছে।প্রশ্ন হচ্ছে গোপনীয়তা কোনো? সমাজের সামনে বিষয়টা প্রকাশের সময় হয়েছে। প্রকাশ হয়ে গেলে বা প্রকাশটা অনেক ক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে বলেই বুদ্ধিজীবি মহল মনে করছে। লজ্জা এবং ভয়টা সমানভাবে কাজ করলে,হয়তো যুব সমাজের একটি ব্যাপক অংশ সমাজে লোক লজ্জার ভয়ে হলেও এই রাস্তা থেকে ফিরে আসতে পারে। লুকিয়ে নেশা করবে, শারীরিক মিলন করবে, আর রোগটা ধরা পড়লে তাকে গোপনে রাখা হবে। তাই এই প্রবনতা এখনই নানা উপায়ে থামানো দরকার। নতুবা এমন একটা সময় আসতে চলেছে, যখন মানুষ ঘর থেকে বেরোতেও ভয় পাবে।

এই পরিস্থিতি থেকে বেরোতে এখনই উদ্যোগ করা দরকার। ওষুধের দোকান গুলিতে চিকিৎসকের ব্যবস্হাপত্র ছাড়া সিরিন্জ বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা। চিকিৎসকের পরামর্শ বা ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ঔষুধ বিক্রিতে লাগাম টানা। এনজিও বা ক্লাবগুলিকে আরো বলিষ্ঠভাবে নেশার বিরুদ্ধে প্রচারে অংশ নেওয়া। সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণের জন্য প্রত্যেকটি এন জি ও, ক্লাব গুলিকে মাঠে নামানো।

এই রোগটি শুধু যে একটি জেলার নানা প্রান্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা কিন্তু নয়। ধীরে ধীরে সমগ্র রাজ্যেই সংখ্যাটা তুষের আগুনের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ছে। আমবাসা মহকুমা এলাকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এইচ আই ভি নিয়ে বিগত দশ বা তার অধিক বছর ধরে কাজ করে চলেছে। শুরুতে যে সংখ্যাটা ছিলো,আজ সেটা কয়েক হাজারের তালিকায় গিয়ে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরাও আজ অনেকটাই চিন্তিত এই রোগের বিস্তার নিয়ে। যে কোন সন্দেহভাজন যুবক বা যুবতিকে ধরে পরীক্ষা করতেই পাওয়া যাচ্ছে এই মারণ রোগের জীবাণু। আমবাসা গন্ডাছড়া রোড ধরে গঙ্গানগর পর্যন্ত কয়েক শতাধিক যুবকের দেহে পাওয়া গেছে এইচআইভি রোগের জীবাণু। বিশেষ সূত্রে পাওয়া একটি তথ্যে জানা গেছে, উঠতি বয়সের যুবক-যুবতীদের একটি অংশের মধ্যে রোগটি বাসা বাঁধছে। তার জন্য দুটি কারণ উল্লেখ করেছে সূত্রটি। নেশা করতে গিয়ে একটি সিরিঞ্জের ব্যবহার সহ বেহিসেবি শারীরিক সম্পর্ককেও দায়ী করছে সূত্রটি। ফলে এই নিয়ে ব্যপক কর্মসূচি জরুরি বলে মনে করছে সচেতন মহল।